আদি পাপ সম্পর্কে ইসলাম ও খ্রীস্টান ধর্ম কী বলে?

প্রশ্নকর্তা: একবার একজন খ্রীস্টান বন্ধুর সাথে আমার কথা হচ্ছিল কোরআন ও বাইবেল নিয়ে। সে বলল খ্রীস্টানরা আদি পাপে বিশ্বাস করে। আর বাইবেলেও নাকি লেখা আছে কেউ যদি খারাপ কাজ করে তার সাত বংশ এর পাপের বোঝা বহন করে। আর ডায়াবেটিস জাতীয় বংশগত রোগগুলো নাকি আদি পাপের সত্যতার প্রমাণ। এর উত্তরে উক্ত বন্ধুকে কি বলা যায়?

মুসলিম ও খ্রীস্টানরা কি আদি পাপে বিশ্বাস করে?

আদি পাপ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

ডা. জাকির নায়েকের উত্তর: আপনি বাইবেলের পাপের বোঝা বহন সম্পর্কিত যে কথাটি বললেন, সেটি কোথাও লেখা আছে বলে আমার জানা নেই।

তবে বাইবেলের বুক অব ইজাকেল ১৬ নং অধ্যায়ের ২০ নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট লেখা আছে, যে পাপ করবে সে মারা যাবে। বাবা তার ছেলের পাপের বোঝা বহন করবে না। খারাপ লোকের খারাপ কাজ তার কাছেই থাকবে। ভালো লোকের ভালো কাজও তার সঙ্গেই থাকবে। তবে খারাপ লোক তার পথটা বদলে ভালো পথে আসলে সে মারা যাবে না।

সুতরাং বাইবেল বলছে, যে পাপ করছে সে মারা যাবে অর্থাৎ পাপের জন্য পাপী ব্যক্তিই দায়ী থাকবে। কোরআনেও একই কথা আছে।

কোরআন বলছে, "কোনো বহনকারীই অন্যের বোঝা বহন করবে না।" আবার কোরআন যেমন বলছে, তওবা করে ফিরে আসার কথা, বাইবেলও তেমনি বলছে কেউ খারাপ পথ থেকে ভালো পথে ফিরে এলে পুরস্কৃত হবে।

বাইবেলের কোথাও আদি পাপের কথা বলা হয়নি। এটা বাইবেলের মতবাদ নয়। এ কথাটি এনেছে চার্চ। অধিকাংশ খ্রীস্টানদের বিশ্বাস আদম ও হাওয়া (আ)-এর নিষিদ্ধ ফল খেতে বারণ করা হয়েছিল।

হাওয়া আদম (আ)-কে প্রলুব্ধ করলেন সেই ফল খাওয়ার জন্য। সেই পাপের বোঝাই আমরা বহন করে চলছি। কিন্তু এ ধরনের বিশ্বাসের যৌক্তিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ আছে। আদম (আ:) কি আমাদের কাউকে জিজ্ঞাসা করে ফল খেয়েছিলেন যে, আমরা তার জন্য দায়ী থাকব?

যদি আমার বাবা কাউকে খুন করেন পুলিশ কি এসে আমাকে ধরবে? যেহেতু খ্রীস্টানরা আদি পাপে বিশ্বাস করে, তাদের উচিত তাদের দেশে এমন আইন পাস করা যে, বাবার অপরাধের জন্য ছেলেকেও শাস্তি পেতে হবে।

কিন্তু তারা তা কখনোই করবে না। কোনো দেশেই এ ধরনের আইন হতে পারে না। কারণ তা অযৌক্তিক। সুতরাং কারও আদি পাপের জন্য তার বংশধররা দায়ী থাকবে এ ধারণা অযৌক্তিক।

একজন ডাক্তার হিসেবে আমার জানা আছে, ডায়াবেটিস একটি বংশগত রোগ। তবে ডায়াবেটিস জাতীয় বংশগত রোগগুলো আদি পাপের শাস্তি হিসেবে এসেছে এ কথা বাইবেলের কোথাও লেখা নেই।

যদি এ যুক্তি সত্য ধরে নেয়া যায় যে, জেনেটিক্যালি এ রোগ পাপের বোঝা হিসেবে পরিবাহিত হচ্ছে, তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে অনেক স্মাগলার, রেপিস্টদের সন্তানরা বুদ্ধিমান ও ভালো হয়। এটা কী কারণে হয়? এক্ষেত্রে তো উল্টো তাদের আরও খারাপ হওয়ার কথা।

প্রকৃতপক্ষে ডায়াবেটিস কোন পাপের বোঝা নয়; বরং এটি একটি পরীক্ষা। আল্লাহ এই পরীক্ষা দিয়েছেন মানুষের ধৈর্য যাচাই করার জন্য। তিনি দেখতে চান যে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি কি ধৈর্য ধারণ করে নাকি বলে যে, আল্লাহ কেন এ রোগ দিলেন, ডায়াবেটিস কেন হলো ইত্যাদি?

পবিত্র কোরআনে সূরা মূলকের ২ নং আয়াতে বলেছেন,

الذي خلق الموت والعحيوة ليبلوكم أيكم أحسن عملاً .

“তিনি জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন এ জন্য যেন তিনি দেখে নিতে পারেন তোমাদের মধ্যে কে উত্তম আমলকারী।"

অর্থাৎ জীবন ও মৃত্যু দেয়া হয়েছে পরীক্ষা করার জন্য। এছাড়াও কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় বলা হয়েছে, আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন ভয়ভীতি রোগব্যাধি ধনসম্পদের ক্ষতি দিয়ে।

একজন স্মাগলারের ছেলেকে তার জন্য শাস্তি দেয়ার সুযোগ নেই। যদি প্রমাণ করা যায় যে, চুরি করা, ধর্ষণ এগুলো জেনেটিক্যালি পরিবাহিত হচ্ছে তখন ছেলের অপরাধের জন্য বাবাকে দায়ী করা যেতে পারে।

সুতরাং ডায়াবেটিস কোনো আদি পাপের বোঝা নয় বরং এটি পরীক্ষা।

3 Comments

Previous Post Next Post