বীর্য সম্পর্কিত আলোচনা।
প্রদীপের জন্য তেল যেমন মূল উপাদান, মানুষের জন্য বীর্যও তদ্রূপ মূল উপাদান। প্রদীপের মধ্যে যতক্ষণ তেল বা জ্বালানি থাকে, ততক্ষণ সে তার আলো দান করে থাকে।
জ্বালানি বা তেল শেষ হয়ে গেলে যেমন প্রদীপের আলোও নিঃশেষ হয়ে যায়। বীর্যও মানুষের জন্য যৌনতত্ত্বের চাবিকাঠি।
বীর্য যতক্ষণ শরীরে থাকবে, যৌবনের উত্তেজনাও ততক্ষণ বিরাজ করবে। বীর্য যখন নিঃশেষ হয়ে যাবে, তার যৌবনের উত্তেজনাও তখন বিলীন হয়ে যাবে।
বীর্যের পরিচয়।
১. মানুষের শরীরের গাঢ় ও ঘনযুক্ত পানি বিশেষ।
২. সাদাবর্ণ।
৩. উত্তেজনার সাথে তীব্রবেগে লাফিয়ে লাফিয়ে বের হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন- মানুষ যা খায়, প্রথমে তা দ্বারা রস তৈরী হয়। তারপর সে রস থেকে রক্ত তৈরী হয়।
রক্ত থেকে গোশত, গোশত থেকে চর্বি। অতঃপর সে চর্বি থেকে হাড্ডি, হাড্ডি থেকে মগজ। সবশেষে ছাব্বিশ দিন পর মহা মূল্যবান এ বীর্য তৈরী হয়।
যেন সাতটি মেশিন অতিক্রম করে এ বীর্যের উৎপাদন। বুঝার বিষয়, এ বীর্য কত মূল্যবান সম্পদ।
কিন্তু আফসোসের বিষয় যে, কতিপয় নির্বোধ লোকেরা এ মূল্যবান সম্পদের ইজ্জত করতে জানে না। এর কদর বুঝে না।
ফলে ভুল পদ্ধতিতে হারাম স্থানে তা বিনষ্ট করে দেয়। অবশেষে তার অবস্থা এমন হয় যে, শত আফসোস করেও তার সে মূল্যবান সম্পদটি ফিরিয়ে আনতে পারে না। ফলে সে জীবনভর আফসোস করতে থাকে।
বীর্যের পরিমাণ।
ইতিপূর্বে এ বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে যে, বীর্য নামক উপাদান, যার রঙ সাদা ও গাড়, দেখতে মূলপদার্থের মতো।
এ বীর্য যখন বের হয়, তখন তীব্রবেগে লাফিয়ে লাফিয়ে বের হয়। যা মহিলাদের ডিম্বাণুতে পৌঁছে গর্ভধারণের উপকরণে রূপান্তরিত হয়। মনে রাখতে হবে যে, মানুষ জন্মের মূল উপাদান হলো বীর্য।
আর এ বীর্য যখন কোনো যুবকের লিঙ্গ থেকে বের হয় তখন তা পরিমাণে তিন থেকে ছয় মাশা (এক মাশা = আট রতি) পর্যন্ত হয়ে থাকে। বীর্যের আসল উপাদান হলো কীট বা বীর্যের পোকা।
যা দ্বারা ভ্রূণ হয়। বীর্যের মাঝে এ ধরণের কীট না থাকলে এর মাধ্যমে সন্তান জন্ম হবে না। এই কীট বা পোকা বীর্যের মধ্যে বেহিসাব থাকে। যদিও ভ্রূণ তৈরীর জন্য একটি কীটই যথেষ্ট।
কীটগুলোর মাথা কিছুটা গোলাকার ও চেপটা হয়ে থাকে। এগুলো আকারে এতো ছোট যে, দূরবীন বা অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা অসম্ভব। বীর্য মানুষের শরীরের রক্ত থেকে তৈরী হয়ে থাকে।
সুতরাং যার শরীরের রক্ত যত বেশী বৃদ্ধি পাবে, তার শরীরে বীর্যও তত বেশি বাড়তে থাকবে। যৌবনকালে বীর্য অধিক থাকার কারণ হলো, যৌবনকালে শরীরের রক্ত থাকে তুলনামূলক বেশি।
মানুষের শরীরে বীর্য তৈরীর কয়েকটি অঙ্গ রয়েছে। যথা- কলিজা, হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্ক ইত্যাদি। বীর্য বৃদ্ধি করতে হলে এসব অঙ্গ সুস্থ থাকতে হবে।
কারণ মানুষ যে খাবারই গ্রহণ করে, তা দ্বারা পরিস্কার রক্ত তৈরী হয়।
বীর্যের কীট।
অনেক পুরুষ এমন রয়েছে, যাদেরকে দেখতে সুঠাম ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া সত্বেও তাদের কোনো সন্তান হয় না। এর মূল কারণ হলো, তাদের বীর্যে সন্তান জন্মের কীট নেই।
তারা সন্তান জন্য দিতে অপারগ। এবং পিতা হওয়াতে মাহরুম। তাদের বীর্যকে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা করলে বীর্যে কীটের অনুপস্থিতির ব্যাপার পরিস্কারভাবে জানা যায়।
তাদের অণ্ডকোষের বীচি পূর্বে থেকেই থাকে না। অথবা থাকলেও তা আকারে একেবারে ছোট ছোট। অথবা তার প্রণালীর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কারো কারো এ রোগ জন্মগতভাবে হয়ে থাকে।
আর এজন্যই বীর্যে কীট থাকে না। জন্ম থেকে বা বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এ রোগ দেখা দিলে তার চিকিৎসা অসম্ভব।
পক্ষান্তরে অন্য কোনো কারণে এ রোগ হলে, তার চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথমে বীর্য উৎপাদনকারী তথা-অন্তর, কলিজা, হৃৎপিণ্ড ইত্যাদির দুর্বলতা দূর করতে হবে। অতঃপর বীর্যে কীট উৎপাদনকারী ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
বীর্যে কীট উৎপাদনকারী ঔষধ।
বীর্য বৃদ্ধি করার সঠিক পদ্ধতি গুলো-
বীর্যে কীট উৎপাদনকারী অনেক ঔষধই রয়েছে, যে চিকিৎসাই গ্রহণ করা হবে, সে ব্যাপারে হাকীমদের স্মরণাপন্ন হতে হবে। নিম্নে দু'টি ঔষধের ফর্মূলা উল্লেখ করা হলো।
এক-
উপাদান - পরিমাণ
দেশীয় ডিম - ২০ টি
মিছরী - ৪ তোলা
কস্তুরী - পরিমাণ মত
জয়ফল - ৪ মাশা
জয়ত্রী - ৪ মাশা
জাফরান - ১ মাশা
২০টি দেশীয় ডিমের হলুদ অংশ, চার তোলা মিছরী, কস্তুরি পরিমাণমত, জায়ফল ও জয়ত্রী চার মাশা, এক মাশা জাফরান। সবগুলো একসাথ করে মিশ্রণ করবে। এরপর দৈনিক সকাল বিকাল দু'বেলা দুধের সাথে মিশিয়ে সেবন করবে।
দুই-
উপাদান - পরিমাণ
ভুনা করা গমের আটার ভূষি - পরিমাণ মতো
গাওয়া ঘি - ২০০ গ্রাম
কেওড়া গাছের রস - পরিমাণমত
কস্তুরী - পরিমাণমত
মিছরী - পরিমাণমত
ছারাব মিছরী - ৭ তোলা
চিনি - ১ তোলা
মৃগনাভী - ১ মাশা
গাজরের রস - ২ তোলা
প্রথমে গমের আটার সাথে গাওয়া ঘি ভূনা করবে। তারপর কেওড়া গাছের রস, কস্তুরীর মধ্যে মিছরীসহ মিশাবে।
অতঃপর ছা’রাব মিছরী, মৃগনাভী এগুলো গমের আটার সাথে মিশিয়ে হালুয়া বানাবে। সবশেষে এগুলো গাজরের রসের সাথে মিশিয়ে সেবন করবে।
বীর্য ঘন করার ঔষধ। (বীর্য ঘন করার উপায়)
উপাদান - পরিমাণ
এলাচী - ৩ তোলা
সাদা মসলা - ৩ তোলা
পদ্মফুলের বীজ সমন্দরে সুক (গাছ বিশেষ) - ৩ তোলা
বকুল গাছের ছাল - ৩ তোলা
সাম্ভাল গাছের আঠা - ৩ তোলা
আঠঙ্গন গাছের বীজ - ৩ তোলা
মটরশুটি - ৩ তোলা
দারুচিনি - ৩ তোলা
ময়দা লাকড়ি (গাছের শিকড় বিশেষ) - ৩ তোলা
শিমুল গাছের আঠা - ৩ তোলা
বাবলা গাছের পাতা - ৩ তোলা
চিনি - পরিমাণমত
যাদের ধাতু তরল ও পাতলা, তারা স্ত্রী সহবাসেও দুর্বল, সহবাসের সময় খুব দ্রুত ধাতু বের হয়ে যায়। এ রোগ অধিকাংশ লোকেরই। এ রোগের পঞ্চাশটি ঔষধের ব্যবস্থা রয়েছে।
তন্মধ্যে একটি ব্যবস্থাপত্র নিয়ে আলোচনা করা হলো। উপরোক্ত উপাদানসমূহ তিন তোলা করে বাবলা গাছের রসের সাথে মিশাবে।
অতঃপর পরিমাণমত চিনি দিয়ে খামিরা বানাবে। দৈনিক এক তোলা পরিমাণ দুধের সাথে মিশিয়ে সেবন করবে। (বীর্য তৈরি করার খাবার)
গুরুত্বপূর্ণ কথা।
এ ধরণের রোগীদের টক জাতীয় খাবার সব সময় ক্ষতি করে থাকে।
যেমন- আমলকি, লেবু, সিরকা, আচার, টক আম, কাঁচা টমেটো, সব ধরনের টক জাতীয় ফল-ফলাদী। এমনকি টক জাতীয় ফুল গাছের নিচেও দাঁড়ানো তার জন্য ক্ষতিকারক।
বীর্য গাঢ় ও বৃদ্ধি করার তদবীর।
১। বাবলার কচি পাতা এক পোয়া, কাশির চিনি এক পোয়া, সাদা ধুনা এক পোয়া, লাল ধুনা এক পোয়া। এসব দ্রব্য পিষে মিশ্রিত করবে। দৈনিক সকাল বেলা এক তোলা পরিমাণ নিয়ে গরম দুধের সাথে পান করবে এবং একটি বাতাসা ছিদ্র করে তার মধ্যে সাত ফোঁটা বকরীর দুধ দিয়ে সেবন করবে।
কিন্তু শাক, অম্ল, ডাল খাবে না। আর স্ত্রীসহবাস হতে পৃথক থাকবে। পরে শরীরে বল পেলে রতিশক্তি বৃদ্ধি হলে সহ্যমত স্ত্রীসহবাস করতে কোনো ক্ষতি নেই। পুরুষের সহ্যগুণ না থাকলে এরূপ দুর্দশা ভোগ করতে হয়।
২। ডুমুরের শিকড়ের ছাদ পাঁচ তোলা, ছোট গোক্ষুর পাঁচ তোলা, তালমাখনা পাঁচ তোলা, কামাক গোটার শ্বাস (মগজ) পাঁচ তোলা, ভূফলি এক ভোলা, তোখমা ফরয়ানি এক তোলা, বিজ্ঞবদ্ধ এক তোলা, চিনাগন্দ এক তোলা।
এসব দ্রব্য কুটে কাপড়ে চেলে ফাঁকি করে রাখবে। প্রাতঃকালে এক তোলা পরিমাণ কাঁচা গরুর দুধের সাথে সেবন করবে। সর্দি বেশি হলে গরম দুধের সাথে সেবন করবে।
উৎস-
বই: নারী ও পুরুষের একান্ত গোপনীয় কথা বা পুশিদাহ রাজ।
লেখক: মুফতী হাকীম আল্লামা আশরাফ আমরহী।