মোবাইল দিয়ে ইউটিউব ভিডিও তৈরির ১৫ টি সহজ ভিডিও টপিক আইডিয়া।
আপনি কি ইউটিউব থেকে টাকা আয় করতে চাচ্ছেন? কিন্তু আপনার কম্পিউটার নেই? আপনি হয়তো জানেন কীভাবে মোবাইল দিয়ে ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হয়।
কিন্তু কোন টপিকের উপর ভিত্তি করে মোবাইল দিয়ে ভিডিওগুলো বানাবেন তা হয়তো ভেবে উঠতে পারছেন না।
আজকে আমি মোবাইল দিয়ে ইউটিউব ভিডিও তৈরি করার জন্য ১৫ টি সহজ নিশ/টপিকের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব।
তো চলুন শুরুকরি-
০১. স্ট্রেট ফুড রিভিউ (Street Food Review)
আমাদের রাস্তা-ঘাটে বিভিন্ন খাবারের দোকান পাওয়া যায়। যেখানে বিভিন্ন রকম সুস্বাদু খাবার বিক্রি করা হয়।
আপনি চাইলে আপনার মোবাইল দিয়েই সেগুলো কীভাবে বানায়, কীভাবে পরিবেশন করে এগুলো ভিডিও করে ইউটিউবে ছাড়তে পারেন।
খেতে কেমন লাগে তা জানিয়ে এবং ভিডিওতে কপিরাইট ফ্রি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এড করে নিতে পারেন। স্ট্রেট ফুড রিভিউ অনেক ট্রেন্ডিং একটা টপিক।
০২. মোবাইল অ্যাপ রিভিউ (Mobile App Review)
বর্তমান সময়ে আমরা প্রায় সবাই স্মার্টফোন ব্যবহার করি। আর এসব স্মার্টফোনে বিভিন্ন অ্যাপস ইনস্টল করে রাখি। আপনি চাইলে কোন অ্যাপের কী কাজ, কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা নিয়ে টিউটোরিয়াল ভিডিও বানাতে পারেন।
প্লে স্টোরের লক্ষ-লক্ষ অ্যাপের ভিডিও বানিয়ে আপনি কখনো শেষ করতে পারবেন না। আর এর জন্য আপনার প্রয়োজন পরবে মোবাইল স্ক্রিন রেকর্ডার অ্যাপ।
০৩. টয় রিভিউ (Toy Review)
প্রতিটি পরিবারে ১-২ জন করে বাচ্চা ছেলে-মেয়ে থাকে। আপনি চাইলে গ্রামের মেলায় খেলনার দোকানের খেলনা কিংবা বাজারে কিনতে পাওয়া বিভিন্ন খেলনা কিনে সেগুলো দিয়ে বাচ্চারা কীভাবে খেলে তা ভিডিও করে ইউটিউবে ছাড়তে পারেন।
টয় রিভিউ এর উপর বাংলায় তেমন ভালো কোনো চ্যানেল নেই। তাই এতে আপনার প্রতিযোগি চ্যানেল কম থাকবে।
০৪. লাইফস্টাইল ভিডিও (Lifestyle Video)
বিভিন্ন সিলেব্রিটিদের নিয়ে আপনি তাদের লাইফস্টাইল ভিডিও বানাতে পারেন। যেমন: তাদের বয়স, বাড়ি, গাড়ি, মাসিক আয় ও তাদের অজানা কথা নিয়ে ভিডিও বানাতে পারেন।
এর জন্য আপনাকে উইকেপিডিয়া, ফেসবুক, ইউটিউব সহ বিভিন্ন ইন্টারনেট সোর্স থেকে তথ্য নিয়ে তাদের ইমেইজ ডাউনলোড করে স্লাইড শো ভিডিও বানাতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে তথ্যগুলো যথাসম্ভব যাচাই করে নিতে হবে।
০৫. নিউজ ভিডিও (News Video)
বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পেপার থেকে ট্রেন্ডিং নিউজ নিয়ে উক্ত নিউজ সম্পর্কিত ইমেইজ গুগোল থেকে ডাউনলোড করে স্লাইড শো ভিডিও বানাতে পারেন।
এ ক্ষেত্রে আপনাকে যা করতে হবে তা হলো নিউজটি পড়ে তা রেকর্ড করে ভিডিওতে এড করে দিতে হবে। সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এড করলে আরো ভালো হবে।
০৬. লাইফ হ্যাক ভিডিও (Life Hack Vodeo)
লাইফ হ্যাক ভিডিওগুলো বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তবে সবগুলো ভিডিওর মূল বিষয় হলো আমাদের আশেপাশে পড়ে থাকা বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে কীভাবে মজার ও প্রয়োজনীয় জিনিস বানানো যায়।
অর্থাৎ বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো একটু ব্যাতিক্রম ভাবে কাজে লাগিয়ে আমাদের জীবনকে কীভাবে আরো সহজ করা যায়।
লাইফ হ্যাকস এর ভিডিওগুলো বিশ্ব জুরেই চাহিদা রয়েছে। সেসকল ভিডিওগুলোতে ভিউস মিলিয়ন মিলিয়ন।
আপনি যদি লাইফ হ্যাকস ভিডিও নিয়ে কাজ করতে চান তাহলে ইউটিউবে গিয়ে ‘Life Hack Video’ লিখে সার্চ দিয়ে কিছু ভিডিও দেখে ধারনা নিতে পারেন।
এবং নিজেই কিছু করে তা নিজের ফোন দিয়ে ভিডিও করে ইউটিউবে আপলোড করতে পারেন।
০৭. আর্ট ভিডিও (Art Video)
আমাদের মধ্যে অনেকেই ভালো আর্ট করতে পারে। বিশেষ করে আমি অনেক মেয়েদেরকে দেখেছি তারা কাগজে কলম বা পেন্সিল দিয়ে অনেক সুন্দর ভাবে প্রাকৃতিক ছবি, ফুলের, পশু-পাখির কিংবা মানুষের ছবি আর্ট করতে পারে।
আপনারও যদি থাকে এমন প্রতিভা তাহলে বসে পড়েন আঁকতে, আর তা আপনার হাতে থাকা ফোন দিয়ে ভিডিও করেই আপলোড করতে পারেন আপনার ইউটিউব চ্যানেলে।
০৮. ফিশিং ভিডিও (Fishing Video)
আমরা যারা গ্রামে থাকি তারা প্রায় সবাই মাছ ধরতে অনেক পছন্দ করি। আপনি শুনে হাসতেও পারেন যে, এই মাছ ধরার ভিডিওগুলোরও অনেক চাহিদা রয়েছে।
আর আপনি যদি মাছ নাও ধরতে পারেন আপনার বাড়ির আশেপাশে থাকা নদী, নালা, খাল-বিল, কিংবা পুকুরে অন্যেরা কীভাবে গ্রামীণ পরিবেশে মাছ ধরে তা ভিডিও করেও ইউটিউবে ছাড়তে পারেন।
আর হ্যাঁ, আপলোড দেওয়ার সময় অবশ্যই এসকল ভিডিওর টাইটেল ও ডেস্ক্রিপশন ইংরেজিতে দিবেন, এর ফলে বিদেশী অনেক ভিউয়ার পাবেন।
০৯. ওয়াজ মাহফিল ভিডিও (Waz Mahfil Video)
আমাদের দেশে সাড়া বছর বিশেষ করে শীতের মৌসুমে অনেক ইসলামিক মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
আপনি চাইলে উক্ত মাহফিলের বিভিন্ন বক্তার আলোচনা বা ওয়াজ মোবাইল দিয়ে ভিডিও ধারন করে আপনার চ্যানেলে আপলোড করতে পারেন।
তবে এ সকল ভিডিও নিয়ে কাজ করতে চাইলে আপনার চ্যানেলটি অবশ্যই ইসলামিক চ্যানেল রাখবেন।
১০. ফটো এডিটিং (Photo Editing)
আমরা অনেকেই অন্ড্রয়েডের ফটো এডিটিং অ্যাপ দিয়ে ছবি/ফটো এডিট করতে পারি।
তাছাড়া অনেককেই দেখেছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি আপলোড দেওয়ার আগে ছবি এডিট করে নেয়।
আপনিও যদি অনেক ভালো এডিট করতে পারেন তাহলে শুরু করে ফটো এডিটিং টিউটোরিয়াল ভিডিও।
এর জন্য ছবি এডিট করার সময় আপনাকে আপনার ফোনের ক্রিন রেকর্ড করে ভিডিও বানাতে হবে।
১১. রান্নার ভিডিও (Cooking Video)
এই বিষয়টি অনেক মেয়েদের পছন্দের হবে। কারন, বেশি ভাগ মেয়েরাই অনেক ভালো রান্না করতে পারে।
তাছাড়া আমি কিছু ছেলে মানুষকেও দেখেছি এই টপিকের উপর ভিডিও বানিয়ে অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছে।
আপনিও যদি জানেন ভালো রান্না করতে তাহলে শুরু করে দিন কোকিং ভিডিও বা রান্নার রেসিপি।
এক্ষেত্রে বিভিন্ন খাবার কীভাবে রান্না করতে হয়, রান্নার উপকরন কী কী? কী পরিমাণে উপকরণগুলো দিতে হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো আপনার ভিডিওতে থাকতে হবে।
১১. প্রডাক্ট আনবক্সিং অ্যান্ড রিভিউ (Product Unboxing And Review)
প্রতিদিন নিত্যনতুন পণ্য বাজারে আসছে। আপনি চাইলে যেসব পণ্য নিয়ে মানুষের আগ্রহ কাজ করে সেসব পণ্য নিয়ে ভিডিও বানাতে পারেন।
সেই প্রডাক্ট আনবক্সিং বা ব্যবহারের পর রিভিউ ভিডিও বানাতে পারেন। হতে পারে তা টেকনলোজি গেজেট রিভিউ কিংবা অন্য কিছু।
১৩. গেমিং ভিডিও (Gaming Video)
গেমিং ভিডিও বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় একটি টপিক। গেমিং ভিডিওগুলোর ভিউ মিলিয়ন মিলিয়ন হয়ে থাকে। স্মার্টফোনে গেম খেলতে আমরা কম বেশি সবাই পছন্দ করি।
তবে আপনি যদি ভালো গেমার হয়ে থাকেন। তাহলে আপনার গেম খেলার ভিডিও ক্রিন রেকর্ড করার মাধ্যমে ভিডিও বানিয়ে ভালো পরিমানের আয় করতে পারেন। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় গেম হলো পাবজি।
১৪. মাই অপিনিয়ন (My Opinion)
ইউটিউবের জন্য এই টপিকের উপর ভিডিও বানালে আপনি অবশ্যই সফল হতে পারবেন। কেননা এই ভিডিওগুলো বানানো হয় ভাইরাল (Viral) বা ট্রেন্ডিং (Trending) বিষয়ের উপর। অনলাইনে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু ভাইরাল হচ্ছে।
আপনাকে যা করতে হবে, এই ভাইরাল বিষয়ের উপর আপনার অভিমত তুলে ধরে তা ভিডিও করে ইউটিউবে আপলোড করতে হবে।
তবে বিষয়টা এতোটা সহজ নয়। কারন, আপনি যে ভাইরাল বিষয়ের উপর কথা বলবেন সে সম্পর্কে আপনার অবশ্যই জ্ঞান থাকতে হবে।
১৫. রিয়্যাক্টশন ভিডিও (Reaction Video)
এখন আসা যাক সব চেয়ে সহজ একটি ইউটিউব ভিডিও টপিকের কথায়। যেই টপিকের উপর ভিডিও বানালে পরিশ্রম হবে অনেক কম, আর সফলতা আসবে অনেক তারাতারি।
ইউটিউবে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সিনেমার ট্রেইলার, মিউজিক ভিডিও প্রকাশ পাচ্ছে। আপনি চাইলে বাংলা, হিন্দি কিংবা ইংরেজি মিউজিক ভিডিওর রিয়াকশন ভিডিও বানাতে পারেন অতি সহজেই, তাও আবার আপনার হাতে থাকা মোবাইল ফোন দিয়েই।
পরিশেষে: আপনি যদি মোবাইল দিয়েই ইউটিউব মার্কেটিং করে গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয় করতে চান আশা করি এই ১৫ টি টপিকের মধ্যে যেকোনো একটি নিয়ে কাজ করলে সফল হতে পারবেন।
তবে আপনার প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম করে নিয়মিত কাজ করে যাওয়া এবং ধৈর্য ধারন করা। কারন পৃথিবীতে পরিশ্রম আর ধৈর্য ছাড়া কোনো কিছু অর্জন সম্ভব নয়।