ছালাতের সংক্ষিপ্ত নিয়ম। (ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব।)
(১) তাকবীরে তাহরীমা:
ওযূ করার পর ছালাতের সংকল্প করে কিবলামুখী দাঁড়িয়ে 'আল্লা-হু আকবর' বলে দু'হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে তাকবীরে তাহরীমা শেষে বুকে বাঁধবে।
এ সময় বাম হাতের উপরে ডান হাত কনুই বরাবর রাখবে অথবা বাম কব্জির উপরে ডান কব্জি রেখে বুকের উপরে হাত বাঁধবে।
(২) সূরায়ে ফাতিহা পাঠ:
অতঃপর দো'আয়ে ইস্তেফতাহ বা 'ছানা' পড়ে আ'উযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ সহ সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে এবং জেহরী ছালাত হলে সুরায়ে ফাতিহা শেষে সশব্দে 'আমীন' বলবে।
(৩) কিরাআত:
ইমাম কিংবা একাকী মুছল্লী হ'লে সূরায়ে ফাতিহা পাঠ শেষে প্রথম দু'রাক'আতে কুরআনের অন্য কোনো সূরা বা কিছু আয়াত তেলাওয়াত করবে।
কিন্তু মুক্তাদী হ'লে জেহরী ছালাতে চুপে চুপে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পড়বে ও ইমামের কিরাআত মনোযোগ দিয়ে শুনবে।
তবে যোহর ও আছরের ছালাতে ইমাম ও মুক্তাদী সকলে সূরায়ে ফাতিহা সহ অন্য সূরা পড়বে এবং শেষের দু'রাক'আতে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে।
(8) রুকূ:
কিরাআত শেষে 'আল্লা-হু আকবর' বলে দু'হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে ‘রাফ'উল ইয়াদায়েন' করে রুকূতে যাবে।
এ সময় হাঁটুর উপরে দু'হাতে ভর দিয়ে পা, হাত, পিঠ ও মাথা সোজা রাখবে এবং রুকুর দো'আ পড়বে।
(৫) ক্বওমা:
অতঃপর রুকু থেকে উঠে সোজা ও সুস্থিরভাবে দাঁড়াবে। এ সময় দু'হাত কিবলামুখী খাড়া রেখে কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে এবং ইমাম ও মুক্তাদী সকলে বলবে 'সামি 'আল্লা-হু লিমান হামিদাহ'। অতঃপর 'কুওমা'র দো'আ পড়বে ।
(৬) সিজদা:
ক্বওমার দো'আ পাঠ শেষে 'আল্লা-হু আকবর' বলে প্রথমে দু'হাত ও পরে দু'হাঁটু মাটিতে রেখে সিজদায় যাবে ও বেশী বেশী দো'আ পড়বে।
এ সময় হাত দু'খানা কিবলামুখী করে মাথার দু'পাশে কাঁধ বা কান বরাবর মাটিতে স্বাভাবিকভাবে রাখবে। কনুই ও বগল ফাঁকা থাকবে।
হাঁটু বা মাটিতে ঠেস দিবে না। সিজদা লম্বা হবে ও পিঠ সোজা থাকবে। যেন নীচ দিয়ে বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মত ফাঁকা থাকে।
সিজদা থেকে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবে। এ সময় স্থিরভাবে বসে দো'আ পড়বে। অতঃপর 'আল্লা-হু আকবর' বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবে ও দো'আ পড়বে।
রুকু ও সিজদায় কুরআনী দো'আ গুলো পড়বে না। ২য় ও ৪র্থ রাক'আতে দাঁড়াবার প্রাক্কালে সিজদা থেকে উঠে সামান্য সময়ের জন্য স্থির হয়ে বসবে।
একে 'জালসায়ে ইস্তিরাহাত' বলে। অতঃপর মাটিতে দু'হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যাবে।
(৭) বৈঠক:
২য় রাক'আত শেষে বৈঠকে বসবে। যদি ১ম বৈঠক হয়, তবে কেবল 'আত্তাহিইয়া-তু' পড়ে ৩য় রাক'আতের জন্য উঠে যাবে।
আর যদি শেষ বৈঠক হয়, তবে 'আত্তাহিইয়া-তু' পড়ার পরে দরূদ, দো'আয়ে মাছুরাহ ও সম্ভব হ'লে বেশী বেশী করে অন্য দো'আ পড়বে।
১ম বৈঠকে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে এবং শেষ বৈঠকে ডান পায়ের তলা দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ বের করে নিতম্বের উপরে বসবে ও ডান পা খাড়া রাখবে।
এসময় ডান পায়ের আঙ্গুলগুলি জ্বিবলামুখী করবে।বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুল গুলো বাম হাঁটুর প্রান্ত বরাবর কিবলামুখী ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে।
এবং ডান হাত ৫৩-এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ রেখে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত শাহাদাত আঙ্গুল নাড়িয়ে ইশারা করতে থাকবে। মুছল্লীর নযর ইশারা বরাবর থাকবে। তার বাইরে যাবে না।
(৮) সালাম:
দো'আয়ে মাছুরাহ শেষে প্রথমে ডানে ও পরে বামে 'আস্সালামু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ' বলে সালাম ফিরাবে। প্রথম সালামের শেষে 'ওয়া বারাকাতুহু' যোগ করা যেতে পারে।
এভাবে ছালাত সমাপ্ত করে প্রথমে সরবে একবার 'আল্লা-হু আকবর' ও তিনবার 'আস্তাগফিরুল্লাহ' বলে বিভিন্ন দো'আ পাঠ করবে।
ইমাম হ'লে ডাইনে অথবা বামে কিংবা সরাসরি মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে বসবে এবং দো'আ ও তাসবীহ সমূহ পাঠ করবে।
ফিরে বসার সময় রাসূল (ছাঃ) কখনো পড়েছেন, 'রব্বে কিনী আযা-বাকা ইয়াওমা তাব আছু ইবা-দাকা'
'হে প্রভু! আমাকে তোমার আযাব থেকে বাঁচাও! যেদিন তোমার বান্দাদের তুমি পুণরুত্থান ঘটাবে' (মুসলিম)।
উৎস:
বই: সালাতুর রাসূল (সা:)।
লেখক: ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব।