স্বপ্নদোষ হয় কেন? (স্বপ্নদোষ হওয়ার কারণ)
এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া কঠিন। নির্দিষ্ট করে বলা যায় না ঠিক কোন কারণে স্বপ্নদোষ হয়।
স্বপ্নদোষ হওয়া শুরু হয় বয়ঃসন্ধিকালে, যখন পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরোন হরমোন তৈরি হওয়া শুরু হয়। এই হরমোনের প্রভাবেই পুরুষ, পুরুষালি আচরণ করে, নারী-পুরুষ একে অপরের প্রতি দৈহিক আকর্ষণ বোধ করে।
টেস্টোস্টেরোন হরমোন সিমেন (বীর্য) প্রডাকশনে সাহায্য করে। টেস্টোস্টেরোনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে গেলে পুরোনো বীর্য স্বপ্নদোষের মাধ্যমে বের হয়ে যায় এবং নতুন বীর্য তৈরি হয়।
দীর্ঘ সময় ধরে যৌন নিষ্ক্রিয়তা স্বপ্নদোষের আরেকটি সম্ভাব্য কারণ। যৌননিষ্ক্রিয়তা, টেস্টোস্টেরোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যার কারণে স্বপ্নদোষ হয়।
মাত্রাতিরিক্ত ক্লান্তি, টাইট পোশাক পরে ঘুমানো, দেরি করে ঘুমানো এবং দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা, সকালে ঘুম ভাঙার পরে আবার ঘুমানো, সব সময় সেক্স ফ্যান্টাসিতে বুঁদ হয়ে থাকা—এগুলোও স্বপ্নদোষের সম্ভাব্য কারণ।
স্বপ্নদোষ কতদিন পর পর হয়?
নির্দিষ্ট করে বলার উপায় নেই। কারও কারও এক সপ্তাহ পর পর, আবার কারও কারও তিন-চার সপ্তাহ পর পর স্বপ্নদোষ হয়।
স্বপ্নদোষ কি ক্ষতিকর?
এটি নিয়ে আমাদের সমাজে বেশ বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা ছড়িয়ে আছে। স্বপ্নদোষ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক একটা ব্যাপার। এটা শরীরের জন্য মোটেও ক্ষতিকর না।
আল্লাহ্ শুধু সেসব বিষয় হারাম করেছেন যেগুলো মানুষের জন্য ক্ষতিকর। যেমন ধরুন, মদ, গাঁজা। মানুষকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ্ এগুলোকে হারাম করেছেন।
স্বপ্নদোষ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক একটা ব্যাপার। এটাকে আল্লাহ্ হারাম করেননি; বরং এটাকে বানিয়েছেন সাবালকত্বের নিদর্শন।
কুরআনে বলা হয়েছে :
“আর তোমাদের সন্তানেরা বয়ঃপ্রাপ্ত হলে (স্বপ্নদোষের মাধ্যমে)...
(সূরা নুর; ২৪:৫৯)
আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“তিন ব্যক্তির আমলনামা হতে কলম গুটিয়ে নেয়া হয়েছে,
১) ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘুম থেকে জাগ্রত হবার আগ পর্যন্ত।
২) শিশুদের প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগ পর্যন্ত।
৩) পাগলের হুঁশ হবার আগ পর্যন্ত।"
একজন ঘুমন্ত ব্যক্তি নিজেও জানে না ঘুমের ঘোরে সে কী করছে। তখন তার আমল লিপিবদ্ধ করা হয় না। স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে ঘুমন্ত অবস্থায় এবং এটাকেও আমলনামায় লিপিবদ্ধ করা হয় না।
স্বপ্নদোষ যদি ক্ষতিকরই হতো, তাহলে আল্লাহ্ অবশ্যই একে হারাম করতেন এবং স্বপ্নদোষের কারণে শাস্তির ব্যবস্থা করতেন। তিনি এর কোনোটাই করেননি।
কাজেই আমরা মুসলিমরা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে নিতে পারি স্বপ্নদোষের কোনো ক্ষতিকর দিক নেই। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুসারেও স্বপ্নদোষ ক্ষতিকর নয়।
পানি পান করা হালাল। তবে আপনি যদি গ্লাসের পর গ্লাস পানি পান করতেই থাকেন, করতেই থাকেন, তাহলে তা অবশ্যই ভালো না। অতিরিক্ত স্বপ্নদোষও ভালো না।
যদি আপনার দীর্ঘদিন ঘন ঘন স্বপ্নদোষ হয়, মনে করুন প্রতিদিন বা দু একদিন পর পর স্বপ্নদোষ হয়, তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। আই রিপিট, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। হাতুড়ে ডাক্তার না।
স্বপ্নদোষ নিয়ে শয়তান আপনাকে কুমন্ত্রণা দিতে এলে একদমই শুনবেন না তার কথা। স্বপ্নদোষ হচ্ছে হোক, কিন্তু স্বপ্নদোষ থেকে বাঁচার জন্য ভুলেও হস্তমৈথুন করবেন না।
উৎস:
বই: মুক্ত বাতাসের খোঁজে।
লেখক: লস্ট মডেস্টি।