আল্লাহ যদি দয়ালু হয়ে থাকেন, তাহলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেন দেন?

প্রশ্নকর্তা: কিছু দিন আগে আপনার একটি লেকচার কনসেপ্ট অফ কড ইন মেজর রিলিজিয়নস্ এর ভিডিও সিডি একজন অমুসলিমকে দেখেছিলাম। তিনি একজন প্রফেসর।

তিনি আমাকে একটা প্রশ্ন করলেন যে, প্রত্যেক ধর্মই বলছে ঈশ্বর দয়ালু। কিন্তু দেখা গেল একটি দিনে যখন মুসলমান, হিন্দু, খ্রীস্টানরা নিজ নিজ নিয়মে ঈশ্বরের পূজা করছে এবং কিছু উপজাতি পূজা করছে সূর্যের।

তখনই আবার সুনামীর মত বিপর্যয় হয়ে যখন হাজার মানুষ মারা গেল। তাহলে আমরা কোন ঈশ্বরের পূজা করব? এ প্রশ্নের জবাবে আপনি কী বলেন?

আল্লাহ যদি দয়ালু হয়ে থাকেন, তাহলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেন দেন?

আল্লাহ যদি দয়ালু হয়ে থাকেন, তাহলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেন দেন?

ডা. জাকির নায়েকের উত্তর: সকল ধর্মেই বলা হয়েছে, ঈশ্বর দয়ালু। কিন্তু ইসলামে ঈশ্বরকে শুধু দয়ালুই বলা হয়নি সাথে বলা হয়েছে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক। সূরা নিসার ৪ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে,

إن الله لا يظلم مثقال ذرة .

অর্থ: কারও উপর আল্লাহ অণুপরিমাণও অবিচার করেন না।

অর্থাৎ‍ দয়ালু হবার পাশাপাশি তিনি ন্যায়বিচারক। উদাহরণস্বরূপ একজন ব্যক্তি যদি কাউকে ধর্ষণ করে তাহলে ন্যায়বিচারের দাবি হলো ধর্ষকের শাস্তি হতে হবে। এজন্য ইসলামী রাষ্ট্রে ধর্ষণের শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড।

ইহকালের ধর্ষককে যদি ক্ষমা করে দেয়া হয় তাহলে ধর্ষিতার ওপর ইনসাফ হবে না। তবে পরকালে আল্লাহ যখন তাঁর অসীম (দয়ালু এবং সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক) জ্ঞানের আলোকে বিচার করবেন, মানুষের জীবনের সমগ্র চিত্র সম্পর্কে তার সামগ্রিক জ্ঞান থাকায় তিনি চাইলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন।

তবে সেক্ষেত্রে ধর্ষিতাও যে ক্ষতিপূরণ পাবে এতে সন্দেহ নেই। এখন সূরা মূলক এর ২নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন,

الذي خلق الموت والحيوة ليبلوكم أيكم أحسن عملا.

অর্থ: “তিনি জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন যেন তিনি পরীক্ষা করে নিতে পারেন তোমাদের মধ্যে কে উত্তম আমলকারী।"

সুতরাং সুনামির ঘটনাটার দুটো ব্যাখ্যা থাকতে পারে। এটা কারও জন্য পরীক্ষা এবং কারও জন্য শাস্তি। হতে পারে এটা ভালো মানুষের জন্য পরীক্ষা আর খারাপ মানুষের জন্য শাস্তি।

আবার খারাপ মানুষের জন্যও এটা পরীক্ষা হতে পারে। ঠিক তেমনি যদি কোনো ভালো কিছু সংঘটিত হয়, সেটি কারও জন্য পরীক্ষা কারও জন্য পুরস্কার হতে পারে। খারাপ বা ভালো উভয়ের জন্য এটা পরীক্ষা হতে পারে, অথবা হতে পারে- ভালো মানুষের জন্য একটি পুরস্কার।

পৃথিবীতে মানুষকে একটি নির্দিষ্ট সময় দিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্য। সুতরাং সুনামিতে আক্রান্ত হয়ে যারা মৃত্যুবরণ করেছে তার মধ্যে ভালো খারাপ সব মানুষই থাকতে পারে তাদের পৃথিবীতে প্রদত্ত পরীক্ষার সময় শেষ।

এমনটি ভাবার সুযোগ নেই যে, এটি শুধু শাস্তিই হতে হবে। যারা ভালো ছিল তাদের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা সুনামিতে ইন্তেকাল করেছে। আর যারা খারাপ ছিল হতে পারে দুনিয়ায় থাকতেই তাদের শাস্তি দিয়ে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে অথবা হতে পারে তাদেরও সময় শেষ।

দুনিয়াতে কোনো পরীক্ষার কথা আপনারা চিন্তা করুন। তিন ঘণ্টা শেষ হয়ে গেলে কী করা হয়? খাতা নিয়ে নেয়া হয়। এখানে কারও এটা ভাবার সুযোগ নেই যে, শাস্তিসরূপ তার খাতা নিয়ে নেয়া হয়েছে; বরং খাতা নিয়ে নেয়ার কারণ সময় শেষ।

এখন পরীক্ষক যেমন খাতাগুলো দেখে ফলাফল নির্ধারণ করবেন তেমনি আল্লাহও পরকালে মানুষের আমলনামা দেখে তাদের জান্নাত বা জাহান্নাম দেবেন। এখন সুনামিতে যে ব্যক্তি মারা গেল, তার পরিবারের জন্য এটি এমনি বিপর্যয়বএবং একই সাথে একটি পরীক্ষা। 

যদি কোন পরিবারের ছোট একটা ছেলে মারা যায়। তাহলে এটা হতে পারে উক্ত পরিবারের মা-বাবার জন্য পরীক্ষা এভাবে যে, তারা ধৈর্য ধারণ করে কিনা? 

অথবা পরিবারটি যদি ধনী ও অহংকারী হয় তাহলে এটা হবে পরিবারটির জন্য একটি শাস্তি। এভাবে যে, ধন সম্পদ তাদের সন্তানকে বাঁচাতে পারল না আর ঐ সন্তানের হিসেব ও পুরস্কার আলাদা ব্যাপার।

পরীক্ষা যত কঠিন হবে, পুরস্কারও বেশি হবে। বি. এ পাশ করা সহজ কিন্তু এম.বি.বি.এস. পাস করা কঠিন। পৃথিবীতে আল্লাহ সবাইকে সমান সময় দেন না।

কেউ বাঁচে ১০ বছর, কেউ ২৫ বছর, কেউ ৫০ বছর। এ সময়ের মধ্যে সে কী আমল করল ও কতটুকু সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছিল এটার ওপর ভিত্তি করে হবে ন্যায়বিচার।

সুতরাং সুনামি হলেই যে, ঈশ্বর দয়ালু হবেন না এটা ভাবার সুযোগ নেই। যারা পরকালে বিশ্বাস করে না তারাই কেবল এ ধরনের বিপর্যয় দেখে হতাশায় পড়ে অর্থাৎ তাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে।

সুনামি জাতীয় ঘটনাগুলো আল্লাহর নিদর্শনের হতে পারে। মানুষকে আল্লাহর হুকুমের সামনে কত অসহায় ও একই সাথে মানুষ যে কী পরিমাণ নিয়ামতরাজির মধ্যে ডুবে আছে মানবজাতির মধ্যে এ উপলব্ধি জাগ্রত করার জন্য আল্লাহ এ ধরনের নিদর্শন দেখিয়ে থাকেন।

আমেরিকা, ইরাক ও আফগানিস্তানে যে পরিমাণ ক্ষতি সাধন করেছে, আল্লাহর ক্যাটরিনা নামক ঘূর্ণিঝড় দিয়ে আমেরিকাতে তার চেয়েও বেশি সম্পদের বিপর্যয় ঘটিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিও কিছু করতে পারেনি।

পবিত্র কোরআনের সূরা ফুসসিলাতের ৫৩ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। "তাদের জন্য আমার নিদর্শনগুলো প্রকাশ করব, বিশ্ব জগতে ও তাদের নিজেদের মধ্যে, ফলে তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, এটাই সত্যি"

অতএব আল্লাহর এ নিদর্শন দেখে আমাদের সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিৎ এবং আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে আরও নিষ্ঠাবান হওয়া উচিত।

Post a Comment

Previous Post Next Post