মুসলমানরা কি কাবাগৃহের পূজা করে?

অভিযোগ: ইসলাম যেখানে আকার বা মূর্তি পূজাকে প্রত্যাখ্যান করেছে সেখানে তারা নিজেরাই কেন তাদের প্রার্থনায় কাবার প্রতি নত হয়ে তার উপাসনা করে?

মুসলমানরা কি কাবাগৃহের পূজা করে?

মুসলমানরা কি কাবাগৃহের পূজা করে?

ডা. জাকির নায়েকের জবাব: কা'বা মুসলমানদের 'কেবলা'। যা তারা প্রার্থনার দিক নির্দেশক হিসেবে গণ্য করে।

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, মুসলমানরা তাদের প্রার্থনায় কা'বার দিকে মুখ ফিরায় বটে তবে তারা কাবা ঘরের উপাসনা করে না। বরং উপাসনা করে সেই ঘরের মালিক অদৃশ্য আল্লাহ তা'আলার।

আল্লাহ তা'য়ালা তার প্রিয় হাবীবকে লক্ষ্য করে বলেন,

"তোমার বার বার আকাশের পানে মুখ করে তাকানো আমরা দেখেছি। এখন আমি কি তোমাকে ঘুরিয়ে দেব সেই কেবলার দিকে যা তোমাকে সন্তুষ্ট করবে? তাহলে ঘুরিয়ে নাও তোমার মুখ সেই মাসজিদুল হারামের দিকে। (এখন থেকে) যেখানেই তোমরা থাকো না কেন (নামাযে) তার দিকেই মুখ ফিরিয়ে নেবে।"

ক. ইসলাম দৃঢ় ঐক্যকে উৎসাহিত করে

যেমন, মুসলিমরা যদি সালাত আদায় করতে চায় তাহলে এমনটা হতে পারে যে, কারো ইচ্ছা হবে উত্তর দিকে ফিরে নামায পড়তে, কারো ইচ্ছা হবে দক্ষিণ দিকে ফিরতে।

তাই ইবাদতের ক্ষেত্রেও মুসলমানদের চূড়ান্তভাবে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে যেখানেই তারা থাকুক না কেন এক আল্লাহর প্রতি একমুখী হয়ে তাদের সালাত আদায় করতে বলা হয়েছে।

তাই 'কাবা' সে একটি দিকের দিক-নির্দেশক, অন্য কিছুই নয়। কাবার পশ্চিমাঞ্চলে যে মুসলমানরা বাস করে তারা মুখ করবে পূর্ব দিকে, আর পূর্বাঞ্চলে যারা বাস করে তারা মুখ করবে পশ্চিম দিকে।

একইভাবে উত্তরাঞ্চলের লোকেরা দক্ষিণ দিকে, আর দক্ষিণাঞ্চলের লোকেরা উত্তর দিকে।

খ. পৃথিবী গোলকের কেন্দ্রবিন্দু কা'বা

মুসলমানরাই সর্ব প্রথম পৃথিবীর মানচিত্র এঁকেছিল। তাদের মানচিত্রে দক্ষিণ ছিল ওপর দিকে আর উত্তর ছিল নিচের দিকে। তখন কা'বা ছিল কেন্দ্রবিন্দুতে।

পরবর্তিযুগে পশ্চিমা মানচিত্রকররা পৃথিবীর যে মানচিত্র আঁকলো তাতে ওপর দিকটা নিচে আর নিচের দিকটা ওপরে করা হলো।

অর্থাৎ উত্তর হলো ওপরের দিকে আর দক্ষিণ হলো নিচের দিকে। আলহামদুলিল্লাহ এ ক্ষেত্রেও "কাবাই মানচিত্রের কেন্দ্রবিন্দু থেকে গেল"।

গ. কা'বাকে তাওয়াফ করা আল্লাহর একত্বের নির্দেশক।

মুসলিম কা'বা যেয়ারতে মক্কায় গেলে কাবাঘর তাওয়াফ' করে। অর্থাৎ কা'বা ঘরকে কেন্দ্র করে চারিদিকে প্রদক্ষিণ করে।

কাজটি এক আল্লাহকে বিশ্বাস ও ইবাদতের নিদর্শন। প্রতিটি বৃত্ত গোলাকার, এর একটিই কেন্দ্র বিন্দু থাকে। কাজেই উপাসনার যোগ্য একমাত্র আল্লাহ্ এটা তারই অন্যতম নিদর্শন।

ঘ. হযরত ওমর (রা) এর হাদীস:

হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে হযরত ওমর (রা) এর একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে। হাদীস শাস্ত্র অনুযায়ী যাকে 'আছার' বলা যায়।

বুখারী শরীফের হজ্জ সম্পর্কিত ৩৫৬ অধ্যায়ে ৬৭৫ নং হাদীস, ওমর (রা) বলছেন, “আমি জানি তুমি একটি পাথরখণ্ড মাত্র এবং না কোনো উপকার করতে সক্ষম, না কোনো ক্ষতি। আমি যদি না দেখতাম স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (স) তোমাকে স্পর্শ করেছেন তাহলে কশ্মিনকালেও আমি তোমাকে স্পর্শ করতাম না।"

ঙ. লোকেরা কা'বা ঘরের ওপরে উঠে আযান দিয়েছিল।

রাসূলুল্লাহ (স) এর সময়ে লোকেরা কা'বা ঘরের ছাদে উঠে আযান দিত। মুসলিম কা'বা ঘরের উপাসনা করে বলে যারা মনে করেন তাদেরকে যদি কেউ প্রশ্ন করে যে, কোনো মূর্তি-পূজারী কি যে মূর্তির সে পূজা করে, তার মাথার ওপরে উঠে দাঁড়ায়?

Post a Comment

Previous Post Next Post