ইসলাম ধর্মে কেন একজন পুরুষকে একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি দেয়?

ইসলাম ধর্মে কেন একজন পুরুষকে একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি দেয়? অথবা ইসলামে বহু বিবাহ অনুমোদিত কেন?

ডা. জাকির নায়েকের উত্তর:

ক. বহু বিবাহের সংজ্ঞা:

'বহু-বিবাহ' হলো এমন একটি বিবাহ পদ্ধতি যেখানে একজন ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী থাকে। বহু বিবাহ দুই ধরনের।

একজন পুরুষ একাধিক নারীকে শাদি করে। আর একজন নারী একাধিক স্বামী বরণ করে। তবে ইসলামে পুরুষের জন্য সীমিত সংখ্যক 'বহু-বিবাহ' অনুমোদিত।

ইসলাম ধর্মে কেন একজন পুরুষকে একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি দেয়?

অন্য দিকে নারীর জন্য একাধিক পুরুষ বিবাহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এবার মূল প্রশ্নের আসা যাক। কেন একজন পুরুষ একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি পায়।

খ. পৃথিবীতে আলকুরআনই একমাত্র ধর্ম-গ্রন্থ যা বলে "বিবাহ করো মাত্র একজনকে।"

পৃথিবীতে কুরআনই একমাত্র ধর্ম-গ্রন্থ যা এই ঘোষণা দেয় "বিবাহ করো মাত্র একজনকে।" অন্য ধর্ম-গ্রন্থ নেই, যা পুরুষকে নির্দেশ করে একজন স্ত্রীতে সন্তুষ্ট থাকতে।

আর অন্য সব ধর্মগ্রন্থ হোক তা বেদ, রামায়ন, মহাভারত, গীতা, তালমুদ অথবা বাইবেল। এ সবের মধ্যে স্ত্রীদের সংখ্যার ওপর কোনো বিধিনিষেধ বের করে দেখাতে পারবে কি কেউ?

বরং এসব ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী একজন পুরুষ বিবাহ করতে পারে যতজন তার ইচ্ছা। যেমন রামের পিতা রাজা দশরথ একাধিক স্ত্রী গ্রহন করেছেন। ভগবান শ্রী কৃষ্ণের তো অনেক স্ত্রী ছিল।

এটা অনেক পরের কথা যে, হিন্দু ধর্ম গুরু এবং খ্রীষ্টান চার্চ স্ত্রীর সংখ্যা 'এক' এ বিধান করে দিয়েছে।বাইবেলে যেহেতু স্ত্রীদের সংখ্যা নিরুপনে কোনো বিধিনিষেধই নেই সেহেতু অতীতের খ্রীষ্টান পুরুষরা যে ক'জন খুশি স্ত্রী রাখতে পারত।

মাত্র কয়েক শতাব্দী আগে তাদের চার্চ বা পুরোহিতরা স্ত্রীর সংখ্যা 'এক' এর মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। ইহুদীদের ধর্মে বহু বিবাহ অনুমোদিত।

তাদের তালমুদিয় বিধান অনুযায়ী আব্রাহামের {ইব্রাহীম (আ)} তিনজন স্ত্রী ছিল এবং সলোমনের {সুলাইমান (আ)}-এর ছিল শতাধিক স্ত্রী। বহু-বিবাহের এই প্রথা চলে আসছিল তাদের "রাব্বাঈ" জারসম বিন ইয়াহুদাহ্ পর্যন্ত।

(৯৬০ থেকে ১০৩০ Femdom Boltmet Comm সি.ই) তিনিই এর বিরুদ্ধে একটি ফরমান জারি করেন। ইহুদীদের 'সেফারডিক' সমাজ যারা প্রধানত মুসলিম দেশগুলোতে বসবাস করে তারা এই প্রথাকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত বলবৎ রাখে।

অতঃপর ইসরাঈলের প্রধান বাবাঈ একাধিক স্ত্রী রাখার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে।

একটি লক্ষণীয় বিষয়

১৯৭৫ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী ভারতীয় হিন্দুরা বহু বিবাহের ক্ষেত্রে মুসলিমদের চাইতে অগ্রগামী ছিল।

১৯৭৫ সালে প্রকাশিত কমিটি অফ দি স্ট্যাটাস অফ ওমেন ইন ইসলাম (ইসলামে নারীর মর্যাদা কমিটি) বইয়ের

৬৬ ও ৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে যে, ১৯৫১ থেকে ১৯৬১ পর্যন্ত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, একাধিক স্ত্রী-সংক্রান্ত বিবাহ হিন্দুদের মধ্যে শতকরা পাঁচ দশমিক শূন্য ছয় (৫.০৬%) আর মুসলমানদের মধ্যে চার দশমিক তিন এক (৪.৩১%)।

ভারতীয় ল অনুযায়ী একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনুমোদন কেবলমাত্র মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত। অন্য যেকোনো ভারতীয় অমুসলিমের জন্য একাধিক স্ত্রী রাখা অবৈধ।

এটা অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও মুসলিমদের তুলনায় হিন্দুরাই একাধিক স্ত্রী বেশি রাখছে। এর পূর্বেতো কোনো বিধিনিষেধই ছিল না। এই তো সেদিন ১৯৫৮ সালে হিন্দু বিবাহ-বিধি অনুমোদিত হয়েছে এভাবে যে, একজন হিন্দুর জন্য একাধিক স্ত্রী রাখা অবৈধ।

বর্তমানে তা ভারতীয় রাষ্ট্রীয় আইন। যা "হিন্দু ধর্ম-গ্রন্থের" আইন নয়। আসুন এখন দেখা যাক ইসলাম কেন একজন পুরুষকে একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি দেয়।

গ. কুরআন একাধিক বিবাহের নিয়ন্ত্রিত রূপকে অনুমতি দেয়।

আমি আগে যেমন বলেছি পৃথিবীতে কুরআনই একমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থ ঘোষণা দিয়েছে, 'বিবাহ করো মাত্র একজনকে'। কথাটি কুরআনের সূরা নিসার নিম্নবর্ণিত আয়াতের অংশ।

"বিবাহ করো তোমাদের পছন্দের নারী- দু'জন অথবা তিনজন অথবা চারজন কিন্তু যদি আশঙ্কা করো যে, তোমরা তাদের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করতে না-ও পারতে পারো তাহলে মাত্র একজন।"

কুরআন নাযিল হওয়ার পূর্বে একাধিক বিবাহের কোনো সীমা নির্ধারিত ছিল না এবং ক্ষমতাবান অধিকাংশ লোক এতে অভ্যস্ত ছিল। কেউ কেউ তো শ" পর্যন্ত মাত্রা না ছাড়ালে ক্ষান্ত হতো না।

কুরআন সর্বোচ্চ চার জনের একটা সীমা নির্ধারণ করে দেয়। ইসলাম একজন পুরুষকে দুজন, তিনজন অথবা চারজনের যে অনুমতি দিয়েছে তা এই কঠিন শর্তের সাথে যে, শুধুমাত্র তখনই তা সম্ভব যখন তাদের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সুবিচারমূলক আচরণ করতে পারবে।

একই সূরার ১২৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,

"তুমি কখনোও পেরে উঠবে না স্ত্রীদের মধ্যে সমতা বজায় রাখতে।" (৪ঃ ১২৯)

কাজেই ইসলামে একাধিক বিবাহ কোনো বিধান নয় বরং ব্যতিক্রম। বহু লোক এই ভুল ধারণায় নিমজ্জিত যে, একজন মুসলিম পুরুষের জন্য একাধিক স্ত্রী রাখা অত্যাবশ্যক।

বিবাহ করা না করার ক্ষেত্রে ইসলামে পাঁচটি শ্রেণী-বিন্যাস করা হয়েছে।

১. ফরজ- অবশ্য করণীয় বা বাধ্যতামূলক।

২. মুস্তাহাব- অনুমোদিত উৎসাহিত।

৩. মুবাহ- অনুমোদনযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য।

৪. মাকরূহ- অনুমোদিত নয় বা নিরুৎসাহিত।

৫. হারাম- বে-আইনী বা নিষিদ্ধ।

এর মধ্যে বহু-বিবাহ মধ্যম পন্থায় পড়ে। অর্থাৎ অনুমোদন যোগ্য এবং কোনোভাবে, কথা বলা যাবে না যে, একজন মুসলিম, যার দুজন, তিনজন অথবা চারজন স্ত্রী রয়েছে, সে তার তুলনায় ভালো মুসলিম যার স্ত্রী মাত্র একজন।

গড় আয়ুস্কাল পুরুষের তুলনায় নারীর বেশি

প্রাকৃতিকভাবে নারী ও পুরুষের জন্মহার প্রায় সমান। একজন মেয়ে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছেলে শিশুর চাইতে বেশি। একজন মেয়ে শিশু রোগ-ব্যাধির বিরুদ্ধে পুরুষ শিশুর চাইতে বেশি লড়াই করতে সক্ষম।

এ কারণে শিশু বয়সে নারীর অপেক্ষায় পুরুষের মৃত্যু হার বেশি। দেখা যায়, যেকোনো যুদ্ধের সময় নারীর তুলনায় পুরুষের বেশি মৃত্যু হয়। সাধারণ দুর্ঘটনা ওরোগ-ব্যাধিতে নারীর তুলনায় পুরুষ বেশি মারা যায়।

তাই গড় আয়ুষ্কাল পুরুষের চাইতে নারীর বেশি। অতিতের যে কোনো যুগে ফিরে দেখলে দেখা যাবে বিপত্নীকের চাইতে বিধবার পরিমাণ বেশি।

ভারতে পুরুষের জন্ম হার নারীর তুলনায় বেশি। কারণ নারী শিশুর ভ্রূণ-হত্যা ও নারী শিশু হত্যা প্রতিবেশি কয়েকটি দেশের মধ্যে তুলনামূলকভাবে ভারতীয় পুরুষ- জনসংখ্যা নারী জনসংখ্যা অপেক্ষা বেশি।

এর নেপথ্য কারণ হলো অতিমাত্রায় নারী শিশু হত্যা। প্রতি বছর নূন্যতম দশলাখ 'নারী-ভ্রূণের' গর্ভপাত ঘটানো হয় যখনই মায়ের গর্ভে তাকে নারী হিসাবে সনাক্ত করা যায়। যদি এই অভিশপ্ত কর্ম বন্ধ করা যায় তাহলে ভারতেও পুরুষ অপেক্ষা নারীর সংখ্যা বেশি হয়ে যাবে।

বিশ্বব্যাপী নারী জনসংখ্যা পুরুষের চাইতে বেশি আমেরিকায় পুরুষের চেয়ে ৭০,৮০,০০০ নারী বেশি। শুধু নিউইয়র্ক সিটিতে পুরুষের চেয়ে দশলাখ নারী বেশি।

উপরন্তু নিউইয়র্কের এক তৃতীয়াংশ পুরুষ সমকামী। অর্থাৎ তারা কোনো নারী-সঙ্গ বা বিবাহ করতে আদৌ আগ্রহী নয়। ইংল্যান্ডে পুরুষ জনসংখ্যা অপেক্ষা চল্লিশ লক্ষ নারী বেশি।

একইভাবে জার্মানীতে পঞ্চাশ লাখ অতিরিক্ত নারী। রাশিয়াতে নব্বই লাখ। এরপর একমাত্র আল্লাহই ভাল বলতে পারেন সমগ্র পৃথিবীতে একজন পুরুষের বিপরীতে একজন নারী ধরে নেয়ার পর কত নারী অতিরিক্ত থেকে যাবে।

প্রত্যেক পুরুষের জন্য একজন স্ত্রী এই নিয়ন্ত্রণ বাস্তবতা বিবর্জিত আমেরিকার প্রতিটি পুরুষ যদি একজন করে মহিলাকে বিবাহ করে তারপরেও তিন কোটির বেশি এমন নারী থেকে যাবে, যারা নিজেদের জন্য কোনো স্বামী পাবে না।

উপরন্তু গোটা আমেরিকায় সমকামী পুরুষের সংখ্যা দুই কোটি পঞ্চাশ লাখের বেশি। অনুরূপ চল্লিশ লাখের বেশি নারী ইংল্যান্ডে। পঞ্চাশ লাখের মত জার্মানিতে এবং প্রায় এক কোটি নারী রাশিয়াতে যারা কোনো স্বামী পাবে না।

ধরা যাক, আমার বোন অথবা আপনার বোন আমেরিকা নিবাসী একজন অবিবাহিতা মহিলা সেখানে তার জন্য দুটি পথ খোলা আছে- হয়তো সে এমন একজন পুরুষকে বিবাহ করবে যার একজন স্ত্রী রয়েছে অথবা তাকে হতে হবে "জনগণের সম্পত্তি"- বিকল্প কিছুই হওয়া সম্ভব নয়।

তবে যারা রুচিশীলা তারা প্রথমটাই বেছে নেবে।অধিকাংশ নারী অপর নারীর সঙ্গে তার স্বামীকে ভাগাভাগি করতে রাজি হয় না।

কিন্তু ইসলামে পরিস্থিতি বিবেচনায় তা-ই জরুরী হয়ে ওঠে- "মুসলিম নারী তার সঠিক ঈমানের কারণে এই সামান্য ক্ষতির বিনিময়ে অনেক বড় ক্ষতি হতে রক্ষা করে তার আর এক মুসলিম বোনকে জনসাধারনের সম্পত্তি হওয়ার হাত থেকে হেফাযত করতে পারেন"।

জনসাধারণের সম্পত্তি হওয়ার চেয়ে একজন বিবাহিত পুরুষ বিয়ে করা শ্রেয়। পশ্চিমা সমাজে একজন পুরুষের 'মেয়ে-বন্ধু' খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। অথবা একাধিক বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক।

এক্ষেত্রে নারীরা মর্যাদাহীন ও অনিশ্চিত অরক্ষিত জীবন যাপন করে। অথচ সেই একই সমাজ একজন পুরুষের জন্য একাধিক স্ত্রীগ্রহণ করতে রাজি নয়।

যেখানে নারী হতে পারতো একজন সম্মানিতা, মর্যাদাময় আসনের অধিকারিণী এবং যাপন করতো নিরাপত্তাপূর্ণ নিরাপদ জীবন।

যেখানে নারীর সম্মুখে মাত্র দুটি পথ খোলা। যে স্বাভাবিকভাবে কোনো স্বামী পাবে না। তাকে হয় একজন বিবাহিত পুরুষকেই বিয়ে করতে হবে নতুবা হতে হবে জনগণের সম্পত্তি।

ইসলাম পছন্দ করে নারীকে সম্মানজনক অবস্থান দিতে, তাই ইসলাম প্রথম পথের অনুমোদন দেয় এবং ঘৃণার সাথে প্রত্যাখ্যান করে দ্বিতীয়টিকে।

আরো কিছু কারণ রয়েছে যে সবের জন্য ইসলাম নিয়ন্ত্রিত বহু-বিবাহ অনুমোদন করেছে। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে নারীর সম্মান-মর্যাদা ও সম্ভ্রম সুরক্ষার প্রতি লক্ষ্য রাখে।

Post a Comment

Previous Post Next Post