স্লো মোবাইল ফাস্ট করার উপায় জেনে নিন।

প্রিয় পাঠক, আরো একটি নতুন আর্টিকেলে আপনাকে স্বাগতম।

আজকের এই আর্টিকেল এর বিষয়বস্তু হচ্ছে মোবাইল স্লো (Slow) হওয়ার কারণ এবং মোবাইল ফাস্ট (Fast) করার উপায়।

বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন ছাড়া একটি দিন কল্পনা করা যায় না। মোবাইল আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।

স্লো মোবাইল ফাস্ট করার উপায় জেনে নিন।

মোবাইলের সাহায্যে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করা ছাড়াও বিনোদনের প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমরা আমাদের প্রাত্যহিক দিনের প্রায় প্রতিটি কাজেই এটি ব্যবহার করে থাকি।

তবে মাঝে মাঝে আমাদের ব্যবহৃত মোবাইলটি নিয়ে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

মোবাইল সম্পর্কিত সমস্যাগুলোর মধ্যে যেটি সব চেয়ে বেশি দেখা যায় তা হলো অনেকের মোবাইল ফোন স্লো হয়ে যায়।

পুরান মোবাইল স্লো হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক একটি ব্যপার। তবে কিছু পদক্ষেপ নিলে মোবাইল ফাস্ট করা যায়, যা আমরা অনেকেই জানি না।

আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো মোবাইল স্লো কাজ করলে কীভাবে মোবাইল ফাস্ট করা যায়।

মোবাইল ফাস্ট করার উপায় জানার আগে মোবাইল স্লো হওয়ার কারণগুলোও জেনে নেওয়া প্রয়োজন।

চলুন জেনে যাওয়া যাক মোবাইল স্লো হয় কেন এবং মোবাইল স্লো হলে যা করবেন।

মোবাইল স্লো হওয়ার কারণ এবং মোবাইল ফাস্ট করার উপায়।

০১. ফোনে থাকা অপ্রয়োজনীয় ফাইল।

মোবাইল ফোন স্লো হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো পর্যাপ্ত পরিমাণ ফোন মেমোরি খালি না থাকা।

দেখা যায় আপনার ফোনে ১৬ জিবি ফোন মেমোরি থাকা সত্ত্বেও আপনি প্রায় ১৪ বা ১৫ জিবি মেমোরি খরচ করে ফেলেছেন।

এখানে আপনার ফোনে থাকা ফটো, অডিও, ভিডিও, অ্যাপস ইত্যাদি ফাইল ১৫ জিবি বা ১৬ জিবি শেষ করে ফেলছে।

এই ডেটাগুলোর মধ্যে কিছু অতিরিক্ত ফাইল হয়তো আপনার নিজের অজান্তেই মেমোরি ফুল (Full) করে বসে আছে। যার কারনে আপনার হাতে থাকা ফোন খুব স্লো কাজ করছে।

‣ মোবাইল স্লো সমস্যার সমাধান।

আপনার মোবাইল স্লো কাজ করলে মোবাইল ফাস্ট করার জন্য আপনাকে প্রথম যে কাজটা করতে হবে সেটা হলো যেসব অ্যাপস আপনি ব্যবহার করেন না বা খুব বেশি প্রয়োজন না সেসব অ্যাপস আনইনস্টল (Uninstall) করে দিবেন।

আর যদি এমন কিছু অ্যাপস থেকে থাকে যেগুলো অনেক দিন পর পর ব্যবহার করেন তাহলে সেসব অ্যাপস ব্যাকআপ দিয়ে রেখে আনইনস্টল করে দিবেন।

যখন দরকার হবে তখন আবার ইন্সটল (Install) করে ব্যবহার করবেন। কেননা অল্প প্রয়োজনীয় অ্যাপসও অনেক সময় প্রচুর পরিমাণে ডেটা খেয়ে মেমোরি ফুল করে বসে থাকে।

আবার আমাদের মোবাইলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছবি, ভিডিও ধারণ করে থাকি। সেগুলো থেকে যেসব ছবি ও ভিডিও অপ্রয়োজনীয় তা ডিলিট (Delete) করতে ভুলে যাই।

যেসব অতিরিক্ত ছবি ও ভিডিও রয়েছে যা আপনার অপ্রয়োজনীয় এবং যেগুলো আপনার ফোনে রেখে দেওয়ার মতো নয় সেসব ছবি ও ভিডিও ডিলিট করে দিন।

ছবি, ভিডিও, অ্যাপ ছাড়াও ফোনে থাকা আরো সকল অপ্রয়োজনীয় ফাইলগুলো বাছাই করে করে ডিলিট করে দিবেন। তাহলে দেখবেন আপনার ফোন অনেক দ্রুত কাজ করছে।

০২. অ্যাপসের অতিরিক্ত ডেটা।

আপনার স্মার্টফোনে যেসব অ্যাপস রয়েছে সেসকল অ্যাপস আপনার অজান্তেই প্রচুর ডেটা দখল করে বসে থাকে।

এমন কিছু অ্যাপ্স হলো: ফেসবুক (Facebook), ফেসবুক লাইট (Lite), ইউটিউব (Youtube) , স্ন্যাপচ্যাট (Snapchat), ইনস্টাগ্রাম (Instagram), ইমো (Imo), হোয়াটসঅ্যাপ (Whatsapp), টিকটক (Tiktok) ইত্যাদি।

প্রতিটি অ্যাপ বা সফটওয়্যার কমপক্ষে ৩০০ এমবি থেকে ১,০০০ এমবি পর্যন্ত স্টোরেজ (Storage) দখল করে থাকে।

আর আপনার ফোনে যদি এমন দশটি অ্যাপ থেকে থাকে তাহলে সেগুলোই আপনার ফোনের প্রায় ৫-১০ জিবি স্টোরেজ দখল করে রাখবে।

এই অ্যাপগুলোর এমন মাত্রাতিরিক্ত ডেটা আপনার স্টোরেজ মেমোরি দখল করে বসে থাকে। এ কারনে আপনার মোবাইল স্লো হয়ে যায়।

‣ মোবাইল স্লো হলে কী করব?
এই সমস্যা সমাধান করার জন্য আপনি মাঝে মাঝে এই অ্যাপসের কুকিজ ও স্টোরেজ ডেটা পরিষ্কার (Clear) করে দিবেন।

অথবা আপনার মোবাইলের মেমোরিতে গিয়ে “Android” লেখা একটি ফোল্ডার (Folder) দেখতে পাবেন। সেখানে গিয়ে দেখবেন “data” লেখা আরো একটি ফোল্ডার রয়েছে।

আপনার ফোনে থাকা সমস্ত অ্যাপস বা সফটওয়্যার এর ডেটা এই ফোল্ডারে রয়েছে। তাই সেখানে থাকা সব অ্যাপসের ডেটা ডিলিট (Delete) করে দিবেন।

তাহলে দেখবেন আপনার ফোন প্রায় আগের মত খুব দ্রুত কাজ করছে।

০৩. র্যাম (Ram) খালি না রাখা।

র্যামের কারনে ফোন স্লো হয়ে যায়। আপনার ফোনের র্যাম রয়েছে হয়তো ২ জিবি বা ৪ জিবি কিংবা আরো বেশি।

আপনি যদি আপনার ফোনের র্যামের জায়গা বেশ কিছু খালি রেখে বাকিটা ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ফোন স্লো হবে না।

আর যদি আপনি বিভিন্ন অ্যাপস ইন্সটল করে আপনার ফোনের র্যাম পুরোটাই ব্যবহার করেন কিংবা কাছাকাছি ব্যবহার করেন তাহলে দেখবেন আপনার ফোন আগের থেকে খুব স্লো কাজ করছে এবং বিভিন্ন সময়ে হ্যাং হয়ে যাচ্ছে।

‣ মোবাইল স্লো হলে করণীয়।
এই সমস্যার সমাধান করার জন্য আপনাকে যেটা করতে হবে তা হলো ফোনে থাকা র্যাম সব ব্যবহার না করে বেশ কিছু অংশ খালি রেখে দিবেন।

ধরুন, আপনার ফোনে ২ জিবি র্যাম রয়েছে সেখানে আপনি সর্বোচ্চ ১৭০০-১৮০০ এমবি পর্যন্ত খরচ বা ব্যবহার করবেন।

সবসময় দুই জিবি র্যাম এর মধ্যে কমপক্ষে ২০০ এমবি থেকে ৩০০ এমবি পর্যন্ত র্যামের জায়গা খালি রাখবেন।

তাহলে দেখবেন আপনার ফোন খুব দ্রুত কাজ করছে এবং কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই আপনি আপনার ফোনটি চালাতে পারছেন।

০৪. ফোনের সেটিংসে সমস্যা।

অনেক সময় দেখা যায় ফোনের সেটিংসে গিয়ে উল্টো পাল্টা টিপাটিপি করার ফলে নিজের অজান্তেই আপনি অথবা অন্য কেউ আপনার মোবাইল দ্রুত কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।

যার কারণে আপনি চাইলে আপনার ফোনটি আগের মত খুব দ্রুত চালাতে পারছেন না।

দেখা যায় আপনার সেট মেমোরি খালি রয়েছে, আবার দেখা যায় আপনার ফোনে সব অ্যাপসও আপডেট রয়েছে কিন্তু তবুও আপনার মোবাইল খুব স্লো চলছে।

এই সমস্যাটি হয়ে থাকে বিভিন্ন কারণে। মোবাইল ফাস্ট করার জন্য কয়েকটি ফাংশন আপনি সেটিংস থেকে বন্ধ করে দিতে পারেন।

‣ মোবাইল ফাস্ট করার উপায়।
প্রথমে আপনি আপনার ফোনের Settings এ চলে যাবেন। এরপর আপনি আপনার About Phone এর নিচে ডেভেলপার অপশনে চলে যান।

ডেভেলপার অপশনে ঢুকে একদম নিচে দেখবেন “Windows Animation Scale” নামে একটা অপশন আছে।

ঐটাতে টাচ করার পর দেখবেন নিচের মতো কতগুলো অপশন আসছে।
Animation Scale 0.5x,
Animation Scale 1x,
Animation Scale 1.5x,
Animation Scale 2x,
Animation Scale 2.5x,
Animation Scale 3x,
Animation Scale 4x,
এখানে আপনি যদি দেখেন আপনার ফোনে Animation Scale 7x বা Animation Scale 9x দেওয়া থাকে তাহলে আপনাকে Animation Scale 0.5x টা সেভ করতে হবে।

Animation Scale 0.5x সেভ করার পর দেখবেন আপনার ফোনের স্পিড একদম আগে মত হয়ে গেছে।

এভাবে খুব সহজেই আপনি নিজেই আপনার বা অন্য যেকারো ফোন আগের থেকে অনেক দ্রুত কাজ করাতে পারবেন।

০৫. প্রয়োজনীয় অ্যাপস আপডেট না করা।

আপনার ফোনে অনেকগুলো সিস্টেম অ্যাপস রয়েছে। আপনার ফোনের নিজস্ব কতগুলো অ্যাপস রয়েছে আপনি যদি এসব অ্যাপস সঠিক সময়ে আপডেট না করেন তাহলে দেখবেন আপনার ফোন একদম স্লো হয়ে গেছে।

এই অ্যাপস আপনি চাইলেও ডিলিট করতে পারবেন না কারণ আপনার ফোনের সাথে সরাসরি ভাবে সংযুক্ত।

তাই এসব ডিফল্ট অ্যাপস এবং আপনার আপনার ইনস্টল করা অ্যাপস যখন আপডেট চাবে তখন আপনি আপডেট না করলে আপনার স্মার্টফোন স্লো কাজ করবে।

‣ মোবাইল ফাস্ট রাখার উপায়।
প্রথমে আপনাকে আপনার ফোনে থাকা অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোরে গিয়ে যেসব অ্যাপস আপডেট চাচ্ছে সেসব অ্যাপস আপনি আপডেট করে নিবেন।

আপনি যদি একজন এন্ড্রয়েড মোবাইল ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে Play Store এ গিয়ে আপডেট দিবেন।

দেখবেন আপনার ফোনটা আপডেট করার কারণে আগের চেয়ে খুব দ্রুত কাজ করছে।

তবে আপনার যেসব অ্যাপস দরকার না বা খুব বেশি ব্যবহার করেন না সেসব অ্যাপস আপডেট না করলেও সমস্যা হবে না।

কিন্তু ফোনের ভেতর সিস্টেমের যেসব অ্যাপস রয়েছে সেগুলো ডিলিট বা আনইন্সটল করতে পারবেন না।

পরিশেষে, এই পাঁচটি পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনার স্লো মোবাইল খুব দ্রুত কাজ করা শুরু করবে।

আর কোনো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন, প্রযুক্তি প্রিয়‘র টীম উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবে। ধন্যবাদ।

Post a Comment

Previous Post Next Post