বরই ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

বরই ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন।

সারাদিন রোজা পালনের পর ইফতারে আঙুর ও খেজুরের বদলে বরই রাখতে পারেন। টক—মিষ্টির এ ফলটি সবার কাছেই প্রিয়। বর্তমানে বাজারে আঙুর ও খেজুরের দাম আকাশচুম্বী। 

তাই এসবের বিকল্পে কেবল বরই হতে পারে ইফতার আইটেমের সঙ্গী। সারাদিনের ক্লান্তি লাঘবে বরই হতে পারে কার্যকরী সমাধান। একাধিক খাদ্যগুণ সম্পন্ন বরই অনেকেই ফল হিসেবে খেলেও এর তৈরি আচার খেতে অনেকেই পছন্দ করেন।

বরই ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন।

পুষ্টি ও গুণগত মানের দিকে বরই ফলটি অন্যতম। এতে আছে ক্যালোরি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার। রয়েছে ভিটামিন সি, এ, বি২, ফাইটোকেমিক্যাল, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন ও জিঙ্কের মতো খনিজ। আর এসব খনিজের উপস্থিতি থাকায় হার্টের সুস্থ্যতায় বেশ উপকারী বটে।

আকারে ছোট হলেও এ ফলটি পেটের সমস্যা সমাধানে রাখে কার্যকরী ভূমিকা। স্বাস্থ্যগুণ থাকায় এটি অনিদ্রা সমস্যার সমাধান করতে পারে।

যে কারণে বরই খাওয়া আয়োজন।

০১. বরই ফাইবার ও কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ। তাই ও হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

০২. বীজসহ ছোট এই ফলে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, পলিস্যাকারাইড, ফাইটোকেমিক্যাল, ফ্ল্যাভোনয়েড ও স্যাপোনিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা কিনা স্নায়ুকে শান্ত করে এবং অনিদ্রা দূর করে। সুনিদ্রা ফিরে পেতে আদিকাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে আয়ুর্বেদ ও চাইনিজ ভেষজ চিকিৎসার ক্ষেত্রে বরই কার্যকরি ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

০৩. উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা অনায়ানে বরই খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন।

‘ফার্মাসিউটিক্যালস বায়োজি’র প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রতীয়মান হয় যে, বরইয়ের পুষ্টি উপাদানসমূহ রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

এতে আছে ক্লোরোজেনিক এসিড যা কিনা রক্তের শর্করাে ভারসাম্য বজায় রাখে ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে অংশ নেয়। বরইতে ফাইবার উপাদান থাকায় রক্তের সুগার বাড়তে দেয় না।

০৪. বরই রক্ত পরিষ্কারে বিরাট ভূমিকা রাখে। শুকনো বরইয়ে থাকে অ্যাল্কালয়েড, স্যাপোনিন ও ট্রাইটারপেনয়েড যা রক্ত পরিশুদ্ধ করে।

০৫. ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে ও কোমলতা ফিরিয়ে আনতে বরই কার্যকরি। এতে বয়সের ছাপ পড়ে না এবং ত্বক রাখে সতেজ।

০৬. ফ্যাট না থাকায় যারা বাড়তি ওজন নিয়ে ভুগছেন তারা বরই খেতে পারেন। কারণ বরই ওজন কমাতে সাহায্য করে। যা জার্নাল অব অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ফুড কেমিস্ট্রি’র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

০৭. টিউমার কোষ, ক্যানসার কোষ ও লিউকেমিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার সক্ষমতা রয়েছে বরইতে। ‘ফার্মাকগনোসি রিভিউ’—এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনটিই তুলে ধরা হয়েছে। 

এই ফলে বায়োঅ্যাক্টিভ উপাদান উপস্থিত থাকায় কোষকে রক্ষা করে। রয়েছে নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কিনা টিউমারের উপর সাইটোটক্সিক প্রভাব বিস্তার করে। এতে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।

০৮. খুদে এই ফলে ডায়েটেও রাখে কার্যকরী ভূমিকা। কেননা এতে পানি ও আঁশের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এবং কম ক্যালরিযুক্ত থাকায় ডায়েটেশিয়ানরা বরই খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

০৯. বিজ্ঞানীরা মনে করেন বরইতে পাওয়া স্যাপোনিন নামের ফাইটোনিউট্রিয়েন্টের উপাদান থাকায় মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে পারে। কিছু গবেষণাপত্রেও মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে বরই ফলের নির্যাসের ইতিবাচক ভূমিকা পাওয়া গেছে।

১০. পুষ্টিকর সমৃদ্ধ বরই সিজনাল জ্বর, সর্দি-কাশিও প্রতিরোধ করে এবং গলার বিভিন্ন ইনফেকশনজনিত রোগ দূর করে। বাড়ায় রুচি ও হজমশক্তি।

মনে রাখতে হবে, বরই আমাদের জন্য উপকারী ফল হলেও পাকা-বরই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের না খাওয়াটাই ভালো। 

কারণ শর্করার পরিমাণের ওপর খেয়াল রাখতে হবে। হিতে বিপরীত ক্ষতির কারণও হতে পারে। আবার কাঁচা বরই অধিক পরিমাণে খেলে পেট-ব্যথাসহ শ্বাস কষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন