ইসলাম কেন একজন নারীকে একাধিক স্বামী রাখতে নিষেধ করে?

একজন পুরুষ যদি একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি পায়, তাহলে ইসলাম কেন একজন নারীকে একাধিক স্বামী রাখতে নিষেধ করে?

ডা. জাকির নায়েক এর উত্তর: বহুলোক যার মধ্যে মুসলমানও রয়েছে, প্রশ্ন করেন- মুসলিম পুরুষ একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি পাচ্ছে অথচ নারীর ক্ষেত্রে সে অধিকার অস্বীকার করা হচ্ছে, এর যৌক্তিকতা কী?

অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে যে কথাটি প্রথমেই আমাকে বলে নিতে হবে, তা হলো ভারসাম্যপূর্ণ ন্যায়বিচার ও সমতার ভিত্তির ওপরেই ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত। মানুষ হিসেবে মহান আল্লাহ নারী ও পুরুষকে সমান মর্যাদা দিয়েই সৃষ্টি করেছেন।

ইসলাম কেন একজন নারীকে একাধিক স্বামী রাখতে নিষেধ করে?

কিন্তু সাথে সাথে সামর্থ্য ও যোগ্যতার ভিন্নতা এবং সে অনুযায়ী দায়িত্ব কর্তব্যের বিভিন্নতা দিয়েছেন। শারিরীক ও মানসিক দিক দিয়ে নারী ও পুরুষ সম্পূর্ণ আলাদা। জীবনযাপনের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা এবং দায়িত্ব-কর্তব্যও বিভিন্ন।

ইসলামে নারী ও পুরুষ সমান, কিন্তু একই রকম নয়। আল কোরআনের সূরায়ে নিসার ২২-২৪ আয়াতে একটি তালিকা দেয়া হয়েছে যে, মুসলিম পুরুষ কোন কোন নারীকে বিবাহ করতে পারবে না।

এরপরে ২৪নং আয়াতে পৃথকভাবে বলা হয়েছে সেই সব নারীও (নিষিদ্ধ) যারা অন্যের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ আছে। ইসলামে নারীর জন্য একাধিক স্বামী গ্রহণ নিষিদ্ধ কেন, নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো তা পরিষ্কার করে দেবে।

একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তার ঔরশে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের মাতা-পিতার পরিচয় খুব সহজেই পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে, এজন নারী যদি একাধিক স্বামী গ্রহণ করে তবে এ পরিবারে জন্মিত শিশুর মায়ের পরিচয় পাওয়া যাবে বাবার নয়।

বাবা ও মায়ের সুস্পষ্ট পরিচয়ের ক্ষেত্রে ইসলাম আপোষহীন। আধুনিক মনোবিজ্ঞানিদের মতে, যে শিশু তার মা-বাবার পরিচয় জানে না, বিশেষ করে বাবার, সে শিশু তীব্র মানসিক যন্ত্রণা ও হীনমন্যতায় ভোগে।

এসব শিশুদের শৈশব নিকৃষ্টতর এবং আনন্দহীন কাটে। দেহপসারিণীদের সন্তানরা এর জ্বলন্ত প্রমাণ। স্বামী গ্রহণকারী পরিবারে জন্ম নেয়া শিশুকে কোনো স্কুলে ভর্তি করাতে গেলে যদি মাকে প্রশ্ন করা হয় শিশুর পিতার নাম কী? তা হলে সে মাকে দু'জন অথবা অত্যধিক পুরুষের নাম বলতে হবে।

বিজ্ঞানের উন্নতিতে এখন জেনেটিক পরীক্ষার দ্বারা মা ও বাবা উভয়কে সনাক্ত করার কৌশল আবিষ্কার করেছে। কাজেই যে বিষয়টা অতীতে অসম্ভব ছিল সম্প্রতি তা খুব সহজেই হতে পারে।

প্রকৃতিগত যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট, বহুগামীতায় নারীর চেয়ে পুরুষের বেশি। শারীরিক যোগ্যতায় একজন পুরুষের পক্ষে একাধিক স্ত্রীর স্বামীর দায়িত্ব ও ভূমিকা পালন করা সহজ।

অপরদিকে একজন নারী কয়েকজন স্বামীর সঙ্গে স্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা তার পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। মাসিক ঋতুচক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে মানসিক ও আচরণগত বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্যে তাকে ঘুরপাকে পড়তে হয়।

একজন নারী যার একাধিক স্বামী থাকবে তাকে তো একই সঙ্গে কয়েকজনের যৌন সঙ্গী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে সমূহ সম্ভাবনা থাকে যৌন রোগের এবং যৌনতার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অন্যান্য মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ার।

ফলে তার মাধ্যমেই সেসব রোগে তার স্বামীরা আক্রান্ত হবে। পক্ষান্তরে একজন পুরুষ- যার একাধিক স্ত্রী, স্ত্রীদের মধ্যে কারো যদি পরকিয়ায় যৌন সম্পর্ক না থাকে তাহলে যৌনতা সংক্রান্ত কোনো রোগে আক্রান্ত হবার আদৌ কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

উপরোক্ত কারণগুলো এমন যা যে, কারো পক্ষে জানা এবং বোঝে নেয়া সম্ভব। এছাড়া হয়তো আরো বহু কারণ থাকতে পারে, যে কারণে অনন্ত জ্ঞানের আধার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা'আলা নারীদের জন্য বহু স্বামী গ্রহণ নিষিদ্ধ করেছেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post