নিম গাছের পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন।

নিম পাতার উপকারিতা কী কী?

প্রায় চার হাজার বছর ধরেই বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে নিম। নিম গাছের পাতা থেকে শুরু করে ছাল, শিকর, ফুল ও ফল সব কিছুই পুষ্টিগুণে ভরপুর।

আপনি যদি নিয়মিত সকালে খালি পেটে নিম পাতা খাওয়া শুরু করেন তাহলে প্রচুর উপকারিতা পাবেন। ওজন কমানো থেকে শুরু করে ডায়েবিটিস নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।

এছাড়াও পেটে ব্যথা, আলসার, হৃদপিণ্ড ও ধমনীর রোগ, চোখের সমস্যা, মাড়ি ফুলে যাওয়া, লিভারের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। নিম গাছের পাতায় উপস্থিত আছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

নিম পাতার উপকারিতা

নিম পাতায় প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায়। তাই ভারত, বাংলাদেশ সহ আফ্রিকার মানুষজন এটা বিশ্বাস করে যে, নিম ৪০টি সাধারণ রোগ নিরাময় করতে পারে।

টেকরো বিন ব্লগের আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা জানবো, নিম পাতার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা, নিম পাতা কীভাবে খেতে হয়, কখন ও কতটুকু পরিমাণে নিমপাতা খাওয়া প্রয়োজন।

 নিম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Azadirachta Indica। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৪-৫টি নিমপাতা খেলে প্রচুর উপকারিতা পাওয়া যায়।

নিম পাতার উপকারিতা

নিম গাছের পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা কী কী?

▸ ডায়েবিটিস নিয়ন্ত্রণ করে।

রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে নিমপাতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আপনি টাইপ-2 ডায়েবিটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে প্রতিদিন সকালে নিমপাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। কারণ এতে বিভিন্ন রকমের গ্লাইকোসাইড পাওয়া যায়। যা ডায়েবিটিস নিয়ন্ত্রণ করতে দারুণ ভাবে সাহায্য করে।

▸ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে নিমপাতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এতে অ্যান্টিহিস্টামিন উপাদান থাকে। যা রক্তনালিকে সচল রাখে। নিমপাতার বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এবং রক্ত বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে।

নিমপাতা রক্তের চলাচল বৃদ্ধির সাথে সাথে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে এক কাপ পানির সাথে এক চা চামচ মধু এবং নিমপাতার রস খেতে পারেন তাহলে খুব সহজেই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

▸ হৃদযন্ত্র ভালো রাখে।

হৃদযন্ত্রের সমস্যা যেমন, করোনারি আর্টারি ডিজিজ এবং অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের চিকিৎসায় নিমের ব্যবহার করা যেতে পারে। করোনারি আর্টারি ডিজিজ হলো সবচেয়ে স্বাভাবিক সবচেয়ে সাধারণ হৃদরোগ এতে হৃদযন্ত্রের রক্ত সঞ্চালন কমে যায়।

এরফলে বুকে ব্যথা হয় এবং শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করে। একাধিক গবেষণায় দেখা যায় যে, নিম পাতার নির্জাস হৃদযন্ত্রের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখে।

তাই আপনার হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন সকালে নিম পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন অথবা নিম পাতার রস খেতে পারেন।

▸ ওজন কমাতে সাহায্য করে।

দেহের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য অনেক পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। তবে ওজন কমানোর ঘরোয়া প্রতিকারের মধ্যে নিমপাতা খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

নিমের ফুল শরীরের চর্বি কমাতে এবং দেহের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে নিমপাতা এবং নিমপাতার ফুল বেটে ও এক চা চামচ মধু, এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে সেবন করতে পারেন। এটি খুব দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।

▸ হাঁপানি কমাতে সাহায্য করে।

বহু বছর ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় হাঁপানির ঔষধ হিসেবে নিমের তেল ব্যবহার করা হয়। নিমের বিচ থেকে যে তেল উৎপন্ন হয় তা প্রতিদিন নিয়ম করে সেবন করলে হাঁপানির মতোন কষ্টদায়ক রোগ থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।

এছাড়াও জ্বর, সর্দি, কাশি কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে কয়েক ফুটা নিম তেল নিয়ম করে সেবন করতে পারেন তাহলে খুব সহজেই হাঁপানি প্রতিরোধ করা যায় এবং হাঁপানি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

▸ লিভার ভালো রাখে।

মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো লিভার। নিমগাছের ফুল লিভারের স্বাস্থ্যরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লিভারের জন্ডিসের মতো সমস্যা দূর করতে নিম বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

নিমপাতার নির্জাস লিভারের টক্সিন দূর করে এবং লিভারে এনজাইমের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। তাই আপনার লিভারকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন সকালে নিমপাতা চিবিয়ে খেতে পারেন এরফলে অবশ্যই সুফল পাবেন।

▸ দাঁত ও মাড়ি ভালো রাখে।

দাঁত ও মাড়ির যেকোনো সমস্যা সমাধানে বহু বছর ধরেই নিম ব্যবহার করা হচ্ছে। নিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান। এ কারণেই আজকাল বিভিন্ন টুথপেষ্টে নিমের তেল ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। যা দাঁত ও মাড়ির টিস্যুগুলোর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং মুখে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

▸ চোখের সমস্যা দূর করে।

নিমপাতার অনেক উপকারিতার মধ্যে একটি অনন্য উপকারিতা হলো এটি চোখের যত্নে বেশ উপকারি। আপনি যদি চোখে কোনো অসস্তি, জ্বালা, ক্লান্তি বা লালচে ভাব অনুভব করেন তবে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন।

এরজন্য কিছু পরিমাণ নিমপাতা পানির সাথে সিদ্ধ করুন। এরপর সে সিদ্ধ পানি পুরোপুরি ঠান্ডা হতে দিন। তারপর আপনার চোখ ধোয়ার জন্য এ পানি ব্যবহার করুন। এটি আপনার চোখের যেকোনো ধরনের জ্বালা, ক্লান্তি, বা লালচে ভাব দূর করতে সাহায্য করবে।

▸ আলসার প্রতিরোধ করে।

বর্তমান সময়ে পাকস্থলীতে আলসার একটি সাধারণ রোগে পরিণত হয়েছে। পাকস্থলীতে এসিড তৈরির কারণে পেটের ব্যথা এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে। নিমপাতা পেপটিক আলসার প্রতিরোধ করতে দারুণ ভাবে সাহায্য করে।

কারণ নিমপাতার নির্জাস পাকস্থলীর অতিরিক্ত এসিড নিঃসরণকে আংশিভাবে প্রতিরোধ করে। এবং নিমপাতার তেল হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরিকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এই হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি হলো এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া যা পেপটিক আলসারের জন্য দায়ী। তাই আপনার পেটের সমস্যা দূর করার জন্য অবশ্যই নিমপাতা খাওয়া প্রয়োজন।

▸ কৃমি নাশক।

পেটে কৃমি হলে শিশু রোগা হয়ে যায়, চেহারা ফেকাসে হয়ে যায়। বাচ্চাদের পেটের কৃমি নির্মুল করতে নিমপাতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। নিমপাতার ছাল চূর্ণ দিনে ৩ বার সামান্য গরম পানি সহ খেলে ভিষণ উপকার পাওয়া যায়।

এছাড়াও নিমপাতার আরও অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। যেমন: চুল ভালো রাখে, রক্ত পরিষ্কার করে, মেলেরিয়া দূর করে এবং নিম তেল বাতের ব্যথা দূর করতে ভিষণ ভাবে সাহায্য করে।

নিমপাতার প্রচুর উপকারিতা আছে তবে কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণে নিমপাতা খাবেন না। সঠিক পরিমাণে প্রতিদিন নিমপাতা খেলে প্রচুর উপকারিতা পাবেন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন