উত্তরাধিকারী ক্ষেত্রে একজন নারী কেন একজন পুরুষের অর্ধেক সম্পদ পাবে?

ইসলামী আইনে উত্তরাধিকারী সম্পদের ক্ষেত্রে একজন নারীর অংশ একজন পুরুষের অর্ধেক কেন?

উত্তরাধিকারী সম্পদের ক্ষেত্রে একজন নারী কেন একজন পুরুষের অর্ধেক পাবে?

ডা. জাকির নায়েকের উত্তর:

ক. কুরআনে উত্তরাধিকার:

যথাযোগ্য হকদারের মধ্যে উত্তরাধিকারী সম্পদ বণ্টনের সুনির্দিষ্ট বিস্তারিত নির্দেশনা কুরআনে উল্লেখ আছে।

উত্তরাধিকার বিধান সংক্রান্ত কুরআনী আয়াতসমূহ:

সূরা বাকারাঃ ১৮০, সূরা বাকারাঃ ২৪০, সূরা নিসাঃ ৭-৯, সূরা নিসাঃ ৩৩, সূরা মায়েদাহঃ ১০৬-১০৮

খ. আত্মীয়স্বজনের জন্য উত্তরাধিকারে সুনির্দিষ্ট অংশ:

কুরআন মাজিদে তিনটি আয়াতে বিস্তারিতভাবে নিকটাত্মীয়দের অংশ বর্ণনা করা হয়েছে-

"তোমাদের সন্তানদের সম্বন্ধে আল্লাহ তোমাদেরকে এই বিধান দিচ্ছেন: পুরুষের অংশ দুই নারীর সমান হবে। (উত্তরাধিকারী) যদি দুইজনের বেশি নারী হয় তবে তাদেরকে সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ দেয়া হবে। আর একজন নারী হলে মোট সম্পদের অর্ধেক পাবে। মৃতব্যক্তির সন্তান থাকলে তার পিতা-মাতা প্রত্যেকে ছয় ভাগের এক ভাগ করে পাবে। আর সে যদি নিঃসন্তান হয়, এবং পিতা-মাতা একমাত্র উত্তরাধিকারী হয় তাহলে মাকে দেয়া হবে তিন ভাগের এক ভাগ। মৃতের ভাই বোন থাকলে মা সেই ছয় ভাগের এক ভাগই পাবে। এসব বণ্টন হবে মৃতের কোনো অসীয়ত থাকলে তা এবং ঋণ থাকলে তা আদায় করার পরে।

তোমাদের পিতা-মাতা এবং তোমাদের সন্তান-সম্ভতী, তোমাদের জানা নেই এদের মধ্যে তোমাদের কল্যাণের দিক দিয়ে কারা ঘনিষ্টতর। এই বণ্টন ব্যবস্থা ফরয করে দেওয়া হয়েছে (তোমাদের জন্য) আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ তো সব কিছুর ব্যাপারেই পূর্ণ ওয়াকেফহাল এবং মহামহীম জ্ঞানের আধার।

আর তোমাদের স্ত্রীরা যা কিছু সম্পদ রেখে গেছে, তার অর্ধেক তোমরা পাবে যদি তারা নিঃসন্তান হয়। সন্তান থাকলে তোমরা পাবে রেখে যাওয়া সম্পত্তির চারভাগের এক ভাগ, তাদের করে যাওয়া অসীয়ত এবং ঋণ থাকলে তা সব আদায়ের পরে। আর (তোমরা মারা গেলে) তোমাদের রেখে যাওয়া সম্পদের মধ্যে তারা পাবে চার ভাগের একভাগ, যদি তোমাদের কোনো সন্তান না থাকে। সন্তান থাকলে তারা পাবে আট ভাগের একভাগ। তা-ও কার্যকর হবে তোমাদের কোনো অসীয়ত এবং ঋণ থাকলে তা পরিশোধের পর।

আর যদি এমন কোনো পুরুষ অথবা স্ত্রীলোক যার না আছে কোনো সন্তান আর না আছে পিতা-মাতা। আছে এক ভাই অথবা এক বোন তাহলে তাদের প্রত্যেকে (কোনো পার্থক্য ব্যতীত পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ। আর ভাই বোন যদি দুই এর বেশি হয় তাহলে তারা সবাই মিলে মোট সম্পদের তিন ভাগের একভাগ পাবে। তা-ও কোনো অসীয়ত এবং ঋণ থাকলে তা পরিশোধের পরে। কোনো ক্রমেই কারো কোনো ক্ষতি করা বা হতে দেয়া যাবে না। (এসব কিছু) আল্লাহর দেয়া উপদেশমালা। আল্লাহ সব কিছুর ব্যাপারেই পূর্ণ ওয়াকেফহাল এবং পরম ধৈর্যশীল।" (সূরা নিসাঃ ১১-১২)

কুরআনে বলা হয়েছে,

"তারা আপনার নিকট ফতোয়া (ফয়সালা) জানতে চায়। বলুন, আল্লাহ তোমাদেরকে ফতোয়া দিচ্ছেন নিঃসন্তান ও পিতৃ-মাতৃহীন মৃত-ব্যক্তির সম্পদ বণ্টন সম্বন্ধে। যদি এমন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে, যার কোনো সন্তান নেই, আছে এক বোন। তাহলে সে (বোন) পাবে সম্পদের অর্ধেক আর যদি (এরকম কোনো) বোন মারা যায় তাহলে ভাই সমস্ত সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে।

মৃতের উত্তরাধিকারী যদি সকল বোন হয় তাহলে রেখে যাওয়া সম্পত্তির তিন ভাগের দু'ভাগ তারা পাবে। আর যদি কয়েকজন ভাই বোন হয় তাহলে পুরুষের অংশ নারীর অংশের দু'জনার সমান।

আল্লাহ এই সকল জটিল বিষয়গুলো খুলে খুলে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন তোমাদের জন্য যেন তোমরা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে না যাও। প্রত্যেকটি জিনিস সম্পর্কেই আল্লাহ পূর্ণ অবহিত।" (সূরা নিসাঃ ১৭৬)

গ. প্রতিপক্ষ পুরুষের তুলনায় ক্ষেত্রবিশেষ নারী সমান অথবা বেশির অধিকারী হয়।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারী অধিকারী হয় প্রতিপক্ষ পুরুষের অর্ধেক। যাই হোক এটা কিন্তু সর্বক্ষেত্রে নয়। যেমন মৃত ব্যক্তি যার পিতা-মাতাও নেই, পুত্র কন্যাও নেই। আছে বৈপিত্রীয় ভাই ও বোন। এদের প্রত্যেকে এক ষষ্টমাংশ করে পাবে।

মৃতের পুত্র কন্যা থাকলে মাতা-পিতা দুজনেই এক ষষ্টমাংশ করে পাবে। ক্ষেত্র বিশেষে নারী উত্তরাধিকার হয় পুরুষের দ্বিগুন। মৃত যদি এমন একজন নারী হয় যার না কোনো সন্তান আছে না আছে ভাই বোন, তবে আছে স্বামী এবং মা ও বাবা।

এখানে মৃতের স্বামী পাবে অর্ধেক সম্পদ এবং মা পাবে এক তৃতীয়াংশ আর বাবা পাবে এক ষষ্টমাংশ। বিশেষ এই ক্ষেত্রটিতে বাবার তুলনায় মা পাচ্ছে দ্বিগুন।

ঘ. সাধারণত পুরুষের অর্ধেক অংশের উত্তরাধিকারী হয় নারী

১. পুত্র যে পরিমানের উত্তরাধিকারী হয় কন্যা তার অর্ধেক।

২. মৃত ব্যক্তি নিঃসন্তান হলে স্বামী চারের এক অংশ, স্ত্রী আটের এক অংশ।

৩. মৃতের সন্তান থাকলে স্বামী পাবে দুইয়ের এক অংশ, স্ত্রী পাবে চারের এক অংশ।

৪. যদি মৃতের পিতা-মাতা অথবা সন্তান না থাকে তাহলে ভাই যা পাবে বোন পাবে তার অর্ধেক।

ঙ.পুরুষ নারীর চেয়ে দ্বিগুন সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়, কারণ সে পরিবারের আর্থিক প্রয়োজনের যোগানদাতা।

ইসলামে নারীর ওপরে পরিবারের কোনো আর্থিক বাধ্যবাধকতা এবং অর্থনৈতিক দায়দায়িত্ব নেই যা পুরুষের ওপর ন্যাস্ত আছে।

কোনো মেয়ের বিয়ের পূর্বপর্যন্ত থাকা, খাওয়া, কাপড়-চোপড় এবং বাদবাকী আর্থিক প্রয়োজনের যোগানদাতা তার বাবা অথবা ভাই। বিবাহের পরে এসব দায়িত্ব স্বামীর অথবা পুত্রের।

ইসলাম পুরুষের ওপরই তার পরিবারের আর্থিক প্রয়োজন মিটানোর দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে। এসব দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে তোলার জন্যই তাকে উত্তরাধিকারে দ্বিগুণ অংশ দেয়া হয়েছে।

যেমন, এক ছেলে ও এক মেয়ে এবং নগদ এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা রেখে এক লোক মারা গেল। এখন উত্তরাধিকার বণ্টনে ছেলে মালিক হলো পূর্ণ এক লক্ষ টাকার আর মেয়ে পেলো মাত্র পঞ্চাম হাজার টাকা।

কিন্তু পরিবারের যাবতীয় আর্থিক প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব এখন ছেলের ঘাড়ে। সে সব প্রয়োজন পূরণে ছেলেকে প্রায় সব টাকাই ব্যয় করে ফেলতে হচ্ছে। 

অথবা ধরা যাক প্রায় আশি হাজার টাকা ব্যয় করে এখন তার কাছে রয়েছে মাত্র বিশ হাজার টাকা। অপরদিকে মেয়ের প্রাপ্ত পঞ্চাশ হাজার টাকা তা থেকে কারো জন্য একটি পয়সা খরচ করার কোনো দায়-দায়িত্ব তার ওপরে নেই এবং সে বাধ্যও নয়। অর্থাৎ সম্পূর্ণ টাকাটাই তার কাছে গচ্ছিত আছে।

এখন লক্ষ করুন আশি-নব্বই এমন কী পুরোটাই প্রয়োজনে ব্যয় হতে পারে এমন ঝুঁকির মুখে, একদিকে ঝুঁকিপূর্ণ একলক্ষ টাকা, অপরদিকে সংরক্ষিত পঞ্চাশ হাজার টাকা কে কোনটা নিতে চাইবেন?

Post a Comment

Previous Post Next Post