নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উপরে কেউ যেতে পারবে না কেন?

প্রশ্নকর্তা: আমি একজন হিন্দু। আমার মতে আমরা যে যে ধর্মের অনুসারী হই না কেন, আমরা সবাই ঈশ্বরের উপাসনা করছি। আমাদের উপাসনার নিয়ম হয়ত আলাদা, কিন্তু আমার মনে হয় উপাসনার নিয়মটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো মন থেকে উপাসনা করা।

আমাদের হিন্দুধর্মের দর্শন বলছে যেকোনো মানুষই মর্যাদার দিক দিয়ে উচ্চতর স্তরে যেতে পারবে, কিন্তু আপনার মতে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উপরে কেউ যেতে পারবে না। আমি এ বিষয়ে আপনার সাথে একমত নই। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উপরে কেউ যেতে পারবে না কেন?

নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উপরে কেউ যেতে পারবে না কেন?

ডা. জাকির নায়েকের উত্তর: আপনি বললেন যে, উপাসনার পদ্ধতি যাই হোক না কেন, মন থেকে উপাসনা করতে হবে। কিন্তু ভাই, মন থেকে করলেও ঠিক কাজ করতে হবে। কেউ যদি মন থেকে চুরি করে সেটা কি ঠিক হবে?

অর্থাৎ আপনি মন থেকে পূজা করছেন ঠিক আছে, কিন্তু কার পূজা করছেন, কেন করছেন এবং কীভাবে করছেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি মন দিয়ে চোরের পূজা করে বা রাবনের পূজা করে কিংবা বলে আমি রাক্ষসের পূজারী, তাহলে আপনি কি মেনে নেবেন?

মানার কথা নয়, আর যদি মেনেও নেন তাকে আপনি নিচু স্তরে রাখবেন, উপরের স্তরে নয়। আমরা চাই, সব মানুষই যেন উপরের স্তরে থাকে, তাই নয় কি? আর যদি একটা ভালো কাজ দুটো পদ্ধতিতে করা যায় এবং দুটোই ঠিক হয় তাহলে উভয়টিই মেনে নিতে কোনো সমস্যা নেই।

এখন উপরের স্তরে পৌছানোর ব্যাপারটিতে আসা যাক। ইসলাম অনুসারে আল্লাহর পরে মর্যাদার দিক দিয়ে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর স্থান। কোনো মানুষ তাঁর ওপরে যেতে পারবে না।

কারণ আমরা জানি, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল এবং কোরআন হাদীস থেকে জানা যায় যে, মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উপরের স্তরের হলেন নবী রাসূলগণ। এছাড়া মুহাম্মদ (সা.)-এর পরে কোনো নবী অথবা রাসূল আসার সম্ভাবনা নেই।

কোরআনে সূরা আহযাবের ৪০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

ما كان محمد أبا أحد من رجالكم ولكن رسول الله وخاتم

-

অর্থ: "মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন। তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী।"

যদি কেউ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পর নবুয়তের দাবি করে, তার উচিত পাগলের ডাক্তার দেখানো। সুতরাং কোরআন ও হাদীসে বিশ্বাসী মানুষ মাত্রই এ বিশ্বাস রাখবে যে, কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় নবী রাসূলদের মত মর্যাদাসম্পন্ন হওয়া, তবে তাদের মত মর্যাদা লাভের জন্য যেকেউ চেষ্টা করতে পারবে।

অর্থাৎ তাদের ১০০% মেনে চলার চেষ্টা করা যেতে পারে। এমনকি হয়তো চেষ্টা করতে করতে কেউ কাছাকাছি পৌঁছেও যেতে পারে। কিন্তু তাদের স্তরে পৌঁছানো সম্ভব নয়।

হিন্দুধর্ম অনুসারে মানুষ শুধু নবী নয়; বরং অবতারও হতে পারে তথা ঈশ্বরের স্তরে পৌঁছাতে পারে। তবে এ স্তরে পৌঁছানোর জন্য ঈশ্বরের ভক্তি করতে হবে তথা ধ্যান করতে হবে দুনিয়াদারী বাদ দিয়ে।

অন্যদিকে, ইসলাম অনুসারে দুনিয়াদারী ও ধর্মের পরীক্ষা একটা অংশ। দুনিয়াদারী বাদ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হওয়া সম্ভব নয়; বরং সবকিছু ভারসাম্য বজায় রেখে করাই ইসলাম। ইসলাম অনুযায়ী মানুষ ঈশ্বরের স্তরে পৌঁছতে পারবে না, কারণ তিনি মানুষ নন।

আর নবী-রাসূলগণ হলেন ঈশ্বর কর্তৃক নির্ধারিত মানুষ যারা মানবজাতির হেদায়াতের জন্য প্রেরিত হন। এ কারণে মানুষের পক্ষে তাদের স্তরেও পৌঁছানো সম্ভব নয়। সুতরাং এ বিষয়ে হিন্দুধর্মের সাথে ইসলাম ধর্মের পার্থক্য আছে।

কিন্তু আসুন আমাদের যে পার্থক্যগুলো আছে সেগুলো ভুলে যাই আর যেগুলো আমাদের উভয় ধর্মে কমন সেগুলো পালন করার চেষ্টা করি। আপনি মনে করেন, বেদ আল্লাহর বাণী। আমি মনে করি, কোরআন আল্লাহর বাণী।

এ প্রসঙ্গে আমাদের বিশ্বাস আলাদা। তাই এটা নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো। আগে যেগুলো এক সেগুলো পালন করি। অর্থাৎ যেহেতু বেদ বলছে ঈশ্বর একজন, কোরআন বলছে ঈশ্বর একজন, সুতরাং ঈশ্বর একজন।

বেদ বলছে মুহাম্মদ আল্লাহর নবী হিসেবে আসবেন কোরআনও বলছে নবী, সুতরাং মুহাম্মদ আল্লাহর নবী। কুরআন বলছে মেয়েদের পর্দা করতে হবে, বেদও বলছে করতে হবে, সুতরাং মেয়েদের পর্দা করতে হবে।

এভাবে যে হুকুমগুলো আপনাদের ও আমাদের মধ্যে এক আসুন সেগুলো আগে পালন করি, বাকিগুলো নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post