বগলের গন্ধ থেকে মুক্তি পাবেন যেভাবে।

বগলের গন্ধ কেন হয়? কীভাবে বগলের গন্ধ থেকে মুক্তি পাবেন?–

অনেকেরই যে সমস্যা হয় তা হলো বগলে দুর্গন্ধ হওয়া। বগল থেকে আসা দুর্গন্ধ কয়েক মিনিটের মধ্যে একজন ব্যক্তির ভালো মেজাজ নষ্ট করে দেয়।

যে ব্যক্তির এমন হয় শুধু তারই কষ্ট হয় ব্যাপারটা এমন নয় বগলের গন্ধে আশেপাশের মানুষ জনকেও কষ্ট সহ্য করতে হয়। বিশেষ করে গরম কালে যা বেশি দেখা যায়।

এমন পরিস্থিতিতে, বগলের গন্ধ দূর করার জন্য লোকেরা সাধারণত ডিওডোরেন্টের আশ্রয় নেয়, তবে এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয় না এবং এতে উপস্থিত হার্ড রাসায়নিক কেবল আপনার পোশাকই নষ্ট করে না, আপনার ত্বকেও মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

আশা করি, আজকের এই আর্টিকেলে থেকে বগলে কেন দুর্গন্ধ হয়, বগলের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় এবং বগলের দুর্গন্ধ থেকে বেঁচে থাকার ৬ টি টিপস ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছেন।

তাই বগলের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা প্রয়োজন। এর সাহায্যে আপনি সহজেই বগলের গন্ধ দূর করতে পারবেন।

বগলের গন্ধের কারণ। | বগলের গন্ধ দূর করার উপায়।

সাধারণত বগলের গন্ধ নিয়ে মানুষের মনে একটা ভুল ধারণা আছে তা হলো ঘামের দুর্গন্ধের কারণেই এই গন্ধ আসে।

তবে জানিয়ে রাখি, ঘামে কোনো ধরনের গন্ধ নেই।  আমাদের শরীরে ব্যাকটেরিয়া থাকে এবং আমরা ঘামলে এই ব্যাকটেরিয়াগুলো ঘামে মিশে যায়, যার কারণে ঘাম থেকে দুর্গন্ধ শুরু হয়।

এ ছাড়া আরো অনেক কারণ রয়েছে যার কারণে বগলে দুর্গন্ধ হয়। নিচে তা তুলে ধরলাম।

০১. মানসিক চাপের কারণে ঘামের গন্ধ হয়।

একজন মানুষ যখন মানসিক চাপে থাকে, তখন তার শরীরে কর্টিসল নামক হরমোন তৈরি হয়, যার কারণে মানুষ অতিরিক্ত ঘামতে শুরু করে। এই ঘাম শরীরে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এলে দুর্গন্ধ শুরু হয়।

০২. অতিরিক্ত ওষুধ সেবনের কারণে কারো কারো ঘামে দুর্গন্ধ হয়।

ওষুধে রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা শরীরের গন্ধকে প্রভাবিত করে।  এমন অবস্থায় কেউ যদি বেশি মাত্রায় ওষুধ সেবন করে তাহলে তার শরীরের দুর্গন্ধ ও ঘাম একসঙ্গে দুর্গন্ধে পরিণত হয়।

০৩. অতিরিক্ত মশলাদার খাবার খেলে বগলে দুর্গন্ধ হয়।

যদি একজন ব্যক্তি প্রচুর পরিমাণে মরিচ মসলাযুক্ত খাবার খায়, তাহলে তার শরীর গন্ধ হতে শুরু করে যা ঘামের সাথে মিশে একটি তীব্র গন্ধে রূপান্তরিত হয়।

০৪. বগলে দুর্গন্ধের জন্য পোশাকও দায়ী।

গরমে চিন্তা না করেই যেকোনো ধরনের কাপড়ের পোশাক পরেন অনেকে। রেয়ন, সিনথেটিক, পলিয়েস্টারের মতো কাপড় ঘাম শোষণ করতে সক্ষম হয় না।

ঘাম না শুকানোর কারণে ত্বকে আর্দ্রতা আসে, যার কারণে সেই জায়গায় ব্যাকটেরিয়া বেশি জন্মাতে শুরু করে এবং তারপরে দুর্গন্ধ শুরু হয়।

তাই যারা বেশি ঘামেন তাদের পোশাকে সুতি কাপড় ব্যবহার করা উচিত।

০৫. বগলে দুর্গন্ধের কারণগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত ডিওডোরেন্ট ব্যবহারও অন্তর্ভুক্ত।

বর্তমান সময়ে বাজারে এমন অনেক ডিওডোরেন্ট পাওয়া যায় যেগুলিতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য নেই এবং লোকেরা যখন এই ডিওডোরেন্টগুলো ব্যবহার করে তখন তাদের ত্বকে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে।

তাই বাজারে পাওয়া ডিওডোরেন্ট ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করা উচিত।

এই 'প্রাকৃতিক ডিওডোরেন্টস' শরীরে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে বাধা দেয়, যা আপনার ত্বকের দুর্গন্ধকে দূরে রাখবে।

কীভাবে বগলের গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? | আন্ডারআর্মের গন্ধ দূর করার ঘরোয়া প্রতিকার।

০১. লেবু আন্ডারআর্মের গন্ধ দূর করতে পারে।

লেবু বগলের গন্ধ দূর করতে খুবই কার্যকরী উপাদান হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ত্বকের PH লেভেল ঠিক রাখার পাশাপাশি এটি জীবাণুকেও মেরে ফেলে, যাতে এর ব্যবহারে বগলের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এটি ব্যবহার করতে, মাঝখানে একটি লেবু কেটে নিন এবং গোসলের আগে এটি আপনার বগলে ঘষুন এবং তারপর 10-15 মিনিটের জন্য শুকানোর জন্য রেখে দিন। পরে গোসল করুন।

এটি আপনার বগলের গন্ধ সম্পূর্ণরূপে দূর করবে এবং আপনি সারা দিন সুগন্ধ অনুভব করবেন।

[বিশেষ দ্রষ্টব্য: আপনার যদি সংবেদনশীল ত্বক হয় তবে পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে তুলা দিয়ে বগলে লাগান।]

০২. আপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে বগলের দুর্গন্ধ দূর করার কিছু সহজ উপায়।

আপেল সাইডার ভিনেগার বগলের দুর্গন্ধ দূর করতে সহায়ক। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এটি আপনার বগলে ব্যবহার করুন এবং সারা রাত এভাবে রেখে দিন।

এটি অতিরিক্ত বগলের ঘাম প্রতিরোধে সাহায্য করে। আপনি চাইলে প্রতিদিন সকালে গোসলের ৩০ মিনিট আগে বগলে লাগাতে পারেন।

আপনি প্রাকৃতিক ডিওডোরেন্ট হিসেবে আপেল সিডার ভিনেগারও ব্যবহার করতে পারেন।

এ জন্য অল্প পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবু এবং সামান্য আপেল ভিনেগার মিশিয়ে ভালো করে মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে প্রতিদিন গোসলের পর বগলে স্প্রে করুন।

০৩. বগলে গন্ধ দূর করতে গোলাপ জল লাগান।

গোলাপ জল শরীরে প্রাকৃতিক শীতলতা ও কোমলতা প্রদানের কাজ করে। এছাড়া আন্ডারআর্মে গোলাপ জলের স্প্রে গন্ধ দূর করতেও কাজ করে। 

আন্ডারআর্মের গন্ধ থেকে আরাম পেতে দুই চা চামচ গোলাপ জলে দুই ফোঁটা ট্রি অয়েল মিশিয়ে তুলোর সাহায্যে আন্ডারআর্মে লাগান। আপনি চাইলে গোসলের পানিতেও গোলাপ জল দিতে পারেন।

০৪. বেকিং সোডা দিয়ে বগলের দুর্গন্ধ দূর করার সহজ উপায়।

বগলের ঘাম এবং দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে বেকিং সোডা উপকারী প্রমাণিত হয়। এটি ব্যবহারের জন্য, বেকিং সোডাতে জল এবং ভুট্টার আটা মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং এই পেস্টটি বগলে লাগান।

শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে এক চামচ বেকিং সোডার মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান এবং ১৫ মিনিট রেখে দিন।

০৫. অ্যালোভেরা জেল দিয়ে ঘামের গন্ধকে বিদায় জানান।

অ্যালোভেরা জেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা জীবাণুকে মেরে ফেলে এবং নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি দেয়।

এটি ব্যবহার করার জন্য, আপনি রাতে বগলে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে ঘুমান এবং সকালে ঘুম থেকে উঠলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

০৬. নারকেল তেল দিয়ে আন্ডারআর্মের গন্ধকে বিদায় জানান।

নারকেল তেল দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী জীবাণু দূর করতে সহায়ক। এতে ভিটামিন ই এর গুণাগুণ পাওয়া যায়, যা ত্বকের চুলকানি ও জ্বালাপোড়া কমাতে সহায়ক।

বগলের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে গোসলের পর আন্ডারআর্মে নারকেল তেল লাগিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন।

০৭. বগলের গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে হাইড্রোজেন পারক্সাইড প্রতিকারের অন্তর্ভুক্ত।

হাইড্রোজেন পারক্সাইডে অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী জীবাণু দূর করতে কার্যকর প্রমাণিত হয়।

এটি ব্যবহারের জন্য, সামান্য হাইড্রোজেন পারক্সাইডে সামান্য জল বা গোলাপ জল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।

আপনি এই মিশ্রণটি একটি বোতলে রেখে প্রতিদিন গোসল করার পর তুলোর সাহায্যে বগলে লাগান।

০৮. টি ট্রি অয়েল দিয়ে বগলের দুর্গন্ধ দূর করুন।

চা গাছের তেলে অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।

এটি ব্যবহারের জন্য, এক চা চামচ জলের সাথে দুই ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে তুলোর সাহায্যে আপনার দুই বগলে লাগান।

আরো পড়ুন: বগলের কালো দাগ দূর করার উপায়।

ঘামের গন্ধ থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়ার ৬ টি টিপস।

০১. সারাদিনে অন্তত ৪-৫ লিটার পানি পান করুন।

০২. প্রতিদিন সকালে কমপক্ষে 30 মিনিটের জন্য ব্যায়াম করুন।

০৩. গ্রীষ্মকালে সবসময় সুতির কাপড়ের কাপড় পরুন। কারণ সুতির কাপড় ঘাম ভালোভাবে শোষণ করে।

০৪. টাইট পোশাক পরা এড়িয়ে চলুন।

০৫. খাবারে কাঁচা পেঁয়াজ বা রসুন খাবেন না।

০৬. মশলাদার ও তৈলাক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।

আশা করি, আজকের এই আর্টিকেলে থেকে বগলে কেন দুর্গন্ধ হয়, বগলের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় এবং বগলের দুর্গন্ধ থেকে বেঁচে থাকার ৬ টি টিপস ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছেন। ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন