কীভাবে আমরা আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারি?

কীভাবে আমরা আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারি?

ডা. জাকির নায়েকের উত্তর: এখন যে প্রশ্নটি করা হয়েছে তার উত্তর আরেকটি লেকচার দাবী করে। এ বিষয়ে “কোরআন কি আল্লাহর বাণী” এই লেকচারে বিস্তারিত বলা হয়েছে? এখান থেকে বিস্তারিত উত্তর পাওয়া যেতে পারে।

তবে এখন আমরা সংক্ষেপে বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দেব। প্রথমত আমরা নাস্তিককে ধন্যবাদ জানাতে পারি। অনেকেই এটা শুনে আশ্চর্য হতে পারেন যে, নাস্তিককে আবার কীভাবে ধন্যবাদ জানানো যেতে পারে?

কীভাবে আমরা আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারি?

দেখুন, যে শিরক করে তার নিকট এক আল্লাহর বাণী পৌঁছাতে হলে প্রথমে অন্যান্য বিধাতার অসারতা প্রমাণ করতে হয় এরপর আল্লাহর একত্ববাদের ধারণা তাকে বিশ্বাস করতে হয়।

এখানে কাজ দুটো। অন্যান্য কল্পিত বিধাতার অসারতা প্রমাণ করা এবং এরপর আল্লাহ্র শ্রেষ্ঠত্ব ও একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু যে নাস্তিক সেতো “কালেমাহ" এর প্রথম অংশ, বা “কোন ইলাহ্ বা উপাস্য নেই" এটুকু মেনে নিয়েছে।

এখন বাকীটুকু বা “আল্লাহ্ ছাড়া” এটুকু বিশ্বাস করাতে হবে। অর্থাৎ কালেমা'র প্রথম অংশ বিশ্বাস করে এখন দ্বিতীয়াংশ বিশ্বাস করানোই আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব।

ঠিক আছে নাস্তিককে প্রশ্ন করুন, কোনো দ্রব্য এখনও বাজারে আসেনি বা নতুন আজকেই আসলো। এ দ্রব্য বা পন্য সম্পর্কে কে বেশী জানবে? অবশ্যই দ্রব্য বা পণ্যটির নির্মাতা বা উৎপাদনকারী।

এরপর আস্তে আস্তে সরবরাহকারী, মেরামতকারী এবং আরও পরে ব্যবহারকারী এটা সম্পর্কে জানবে। কিন্তু নির্মাতা বা উৎপাদক বা উদ্ভাবক যত বেশী জানেন অন্য কেউ ততটা বেশী জানেন না। হ্যাঁ আপনি নাস্তিকের নিকট প্রশ্ন করে এ উত্তর তার নিকট থেকেই জানবেন।

এবার আপনি সামনে অগ্রসর হোন। তাকে আবার প্রশ্ন করুন এবং বিশ্বজগৎ কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে? তিনি হয়তো বলবেন "বিগব্যাং থিওরির কথা। বিগব্যাং থিওরির বর্ণনা অনুযায়ী মহাকাশের বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহের মধ্যে বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে এ পৃথিবীর সৃষ্টি।

আপনি এবার তাকে বলুন এ মহা বিস্ফোরণ সম্পর্কে মানুষ কবে জানতে পারে? এইতো বলতে গেলে গতকালই। ১৯৭৩ সালের দিকে এ তত্ত্বটি আবিষ্কার করা হয়।

অথচ এ ধরনের মহা বিস্ফোরণের কথা পবিত্র কোরআনে ১৪০০ বছর আগেই বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা আম্বিয়ার ৩০ নং আয়াতে চোখ বুলান। সেখানে আল্লাহ্ স্পষ্ট করে বলেন,

"যারা অবিশ্বাসী তারা কি দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী উভয়ে একাকার ছিল, তারপর আমরা তাদের দু'টিকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম, আর পানি থেকে আমরা সৃষ্টি করলাম প্রাণবন্ত সবকিছু। তারা কি বিশ্বাস করবে না?"

বিজ্ঞান যা গতকাল আবিস্কার করেছে কোরআন তা চৌদ্দশত বছর আগে প্রমাণ করেছে। বলে দিয়েছে পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য। আসলে এটা কি কোনো মানুষের লেখা হতে পারে?

অবশ্যই না, পৃথিবীর রাতদিনের বাড়া কমার রহস্য বা জমিনের স্ফীত হওয়ার রহস্য এটি মানুষ জানতে পেরেছে সর্বোচ্চ দু'শত বছর পূর্ব থেকে অথচ আল কোরআন ১৪০০ বছর আগেই তা বর্ণনা করেছে। আল-কোরআনের সূরা লুকমান ২৯ নং আয়াতে আল্লাহ্ ঘোষণা দেন,

“তুমি কি দেখ না যে, তিনি রাতকে দিনের মধ্যে আর দিনকে রাতের মধ্যে প্রবিষ্ট করান। আর চাঁদ ও সূর্যকে যিনি করেছেন অনুগত। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বিচরণ করে।"

তাহলে চন্দ্র ও সূর্যের গতিপথ ও গতিপথ যে নির্দিষ্ট তা আল্লাহ্ কোরআনে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে বলে দিয়েছেন। আর আমরা এই সেদিন এটা প্রমাণিত হয়েছে বলে জেনেছি। সূরা জুমার ০৫ নং আয়াতে বর্ণনা করেন,

“তিনি রাতকে দিনের উপর ছাউনি বানান আর দিনকে ছাউনি বানান রাতের উপর। চাঁদ ও সুরুজ কার বশীভূত? প্রত্যেকেই তাদের গতিপথে ধাবিত হচ্ছে।"

তাহলে চন্দ্র ও সূর্যের গতিপথ যে নির্ধারিত যা আমরা এই সেদিন বিজ্ঞানের মাধ্যমে জেনেছি অথচ পবিত্র কোরআন দেড় হাজার বছর আগেই সুস্পষ্ট করে দিয়েছে। এছাড়া সূরা নাজিয়া এর ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা বর্ণনা করেন,

“তিনি পৃথিবীকে প্রসারিত করেছেন।"

পৃথিবী এই যে সৃষ্টি রহস্য, তা আমরা এখনও অনুসন্ধানে ব্যস্ত। অথচ তা হলো সূর্যের আলো চাঁদের উপর প্রতিফলিত হয় মাত্র। এ ব্যাপারটি কোরআনের বর্ণনায় এসেছে- সূরা ফুরক্বান এর ৬১ নং আয়াতে,

“মহান আল্লাহ্ মহাকাশে সৃষ্টি করেছেন তারকারাজি। আর তাতে বানিয়েছেন এক প্রদীপ ও এক চন্দ্র। আর চন্দ্রতো দীপ্তিদায়ক।"

দেখুন, আল্লাহ্ চাঁদের ব্যাপারে বলেছেন এটি “মুনির” অর্থাৎ অন্যের আলোকে আলোকিত। এই যে প্রতিফলিত আলোর কথা বলা হয়েছে এটি দেড় হাজার বছর আগে কে কল্পনা করেছে?

তাহলে কোরআন অবশ্যই মানব রচিত নয়। আসুন আরও এমন অনেক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কথা জেনে নিই যা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে অথচ মানুষ প্রমাণিত করেছে সেদিন।

চন্দ্র-সূর্যের এই যে কোটেশন বা ঘূর্ণন পথ তা আমরা ২ শত বছর আগে জেনেছি। অথচ পবিত্র কোরআনে সূরা আম্বিয়া ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ্ তা পরিস্কার ভাষায় বিধৃত করেছেন। তিনি বলেন,

“আর তিনিই সেই জন, যিনি রাত ও দিনকে এবং চন্দ্র ও সূর্যকে সৃষ্টি করেছেন। সব ক'টি কক্ষপথে ভেসে চলে।"

এভাবে কক্ষপথে ভেসে চলার বিষয়টি কোরআনের পূর্বে কে বলতে পেরেছে? একই সূরায় ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেন,

আর আমি যমীনে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বত, যেন তা পর্বতসমূহ নিয়ে একদিকে হেলে না পড়ে, আর আমি তাতে তৈরী করেছি প্রশস্ত রাস্তা, যেন তারা চলতে পারে। "

পৃথিবীকে স্থিতিশীল রাখতে পাহাড় পর্বতের এ ভূমিকার কথা, প্রয়োজনীয়তার কথা কোরআনের পূর্বে আর কার নিকট প্রতীয়মান হয়েছে?

সূরা ইয়াছিনের ৩৮-৪০ নং আয়াতে ও আল্লাহ্ চন্দ্র সূর্যের গতিপথ নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। এত বিষদভাবে এই বিজ্ঞানসিদ্ধ বার্তাগুলো আর কে কোরআনের পূর্বে বলেছে?

Post a Comment

Previous Post Next Post