মোবাইলের চার্জ দীর্ঘসময় পর্যন্ত ধরে রাখার কার্যকরী ৯ টি উপায়।
দীর্ঘক্ষণ মোবাইলের চার্জ ধরে রাখার উপায়- বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন ছাড়া এক দিনও কল্পনা করা যায়না।
আমরা আমাদের প্রাত্যহিক দিনে স্মার্টফোনকে বিনোদন ছাড়াও নানা কাজে ব্যবহার করে থাকি।
সবারই কমপক্ষে একটি করে স্মার্টফোন থাকে। এন্ড্রয়েড, আইফোন, উইন্ডোজ কিংবা অন্য কোনো অপারেটিং সিস্টেমের ফোন, যে যাই ব্যবহার করিনা কেন স্মার্টফোন ব্যবহার করতে আমাদেরকে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
বিশেষ করে একটা সময় আমরা সবাই একটি কমন সমস্যার সম্মুখীন হই। আর তা হলো স্মার্টফোনের দ্রুত চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার সমস্যা।
তাইতো অনেককেই প্রশ্ন করতে শুনি, “সবচেয়ে বেশি চার্জ থাকে কোন মোবাইলে? মোবাইলের চার্জ হচ্ছে না কেন? মোবাইল চার্জ থাকেনা কেন? ইত্যাদি।”
তাই প্রযুক্তি প্রিয়‘র আজকের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, মোবাইলে চার্জ না থাকার কারণ এবং মোবাইলের চার্জ দীর্ঘসময় পর্যন্ত ধরে রাখার কার্যকরী উপায়।
আশা করছি, আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। তাই পুরো পোস্টটি ধৈর্য ধরে পড়ুন।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্মার্টফোনের ব্যাটারির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া স্বাভাবিক একটি বিষয়।
আমাদের ব্যবহৃত স্মার্টফোনে নানা ধরনের ফিচার থাকে। যা আমরা আমাদের প্রয়োজনে আবার অনেক সময় অপ্রয়োজনেও ব্যবহার করি।
আর এই ফিচারগুলোই আমাদের স্মার্টফোনের ব্যাটারির উপর চাপ সৃষ্টি করে, তাই ফোনের চার্জ খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়।
কিন্তু আমরা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই এই সমস্যা থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে।
মোবাইলের চার্জ দীর্ঘসময় পর্যন্ত ধরে রাখার উপায়।
০১: মোবাইলের ডিসপ্লের উজ্জ্বলতা কমিয়ে রাখুন।
মোবাইলের ব্যাটারি চার্জ দীর্ঘসময় ধরে রাখার জন্য ডিসপ্লে উজ্জ্বলতা (Brightness) কমিয়ে রাখা অনেক ভালো একটি উপায়।
ফোনের সেটিংস থেকে এবং উপরের নোটিফিকেশন বার থেকেও এটি বাড়ানো-কমানো যায়। ডিসপ্লের উজ্জ্বলতা যথাযম্ভব কমিয়ে রেখে ব্যবহার করায় অভ্যস্ত হোন।
এভাবে ব্যবহার করলে দেখবেন আপনার মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ অনেক বেশি সময় ধরে থাকছে।
০২: অযথা ভাইব্রেশন চালু রাখা থেকে বিরত থাকুন।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে ফোনের ভাইব্রেশন সারাদিন চালু করে রেখে দেয়।
এটা মোটেও ঠিক নয়। ফোনের ভাইব্রেশন ফাংশন ব্যাটারির অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করে। তাই খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ফোনের ভাইব্রেশন মোড চালু রাখবেন না।
০৩: ফোন সঠিক নিয়মে চার্জ দেওয়া।
সঠিকভাবে মোবাইল চার্জ দেওয়ার নিয়ম অনেকেই জানেনা। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা মোবাইল ফোন চার্জে রেখে ঘুমায়।
এতে ফোনের ব্যাটারির চার্জ ১০০ ভাগ পূর্ণ হওয়ার পরও ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইলের চার্জার এর সাথে মোবাইল সংযুক্ত থাকে। এভাবে ফোন ঘন্টার পর ঘন্টা চার্জে রাখা মোটেও ঠিক নয়।
কারণ সারা রাত ফোন চার্জের ফলে ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হয়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
তাছাড়াও আপাতদৃষ্টিতে ফোনের কোনো ক্ষতি না হলেও ফোনের ব্যাটারির চার্জ ধারণ ক্ষমতা ক্রমশ কমে যেতে থাকবে।
আপনি চাইলে মোবাইল চার্জ করার সঠিক নিয়ম জেনে নিতে পারেন।
০৪: ওয়াইফাই বা ডাটা কানেকশন বন্ধ করে রাখা।
আমারা আমাদের স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চালাতে ওয়াইফাই অথবা ডাটা ব্যবহার করি। অনেক সময় আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার না করলেও আর আমাদের ফোনের ডাটা বা ওয়াইফাই আর বন্ধ করি।
যেমন: আমাদের মধ্যে অনেকেই ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বেও তা বন্ধ করে রাখিনা।
মোবাইলের চার্জ দীর্ঘসময় পর্যন্ত ধরে রাখতে আমাদের উচিৎ প্রয়োজন ছাড়া ডাটা বা ওয়াইফাই সংযোগ বন্ধ করে রাখা। বিশেষ করে, কাজে এবং ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে।
০৫: ব্যাটারি সেভার চালু রাখুন।
মোবাইলের চার্জ বেশি সময় ধরে রাখতে ব্যাটারি সেভার ব্যবহার করতে পারেন। বর্তমানে বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই ব্যাটারি সেভার অপশনটি রয়েছে।
তবে আপনি যদি আপনার ফোনে খোজে না পান, তাহলে চাইলে ব্যাটারি সেভার অ্যাপ ব্যবহার করেও এই সেবা পেতে পারেন।
০৬: ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপস বন্ধ রাখা।
আমাদের ফোনে কিছু অ্যাপ থাকে যেগুলো আমরা আমাদের ফোন ব্যবহার না করলেও সেসকল অ্যাপ বা ফাংশন স্বয়সক্রিয়ভাবে চলতে থাকে।
আপনি চাইলে এসব অ্যাপগুলোর মধ্যে যেসকল অ্যাপ খুব বেশি জরুরি নয় সেগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড অপশন বন্ধ করে রাখতে পারেন।
আর এর জন্য আপনাকে আপনার ফোনের সেটিংস থেকে ব্যাটারি নামের অপশনে গিয়ে ঐসকল অ্যাপস দেখে নিতে পারেন।
তারপর সেখান থেকে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে চলা বন্ধ করে দিন।
০৭: অ্যানিমেটেড থিম এবং লাইভ ওয়ালপেপার ব্যবহার না করা।
আমরা অনেক সময় আমাদের ফোনের সৌন্দর্যের জন্য অ্যানিমেটেড থিম এবং লাইভ ওয়ালপেপার ব্যবহার করি।
এর ফলে আমাদের ফোনে অধিক পরিমানে ব্যাটারির চার্জ খরচ হয়। দ্রুত মোবাইলের চার্জ শেষ হয়।
তাই ফোনের চার্জ বাঁচাতে এসব অ্যানিমেটেড থিম এবং লাইভ ওয়ালপেপার ব্যবহার না করাই ভালো।
০৮: লোকেশনসহ অন্যান্য ফাংশন বন্ধ করে রাখা।
আমরা আমাদের ফোনে কখনো কখনো প্রয়োজনে জিপিএস, লোকেশন ট্র্যাকার, ব্লুটুথ, হটস্পট, ডাটা কানেকশন, ওয়াইফাই ইত্যাদি ফাংশন চালু করি।
তবে প্রয়োজন শেষ হলে এসব বন্ধ করতে ভুলে যাই। আর এসব ফাংশন আমাদের ফোনের ব্যাটারির অতিরিক্ত চার্জ খরচ করে। তাই আমাদের উচিৎ প্রয়োজন শেষ হলে এসব অপশন বন্ধ করে রাখা।
০৯: ডার্ক মোড বা কালো থিম ব্যবহার।
আপনি চাইলে আপনার মোবাইলে ব্ল্যাক মোড বা কালো থিম সেট করে ব্যবহার করতে পারেন। অথবা কালো ওয়ালপেপারও ব্যবহার করতে পারেন।
তাছাড়া আমারা আমাদের প্রাত্যহিক দিনে যেসকল অ্যাপ্স ব্যবহার করি তাতে যদি ডার্ক মোডে ব্যবহারের অপশন থাকে তাহলে সেগুলো ডার্ক মোডে ব্যবহার করুন।
যেমন: ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম ডার্ক মোড করে ব্যবহার করা যায়।
১০: এয়ারপ্লেন মোড চালু করতে পারেন।
আপনার স্মার্টফোনটি যদি এয়ারপ্লেন মোডে রাখা হয় তাহলে সব ধরনের ওয়ারলেস ফিচার বন্ধ হয়ে যাবে।
এতে করে চার্জ কম খরচ হবে। আর ফোনের এয়ারপ্লেন মোড যখন খুশি চালু করা যায় আবার যখন খুশি বন্ধ করা যায়।
১১: অটো আপডেট ব্যবস্থা বন্ধ করে রাখুন।
আপনার স্মার্টফোনের অ্যাপের স্বয়ংক্রিয় হালনাগাদ বা অটো আপডেট ব্যবস্থা বন্ধ করে রাখুন।
কারণ অটো আপডেট ব্যবস্থা চালু থাকলে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় অ্যাপসও নিজে থেকেই আপডেট হয়ে আপনার ফোনের ডেটা ও ব্যাটারির চার্জ খরচ করবে।
১২: পুশ নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন।
ফেসবুক, ইমেইল, টুইটারসহ আরও বিভিন্ন অ্যাপ্সে ‘পুশ নোটিফিকেশন’ নামের একটি সুবিধা থাকে। যেসকল অ্যাপস ব্যবহার খুব বেশি প্রয়োজন না সেসকল অ্যাপস থেকে এই আপশন বন্ধ রাখুন।
১৩: আসল ব্যাটারি ব্যবহার করুন।
আপনার ফোনের ব্যাটারি যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে চেষ্টা করুন আপনার ফোনের আসল ব্যাটারি ব্যবহার করতে। যদি দাম বেশি হয় তাও।
কেউ কেউ নিম্নমানের ব্যাটারি ব্যবহার করার পর, “মোবাইলে চার্জ থাকে না কেন? মোবাইলের চার্জ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় কেন? মোবাইল চার্জ হতে অনেক সময় লাগে কেন?” ইত্যাদি অভিযোগ তুলে।
ভালো ব্যাটারি ব্যবহার করলে আপনার ফোন ভালো থাকবে আর ফোনের চার্জও অনেক সময় ব্যাকআপ দিবে।
১৪: লক স্ক্রিন নোটিফিকেশন চালু।
স্বাভাবিক ভাবে ফোন লক থাকা অবস্থায় কোনো মেসেজ আসলে কিংবা অন্য কোনো অ্যাপ থেকে নোটিফিকেশন আসলে তা চেক করতে লক খুলতে হয়।
বারবার লক খুলে চেক করতে ফোনের ব্যাটারির চার্জ বেশি খবচ হয়।
আর আপনি যদি ফোনের লক স্ক্রিন নোটিফিকেশন অপশনটি চালু করে রাখেন, তাহলে এসব নোটিফিকেশন দেখতে বারাবার ফোনের লক খুলার প্রয়োজন নেই।
তাই ফোনের ব্যাটারি সাশ্রয় করতে লক স্ক্রিন নোটিফিকেশন অপশন চালু করে রাখুন।
১৫: অতিরিক্ত গেম খেলা এবং ভিডিও দেখা থেকে বিরত থাকুন।
মোবাইলে গেমস খেলতে কে না ভালোবাসা! আর বর্তমান ছেলে-মেয়েদের মধ্যে অনেকেই তো পাবজি, ফ্রি ফায়ার এর মতো গেমে আসক্তি হয়ে পরেছে।
আপনি যদি আপনার মোবাইলের চার্জ দীর্ঘসময় ধরে রাখার চিন্তা করেন তাহলে মোবাইলে গেমস খেলা কমিয়ে দিন।
আমরা সবাই কম-বেশি মোবাইলে ভিডিও দেখে অভ্যস্ত।
তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, লাইকির মতো অ্যাপগুলোতে প্রবেশ করলে ঘন্টার পর ঘন্টা ভিডিও দেখে সময় পার করে দেয়।
ফোনের চার্জ দীর্ঘসময় ধরে রাখতে হলে মাত্রাতিরিক্ত ভিডিও দেখা বন্ধ করতে হবে। আর ভিডিও অবশ্যই নরমাল কোয়ালিটিতে দেখতে হবে।
১৬: অটো লক।
স্মার্টফোনে অটোলক সেট করতে ১৫ সেকেন্ড অথবা ৩০ সেকেন্ড বাছাই করুন। যাতে আপনি ফোন ব্যবহার না করলে ফোনটির ডিসপ্লে আলো বন্ধ হয়ে তারাতাড়ি স্লিপ মোডে চলে যায়।
আপনার ফোনের ডিসপ্লে যত বেশি সময় অন থাকবে তত বেশি চার্জ ফুরাবে। (মোবাইলে চার্জ বেশি থাকার উপায়)