প্রশ্ন: আমরা জানি, ইসলাম অ্যানথ্রোপোমরফিজম-এর দর্শনে বিশ্বাস করে না। তাহলে ইসলাম-ই কেন বলছে, আল্লাহর হাত আছে কিংবা কেয়ামতের দিন আমরা আল্লাহকে দেখতে পাব?
ইসলাম কি অ্যানথ্রোপোমরফিজম-এর দর্শনে বিশ্বাস করে?
ডা. জাকির নায়েকের উত্তর: অ্যানথ্রোপোমরফিজম মানে হল পৃথিবী স্রষ্টার এমন জীবজন্তুর রূপ নিয়ে আসা যেগুলো সম্পর্কে মানুষের জানা আছে। যেহেতু স্রষ্টা জীবের রূপ নিয়ে আসছে, মানুষ ঐ জীবরূপী ঈশ্বরকে সম্মান দেবে। কিন্তু ইসলাম এ ধরনের দর্শনে বিশ্বাস করে না।
অ্যানথ্রোপোমরফিজমের ভিত্তি হলো এ বিশ্বাস যে, “আমাদের সৃষ্টিকর্তা এত মহান, এত পবিত্র, এত ধার্মিক যে, তিনি মানুষের অসুবিধাগুলো বুঝতে পারেন না। তিনি এত পবিত্র ও বিশুদ্ধ যে, তিনি উপলব্ধি করতে পারেন না (নাউযুবিল্লাহ) যে, মানুষের কেমন লাগে যখন ব্যথা পায় বা কোনো সমস্যা বা বিপদে পড়ে। তাই তিনি একজন মানুষ হয়ে জানতে চান যে, কোনটা মানুষের জন্য ভালো আর কোনটা খারাপ।"
অন্য কথায়, স্রষ্টা এত পবিত্র যে, তিনি মানুষের সীমাবদ্ধতাগুলো উপলব্ধি করতে পারেন না। তাই তিনি মানুষ হয়ে জানতে চান, তাদের সীমাবদ্ধতাগুলো এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে চান।
এ যুক্তিটা শুনতে খুব ভালো মনে হতে পারে। কিন্তু একজন মানুষ যদি একটি ভিসিআর তৈরি করে, উক্ত ভিসিআরের সমস্যাগুলো বুঝতে কি তার ভিসিআর হতে হবে? অবশ্যই না; বরং ডিসিআরটির তৈরিকারী হিসেবে তার নিজেরই জানা থাকবে যে, ভিসিআরটি কীভাবে চালালে সমস্যা সৃষ্টি হবে, আর কীভাবে চালালে কোনো প্রকার সমস্যা ছাড়াই চলবে?
সে এ জ্ঞান থেকে একটা ব্যবহারবিধি তৈরি করবে যেন ডিসিআর যে চালাবে সে সঠিকভাবে চালাতে পারে। একইভাবে মানুষ জাতীর স্রষ্টা মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষের জন্য যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যবহারবিধি দিয়েছেন, তা হল পবিত্র কোরআন।
এখন অনেকে মনে করেন কোরআনে যে, আল্লাহর হাতের কথা বলা আছে তা মানুষের হাতের মত। বিশেষ করে যারা এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন তারা এমনটিই মনে করে থাকেন।
পবিত্র কোরআনের সূরা শূরার ১১নং আয়াতে বলা হয়েছে,
ليس كمثله شيء.
অর্থ: “কোনো কিছুই তার সাদৃশ্য নয়।"
অর্থাৎ আল্লাহর সাদৃশ্য কোন কিছুই নেই। তিনি শোনেন ও দেখেন, তবে সে শোনা বা দেখা আমাদের মতো নয়। একইভাবে সূরা ইখলাসের ৪নং আয়াতে বলা হয়েছে,
ولم يكن له كفوا أحد .
অর্থঃ “তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।"
সুতরাং কোরআনের যেখানে আল্লাহ হাতের কথা বলছেন সেখানে তিনি মানুষের হাতের মতো কোনো হাতের কথা বলছেন না। এভাবে কোরআন ও হাদীসের মধ্যে এ ধরনের কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হলেও সে বৈশিষ্ট্যগুলো তার কোনো সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়।
সুতরাং তিনি তাঁর হাত বলতে কী বুঝিয়েছেন, তা কি রকম, সে ব্যাপারে তিনিই ভালো জানেন। ঠিক তেমনি মানুষের মত তাঁর শ্রবণশক্তি শব্দ তরঙ্গের ওপর নির্ভরশীল নয়। সুতরাং তিনি কীভাবে শুনেন তা তিনিই ভালো জানেন।
আর আল্লাহকে দেখার ব্যাপারে বলা যায় যে, পৃথিবীর এ চোখ দিয়ে তাঁকে দেখা যায় না, এটা নিশ্চিত। তবে কেয়ামত দিবসে তাঁকে দেখা যাবে এবং কীভাবে দেখা যাবে সে ব্যাপারে তিনিই ভালো জানেন।
অন্যান্য ধর্মে অ্যানথ্রোপোমরফিজম বলতে মানুষ ঈশ্বরকে বুঝায়। ঈশ্বর যখন মানুষের রূপ নিয়ে জন্মান তখন তার খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। অথচ পবিত্র কোরআনের সূরা আনআমের ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وهو يطعم ولا يطعم .
অর্থ: “তিনি খাদ্য দান করেন, তাকে কেউ খাদ্য দান করে না।"
আবার মানবরূপী ঈশ্বরের ঘুমানোর দরকার হয়। পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ২৫৫নং আয়াতে বলা হয়েছে,
الله لا اله الا هو الحي القيوم لا تأخذه سنة ولا نوم .
অর্থ: “আল্লাহ চিরস্থায়ী, অবিনশ্বর, তাঁর বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না। তিনি কখনও ঘুমান না এবং তন্দ্রা তাঁকে স্পর্শ করে না।
সুতরাং কোরআনে আল্লাহর হাতের যে কথা বলা আছে তা অ্যানথ্রোমরফিজম নয়। তাই এর প্রকৃত অর্থ বা রূপ কী তা আল্লাহ-ই ভালো জানেন। আল্লাহ আমাদের স্রষ্টা এবং কোনো সৃষ্টির সাথে তার সাদৃশ্য নেই।