আজকের নিবন্ধের বিষয় হলো, কিভাবে ফেসবুক থেকে টাকা আয় করা যায় তা নিয়ে।
ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার ১০টি সহজ উপায়।
আমরা সবাই জানি, ফেসবুক হচ্ছে বিশ্বের সব চেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আর এই ফেসবুকে আমরা প্রতিদিন অনেক সময় অপচয় করি।
কেমন হয় বিনোদনের পাশাপাশি যদি ফেসবুক থেকে টাকা আয় করা যায়! তাহলে ফেসবুক ইনকাম নিয়ে আজকের এই পোষ্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, আর কাজ করে ফেসবুক থেকে টাকা আয় করুন।
এটি বিভিন্ন অনলাইন ইনকাম সাইট এর তুলনায় অনেক সহজ ও নিরাপদ। আগেই বলে রাখি সরাসরি কোনো ভাবে ফেসবুক একাউন্ট খুলে আয় করা যায় না। তবে আপনি চাইলে বিভিন্ন উপায়ে ফেসবুক গ্রুপ ও ফেসবুক পেইজ থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
আজকে আমি আপনাদের মাঝে ফেসবুক থেকে টাকা আয়ের ১০ টি সেরা উপায় নিয়ে আলোচনা করবো। তো চলুন শুরু করে দেই:-
০১. ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেইজ এবং গ্রুপ বিক্রি করে আয়।
আপনার যদি একের অধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কিংবা বড় কোনো ফেসবুক পেইজ বা বড় কোনো ফেসবুক গ্রুপ থেকে থাকে তাহলে তা বিক্রি করে টাকা আয় করতে পারেন। অনেক ব্লগার বা ইউটিউবাররা নিজেদের ব্লগ এবং চ্যানেলের প্রচারের জন্য অনেক রকমের ফেসবুক পেইজ কিনতে চায়।
ফেসবুক পেইজ সহ যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বেচা-কেনার সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হলো Viral Accounts।
সাইটটিতে আপনি আপনার নিজের পুরাতন অ্যাকাউন্ট বিক্রি করেও ফেসবুক থেকে আয় করতে পারেন। কারন পুরোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্টের গুরত্ব বেশি।
আর আপনি চাইলে নতুন ফেসবুক পেইজ খোলে তাতে লাইক ও ফলোয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে বিক্রি করতে পারেন।
আবার নতুন গ্রুপ খোলেও গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে, বিক্রি করে ফেসবুক থেকে টাকা আয় করতে পারেন। এসব বিক্রি করার জন্য ওয়েবসাইট ছাড়াও ফেসবুকে বিভিন্ন কেনা-বেচার গ্রুপ আছে।
গ্রুপগুলোতে যোগ দিয়ে আপনি আপনার নিজের পরাতন আইডি কিংবা পেইজ, গ্রুপ বিক্রি করার জন্য বিজ্ঞাপন বা পোষ্ট দিতে হবে।
যারা কিনতে আগ্রহী হবে, তারা কমেন্টে জানাবে অথবা সরাসরি আপনার ফেসবুক ইনবক্সে ম্যাসেজ করে জানাবে।
০২. ফেসবুক ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল থেকে আয়।
যারা বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করতে ভালো জানেন তারা ফেসবুক ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল (Instant Article) থেকে টাকা আয় করতে পারেন।
তবে এর জন্য অবশ্যই আপনার একটি বড় ফেসবুক পেইজের পাশাপাশি একটি ব্লগ সাইট বা ওয়েবসাইট থাকতে হবে। ফেসবুকের ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল এর মাধ্যমে দ্রুত খবর পড়া যায়।
আপনি যখন আপনার ওয়েবসাইটে করা পোষ্টটি ফেসবুক পেইজে ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল হিসেবে পোষ্ট করবেন তখন তা পড়ার জন্য ফেসবুক ব্যবহারকারীদের MB খরচ করে নতুন কোনো ট্যাব বা ব্রাউজারে যেতে হবেনা।
ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল হিসেবে পেইজে শেয়ার করা পোষ্টে বজ্রের মতো আইকন দেওয়া থাকে।
সেই পোষ্ট বা লিংকে ক্লিক করা মাত্রই বজ্র গতিতে ফেসবুকেই ওয়েবসাইটের পোষ্টটি ওপেন হয়।
ফেসবুক ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেলের সুবিধা শুধুমাত্র স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরাই পায়। আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটে সর্বনিম্ন ২০ টি পোষ্ট থাকলে সেই পোষ্টগুলো আপনার ফেসবুক পেইজে শেয়ার করবেন।
শেয়ার করার পর আপনি ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল এর টুলস হতে আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটে ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল অনুমোদন করার জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে।
ফেসবুক ৫/৭ দিনের মধ্যে আপনার আবেদন পর্যালোচনা বা Review করে দেখবে।
ফেসবুক আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটটিকে ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেলের জন্য যোগ্য মনে করলে আপনার পেইজের জন্য অনুমোদন দেবে।
শুধুমাত্র ফেসবুক ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল অনুমোদন হলেই আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটের পোষ্টের ভেতরে ফেসবুকের বিজ্ঞাপন ব্যবহার করতে পারবেন।
বিজ্ঞাপন ব্যবহার করতে গুগল অ্যাডসেন্স বা অন্যান্য এড নেটওয়ার্ক’এর মতো আপনার ব্লগের বিভিন্ন জায়গাতে বিজ্ঞাপনের জন্য কোড বসাতে হবেনা।
ফেসবুক নিজেই আপনার পোষ্টের বিভিন্ন জায়গাতে অটোমেটিক বিজ্ঞাপন দেখাবে। ফেসবুক এসব বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ ওয়েবসাইটের মালিককে দিয়ে থাকে।
তবে এক্ষেত্রে আপনার সাইটে যদি গুগল অ্যাডসেন্স বা অন্য কোনো এড নেটওয়ার্ক এর বিজ্ঞাপন থাকে তাহলে তা শো করবেনা।
সাধারণত নিউজ বিষয়ক ব্লগ বা ওয়েবসাইটগুলো ফেসবুক ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল হতে বেশি টাকা আয় করতে পারে।
০৩. ফেসবুক গ্রুপ থেকে টাকা আয়।
ফেসবুক গ্রুপ বিক্রি করে আয় করার উপায় নিয়ে পূর্বেই আলোচনা করেছি। এখন আলোচনা করবো, কীভাবে নিজস্ব পণ্য ফেসবুকের গ্রুপের মাধ্যমে বিক্রি করে টাকা আয় করা যায়।
ফেসবুকে বিভিন্ন ব্যবসায়িক গ্রুপ রয়েছে। যেগুলোতে বিভিন্ন পণ্য কেনা-বেচা করা হয়। আপনি চাইলে সেকল গ্রুপে যোগ দিয়ে পণ্য বিক্রি করতে পারেন।
আর যদি অন্যদের গ্রুপে কাজ করতে না চান তাহলে আপনি নিজেই একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে নিতে পারেন বিভিন্ন পণ্য বিক্রির জন্য।
এক্ষেত্রে আপনার ফ্রেন্ডস-ফলোয়ার সংখ্যা যতো বেশি হবে প্রচারের ক্ষেত্রে ততোই বেশি সুবিধা পাবেন।
গ্রুপে আপনি বিভিন্ন রকমের পণ্য বিক্রি করতে পারেন। যেমন: ড্রেস, জুয়েলারি সামগ্রি, ফার্নিচার, খেলনা ইত্যাদি।
আপনি চাইলে আপনার পুরনো জিনিসপত্র বিক্রি করেও আয় করতে পারবেন। প্রতিটি পণ্যের ছবি, দাম ও পণ্যের বিবরণ লিখে গ্রুপে পোষ্ট করবেন।
আপনার ক্লায়েন্ট বা খদ্দেররা তাদের নিজস্ব পছন্দ এবং বাজেটের মধ্য থেকে পণ্য বাছাই করে বিকাশ/রকেট/নগদ অথবা অন্য কোনো সহজ পদ্ধতিতে মূল্য পরিশোধ করে দিবে।
আপনাকেও যথাযথ সময়ে কুরিয়ার বা অন্য কোনো মাধ্যমে গ্রাহকের নিকট পণ্য পৌঁছে দিতে হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন গ্রাহক না পেলেও আপনি যখন বিশ্বস্ত হতে শুরু করবেন তখন ধীরে ধীরে আপনার গ্রাহক সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
০৪. ফেসবুক অ্যাপের মাধ্যমে আয়।
আপনি যদি অ্যাপ ডেভেলপার হয়ে থাকেন তাহলে ফেসবুকে আপনার জন্য রয়েছে অপার এক সম্ভাবনা। কারন নিজস্ব অ্যাপ তৈরির মাধ্যমেও ফেসবুক থেকে টাকা আয় করা যায়।
ফেসবুক প্ল্যাটফর্মের জন্য অ্যাপ তৈরি করে আপলোড করলে সেটির ব্যবহারকারীর সংখ্যার উপর আপনার আয় নির্ভর করবে।
বিভিন্ন গেমিং কোম্পানির (যেমন: Zynga, Popcap ইত্যাদি) সাহায্যে ফেসবুকের প্ল্যাটফর্ম থেকে আপনার ডেভলপ করা গেমগুলো আপলোড করে আয় করতে পারেন।
০৫. ফেসবুক শপ থেকে আয়।
অনলাইনে জিনিসপত্র বিক্রির জন্য ফেসবুক শপ একটা অসাধারণ মাধ্যম। আপনার যদি ই-কমার্স স্টোর অথবা ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে থাকে তাহলে আপনি এটা ব্যবহার করতে পারেন।
চাইলে ফ্রিতে অথবা পেইড ভার্সন ব্যবহার করতে পারেন। তবে ফ্রি ভার্সনটা লিমিটেড।
০৬. ফেসবুকে বিভিন্ন অনলাইন প্রতিযোগিতা থেকে আয়।
বিভিন্ন কোম্পানি নিজেদের প্রচারের জন্য অনেক সময় ফেসবুক ভিত্তিক বিভিন্ন অনলাইন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
এসব প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য হলো তাদের কম্পানি, পণ্য, গ্রুপ অথবা পেইজের পরিচিতি বাড়ানো।
আর এসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জিতে নিতে পারেন বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ, পুরষ্কার, ইন্টার্নশিপ-চাকরির সুযোগ।
এসব প্রতিযোগিতার সাধারণত বেশি বেশি লাইক-কমেন্ট, শেয়ার, বন্ধুদেরকে ট্যাগ ও ইনভাইট করা ইত্যাদি কাজগুলো করতে হয়।
০৭. ফেসবুক ভিডিও থেকে আয়।
ইউটিউব থেকে আয় করার মতোই ফেসবুক পেইজেও ভিডিও আপলোড করে মনিটাইজেশন বা এডস্ ব্রেকের মাধ্যমে টাকা আয় করা যায়।
তবে এর জন্য আবেদন করতে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু শর্তপূরন করতে হবে। আবেদনের পর ফেসবুক আপনার পেইজটি পর্যালোচনা করে দেখবে মনিটাইজেশনের জন্য উপযুক্ত কিনা।
যদি মনিটাইজেশন পেয়ে যান তাহলে আপনার পেইজের ভিডিওগুলোতে বিজ্ঞাপন দেখানো হবে। আর এসব বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ আপনাকে দেওয়া হবে।
বর্তমানে টিকটক ও ইউটিউব Shorts ভিডিওর মতো ফেসবুকেও Reel ভিডিও আপলোড করার সুবিধা রয়েছে।
এবং এসব রিল ভিডিও আপলোড করার মাধ্যমেও ফেসবুক থেকে খুব সহজেই উপার্জন করা সম্ভব।
তবে একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি আর তা হলো, ইউটিউব কমিউনিটি গাইডলাইনের মতো ফেসবুক পেইজেও কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে।
০৮. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এমন একটি উপায় বা মাধ্যম যার দ্বারা আপনি ইন্টারনেটে থাকা অনেক রকমের অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট থেকে তাদের যেকোনো পণ্য বা সেবা গ্রাহকের নিকট প্রচার করবেন এবং যদি কোনো গ্রাহক তা গ্রহণ করে তাহলে তা থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পাবেন।
তবে পণ্য ভেদে কমিশনের পরিমাণও বিভিন্ন অংকের হয়ে থাকে। বড় বড় অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট যেমন: Amazon, Flipkart, Snapdeal তাদের যেকোনো পণ্য অ্যাফিলিয়েট লিংকের দ্বারা লোকেদের সাথে শেয়ার বা প্রোমোট করার সুযোগ দেয়।
আপনার প্রচারের মাধ্যমটি হতে পারে ওয়েবসাইট, ইউটিউবের চ্যানেল, ফেসবুক পেইজ কিংবা ফেসবুক গ্রুপ।
আপনার যদি বড় কোনো ফেসবুক পেইজ থেকে থাকে কিংবা আপনি যদি বড় কোনো ফেসবুক গ্রুপের সদস্য হয়ে থাকেন তাহলে আপনিও বিভিন্ন রকমের প্রোডাক্টের অ্যাফিলিয়েট লিংক শেয়ার করে আয় করতে পারেন।
০৯. ফ্রিল্যান্সিং করে আয়।
আপনার যদি কাজ জানেন তাহলে ফেসবুকের মাধ্যেমেও ফ্রিল্যান্সিং করা সম্ভব। ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে গেলে নতুনদের সবচেয়ে বড় যে বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় তা হলো, তেমন কাজ না পাওয়া।
দেখা যায়, বেশিরভাগ নতুন ফ্রিল্যান্সাররা তারা তাদের পছন্দ ও যোগ্যতা অনুযায়ী কোনো কাজ খুঁজে পায় না।
ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কিছু সক্রিয় ফেসবুক গ্রুপ আছে। এসব গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন কাজের সুযোগ শেয়ার করে।
কন্টেন্ট রাইটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, অনলাইন মার্কেটিং এর মতো আরো অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য ফেসবুকে রয়েছে অনেক গ্রুপ ও পেইজ। সেখান থেকেই পৌঁছে যেতে পারেন আপনার কাংখিত গন্তব্যে।
১০. ফেসবুক পেইজ লাইক ও গ্রুপ মেম্বার শেয়ার করে আয়।
আপনার কাছে যদি জনপ্রিয় কোনো ফেসবুক পেইজ থাকে। এবং তাতে যদি প্রচুর পরিমানে লাইক ও ফলোয়ার থাকে।
তখন বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটার আপনাকে তাদের পেইজে লাইক বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য, বিভিন্ন ওয়েবসাইটের পোষ্ট শেয়ার করে সেটা মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য কিংবা ফেসবুক গ্রুপে সদস্য বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করবে।
তখন তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকার বিনিময়ে ফেসবুক পেইজ কিংবা ওয়েবসাইটের পোষ্ট আপনার ফেসবুক পেইজে শেয়ার করার মাধ্যমে অথবা তাদের ফেসবুক গ্রুপে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ক্লায়েন্টের কাছ থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
আপনার যদি বড় কোনো ফেসবুক পেইজ থেকে থাকে তাহলে এসব কাজ কোনো ব্যাপার নয়। খুব সহজেই আপনার পেইজের মাধ্যমে তাদের গ্রুপ কিংবা পেইজ প্রমোট করে সদস্য ও লাইক বাড়িয়ে দিতে পারেন।