ওহাবী কারা? | ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ)

প্রশ্ন: ওহাবি আর সুন্নি এই জিনিসটা আমার কাছে ক্লিয়ার না। আমার ছেলে হাফেয, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, সে ওহাবি মাদরাসায় পড়ে। এখন আমরা দেখি যে, ওদের মাদরাসায় নামাযের পরে মুনাজাত হয় না। 

আমি ওকে বলি, আব্বু, তুমি মুনাজাত করো না কেন? মুনাজাত না করলে মনে হয় যেন নামাযটা পরিপূর্ণ হয় না। ও বলে, আম্মু, আমাদের মাদরাসায় ওগুলো করে না। এই মুনাজাতের ব্যাপারটা আমি জানতে চাই।

ওহাবী কাকে বলে? ওহাবি কারা?

ওহাবী কাকে বলে? ওহাবি কারা?

উত্তরে ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ): আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন এটা বোঝার জন্য দীর্ঘ আলোচনা দরকার। ওহাবি শব্দটা এসেছে সৌদি আরবের একজন সংস্কারক মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের নাম থেকে।

যিনি অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি জন্মগ্রহণ করেন এবং আমার যতদূর মনে পড়ে ১৭৯০/৯৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক বিদআতের বিরুদ্ধে ছিলেন।

তার কর্মের ভুলত্রুটি আছে কিন্তু তিনি বিদআতের বিরুদ্ধে ছিলেন। পরবর্তীতে সারা দুনিয়ার যেকোনো মানুষ বিদআতের বিরোধিতা করলেই তাকে ওহাবি বলা হয়।

ওহাবিয়াতের কোনো ডেসক্রিপশন নেই। মুনাজাত না করলে তাকে ওহাবি বলা হয়। আবার অনেক জায়গায় ধুমপান না করলে তাকে ওহাবি বলা হয়। কোনো কোনো জায়গায় কেউ সুন্দর কিরাআত পড়লে তাকে ওহাবি বলা হয়।

অর্থাৎ‍ সমাজের প্রচলনের বাইরে যে গেল সে ওহাবি। এটা অনেকটা এমন, মুহাম্মাদ সা. যখন দ্বীন প্রচার করতে লাগলেন, সমাজের মানুষেরা তাঁর কোনো কাজকে খারাপ বলতে পারল না, তখন কাফেররা বলতে লাগল মুহাম্মাদ সাবে' হয়ে গেছে- সাৰাআ মুহাম্মাদ।

অর্থাৎ‍ আমাদের বাপদাদার প্রচলিত ধর্ম ত্যাগ করে নতুন একটা ধর্ম নিয়ে এসেছে। এটা একটা গালি মাত্র। ঠিক তেমনি ওহাবি শব্দ একটা গালিতে পরিণত হয়েছে।

মূলত ওহাবি বলে কোনো জিনিস নেই। দেখবেন সমাজে যারা কুরআন-সুন্নাহ মানতে চায়, রাসূল (সা.) এর অনুসরণ করতে চায় বিদআতকে যারা ভালোবাসে তারা এইসব মানুষকে ওহাবি বলে গালি দেয়।

আমরা সবাইকে অনুরোধ করব, যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সা.) কে অনুসরণ করতে চায় তাকে আপনি কেন গালি দেন! তাহলে তো মুহাম্মাদ (সা.)'কে গালি দেওয়া হয়। এটা হলো মূল বিষয়।

মূলত ওহাবি বলে কিছু নেই। কেউ বলে ওহাবিরা ওলিদের অস্বীকার করে, কেউ বলে ওহাবিরা রাসূল (সা.)'কে মানে না- এগুলো সবই ভুল কথা।

মূলত যাদেরকে আমরা ওহাবি বলি তারা সবই মানেন। তারা মাযহাব মানেন, তারা সুন্নাত মানেন, তারা ওলিদের মানেন, তারা কুরআন মানেন এবং তারা কেউ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাবের ভক্ত নয়।

কিন্তু তারা বিদআতের বিরোধিতা করেন। এটাই হলো সমস্যা। এবার আসা যাক নামাযের পরের মুনাজাতের বিষয়ে। আসলে আমরা তো অভ্যাসের দাস। নামাযটাই মুনাজাত। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: إن أحدكم إذا قام يصلي إنما يقوم يناجي ربه، فلينظر كيف يناجيه

অর্থাৎ যখন তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ায়, তখন সে তার রবের সাথে মুনাজাত করে। মুনাজাত শব্দের অর্থ কথা বলা। চুপিচুপি কথা বলা।

তো যখন আমরা সালাতে দাঁড়াই তখন আমরা মুনাজাত করি। কাজেই রাসূল (সা.) বলেছেন, তুমি কার সাথে কথা বলছ, কী কথা বলছ, সচেতন হয়ে কথা বলো। অতএব সালাতটা পুরোটাই মুনাজাত। 

আবার আমরা যে দুআ বলি; সালাত দুআ। রাসূল (সা.) সালাতের সিজদায় দুআ করতেন, সালাম ফিরানোর আগে দুআ করতেন।

আর যেটা নিয়ে আমাদের গোলমাল, অর্থাৎ সালাতের পরের দুআ- এটাও রাসূল (সা.) করতেন। তবে সমস্যা হলো, দলবদ্ধভাবে সবাই মিলে যে মুনাজাতটা করা হয় এভাবে রাসূল (সা.) কখনো করতেন না।

রাসূল (সা.) মদীনার দশ বছরের জীবনে আঠারো হাজার ওয়াক্ত সালাত আদায় করেছেন, এক ওয়াক্ত সালাতেও তিনি সবাইকে নিয়ে দলবদ্ধভাবে হাত তুলে মুনাজাত করেছেন এমন একটা হাদীস নেই।

কিন্তু এর বিপরীতে রাসূল (সা.) এর শতশত হাদীস আছে, তিনি সালাতের সালাম ফেরানোর পরে একা একা বিভিন্ন দুআ পড়েছেন। আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন।

এজন্য যারা রাসূল (সা.) এর পুরোপুরি অনুসরণ করতে চান তারা একাকি দুআকে পছন্দ করেন। আপনিও তো একাই দুআ করেন বোন। আপনার সন্তানও একাই দুআ করবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post