ছালাতের ফযীলত সমূহ। | ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব।

ছালাতের ফযীলত সমূহ। | ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব।

ছালাতের ফযীলত সমূহ। | ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব।

০১. আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, "নিশ্চয়ই ছালাত মুমিনকে নির্লজ্জ ও অপসন্দনীয় কাজ সমূহ হ'তে বিরত রাখে'।"

০২. রাসূলুল্লাহ (ছা:) এরশাদ করেন, "পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুম'আ হ'তে পরবর্তী জুম'আ, এক রামাযান হ'তে পরবর্তী রামাযান এর মধ্যকার যাবতীয় (ছগীরা) গুনাহের কাফ্ফারা স্বরূপ, যদি কি-না সে কবীরা গোনাহসমূহ হ'তে বিরত থাকে (যা তওবা করা ব্যতীত মাফ হয় না)'।"

০৩. তিনি আরও বলেন, "তোমাদের কারও ঘরের সম্মুখ দিয়ে প্রবাহিত নদীতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করলে তোমাদের দেহে কোনো ময়লা বাকী থাকে কি? পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের তুলনা ঠিক অনুরূপ। আল্লাহ এর দ্বারা বান্দার গোনাহ সমূহ বিদূরিত করেন।"

০৪. অন্যত্র তিনি বলেন, "যে ব্যক্তি ছালাতের হেফাযত করল, ছালাত তার জন্য কিয়ামতের দিন নূর, দলীল ও নাজাতের কারণ হবে...।

০৫. আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) হ'তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, "বান্দা যখন ছালাতে দণ্ডায়মান হয়, তখন তার সমস্ত গুনাহ হাযির করা হয়। অতঃপর তা তার মাথায় ও দুই স্কন্ধে রেখে দেওয়া হয়। এরপর সে ব্যক্তি যখনই রুকু বা সিজদায় গমন করে, তখনই গুনাহ সমূহ ঝরে পড়ে।"

০৬. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

(ক) "যে ব্যক্তি ফজর ও আছরের ছালাত নিয়মিত আদায় করে, সে জাহান্নামে যাবেনা'। 'সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

(খ) "দিবস ও রাতের ফেরেশতারা ফজর ও আছরের ছালাতের সময় একত্রিত হয়। রাতের ফেরেশতারা আসমানে উঠে গেলে আল্লাহ তাদের জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আমার বান্দাদের কী অবস্থায় রেখে এলে? - যদিও তিনি সবকিছু অবগত। তখন ফেরেশতারা বলে যে, আমরা তাদেরকে পেয়েছিলাম (আছরের) ছালাত অবস্থায় এবং ছেড়ে এসেছি (ফজরের) ছালাত অবস্থায়।"

কুরআনে ফজরের ছালাতকে 'মাশহূদ' বলা হয়েছে (ইসরা ৭৮)। অর্থাৎ ঐ সময় রাতের ও দিনের ফেরেশতা একত্রিত হয়ে সাক্ষী হয়ে যায়।

(গ) যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত আদায় করল, সে আল্লাহর যিম্মায় রইল। যদি কেউ সেই যিম্মা থেকে কাউকে ছাড়িয়ে নিতে চায়, তাকে উপুড় অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

০৭. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

(ক) "যদি লোকেরা জানতো যে, আযান, প্রথম কাতার ও আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায়ে কী নেকী রয়েছে, তাহলে তারা পরষ্পরে প্রতিযোগিতা করত। অনুরূপভাবে যদি তারা জানত এশা ও ফজরের ছালাতে কী নেকী রয়েছে, তবে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও ঐ দুই ছালাতে আসত।

(খ) তিনি বলেন, "যে ব্যক্তি এশার ছালাত জামা'আতে পড়ল, সে যেন অর্ধরাত্রি ছালাতে কাটাল এবং যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত জামা'আতে পড়ল, সে যেন সমস্ত রাত্রি ছালাতে অতিবাহিত করল।"

(গ) তিনি বলেন, "মুনাফিকদের উপরে ফজর ও এশার চাইতে কঠিন কোনো ছালাত নেই।"

০৮. তিনি বলেন, "পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত যেগুলিকে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের উপরে ফরয করেছেন, যে ব্যক্তি এগুলির জন্য সুন্দর ভাবে ওযূ করবে, ওয়াক্ত মোতাবেক ছালাত আদায় করবে, রুকূ ও খুশু-খুযু' পূর্ণ করবে, তাকে ক্ষমা করার জন্য 'আল্লাহ্ অঙ্গীকার রয়েছে। আর যে ব্যক্তি এগুলি করবে না, তার জন্য আল্লাহর কোনো অঙ্গীকার নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন, ইচ্ছা করলে আযাব দিতে পারেন।"

০৯. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, "আল্লাহ পাক বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো প্রিয় বান্দার সাথে দুশমনী করল, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম।

আমি যেসব বিষয় ফরয করেছি, তার মাধ্যমে আমার নৈকট্য অনুসন্ধানের চাইতে প্রিয়তর আমার নিকটে আর কিছু নেই। বান্দা বিভিন্ন নফল ইবাদতের মাধ্যমে সর্বদা আমার নৈকট্য হাছিলের চেষ্টায় থাকে, যতক্ষণ না আমি তাকে ভালবাসি।

অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমিই তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শ্রবণ করে, চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দর্শন করে, হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধারণ করে, পা হয়ে যাই যার সাহায্যে সে চলাফেরা করে।

যদি সে আমার নিকটে কিছুর প্রার্থনা করে আমি তাকে দান করে থাকি। যদি সে আশ্রয় ভিক্ষা করে, আমি তাকে আশ্রয় দিয়ে থাকি।"

দলিলসমুহ:

০১. আনকাবৃত ৪৫।

০২. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৪ 'ছালাত' অধ্যায়।

০৩. মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৫৬৫।

০৪. আহমাদ, দারেমী, মিশকাত হা/৫৭৮।

০৫. ত্বাবারাণী, বায়হাক্বী; আলবানী 'ছহীহ' বলেছেন-মাজমু'আ রাসা-ইল (রিয়ায় ১৪০৫ হিঃ) ২০২ পৃ:।

০৬. (ক) মুসলিম, মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬২৪-২৫।

০৬. (খ) মুসলিম মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৬২৪, ৬২৫-২৬।

০৬. (গ) তিরমিযী, মিশকাত হা/৬৩৫। ৩০. মুসলিম, মিশকাত হা/৬২৭।

০৭. (ক) মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬২৮।

০৭. (খ) মুসলিম, মিশকাত হা/৬০০।

০৭. (গ) মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৬২৯।

০৮. আহমাদ, আবুদাউদ, মালেক, নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৭০ 'ছালাত' অধ্যায়।

০৯. বুখারী "কিতাবুর রিকাক' তাওয়ায়ু অনুচ্ছেদ, ২/৯৬৩ পৃঃ।

উৎস:

বই: সালাতুর রাসূল (সাঃ)।
লেখক: ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন