শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি।

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি।

বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতিগুলো নিচে থেকে জেনে নিন-

❂ শিশুকে সঠিক পদ্ধতি এবং ভঙ্গিতে দুধ খাওয়ানো একান্ত প্রয়োজন। এ সময় ভঙ্গি ঠিকমত না হলে মায়ের অসুবিধা ও অস্বস্তি হতে পারে। সেজন্য মায়ের উচিত দুধ খাওয়ানোর সময় আরামদায়ক ভাবে বসে নেয়া।

বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি

ঘরে সোফা-কুশন না-ই থাকুক চৌকি বা কোনো ইজি চেয়ারে বসেও মা দুধ খাওয়াতে পারেন। খাওয়াতে পারেন কাত হয়ে শুয়েও। যে কোনো ভঙ্গিতে খাওয়ান না কেন, লক্ষ্য রাখতে হবে শিশুর ঘাড় যেন গুঁজে না থাকে। শিশুর দৃষ্টি থাকতে হবে মায়ের মুখের দিকে। 

শিশুকে পুরোপুরি ঘুরিয়ে নিতে হবে যেন স্তনের বোঁটার দিকে তার মুখ থাকে। মাথাটি থাকবে মায়ের হাতের ভাজের উপর। এর সঙ্গে প্রয়োজন মায়ের শরীরের ঘনিষ্ঠ ছোঁয়া।


 শিশুর শরীর ও মায়ের বুকের মাঝে ফাঁক না থাকে এবং শরীর যেন মায়ের বুকের সঙ্গে মিশে থাকে। খাওয়ার সময় ঘনিষ্ঠ ছোঁয়া পেতে থাকলে মা শিশু দু-জনেরই অত্যন্ত আরাম ও আনন্দ হয়। শিশু নিজেকে খুব নিরাপদ মনে করতে থাকে। এর ফলে তার সোমাটিক ডেভেলপমেন্ট খুব ভালো হয়।

 দুধ খাওয়ানোর সময় সিগারেট ধরার ভঙ্গি বা কাঁচি ধরার ভঙ্গিতে বোঁটা এবং বোঁটার চারপাশের বাদামী বা কালচে রঙের অংশ (এরিওলা)-কে টিপে ধরা উচিত নয়, তাতে দুধের উৎপত্তি ও নিজস্ব প্রবাহ ব্যাহত হয়।

 বুকের নিচে অন্য চারটি আঙ্গুল দিয়ে একটু ঠেলে তুলে বুড়ো আঙ্গুলটি এরিওলার অনেক দুরে চেপে ধরে পুরো স্তনটিকে সামান্য একটু তুলে দুধ খাওয়ানো ঠিক।

 প্রথমে শিশুর উপরের ঠোঁটে স্তনের বোঁটাটি দু-একবার লাগাতে হবে; তাতে শিশু বড় করে হা করবে। তখন শিশুর মুখে বোঁটা ভরে দিতে হবে। শিশুর নিচের ঠোঁট এরিওলাকে ঢেকে ফেলবে এবং উপরের ঠোঁট থাকবে এরিওলার শেষ প্রান্তে যাতে বোঁটাটি মুখের ভেতরে উপরের তালু স্পর্শ করে।

স্তনটি একটু তুলে না নিলে ভারের জন্য স্তনবৃন্তটি শিশুর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে। তখন শিশু অস্বস্তিতে বোঁটা ছেড়ে দিতে চায়।

 শিশুর মাথা ও মুখটা শুধু বুকের দিকে টেনে আনা অনুচিত। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শিশুর পুরো শরীরটাই মায়ের দিকে এগিয়ে আসে। যে কোনো ভঙ্গিতেই খাওয়ানো হোক না কেন শিশুর মেরুদণ্ডটি যেন সোজা থাকে এবং স্তনটি মুখ থেকে এদিক ওদিক সরে না যায় ।

 মায়ের উচিত শিশুকে প্রথমে এক স্তন থেকে পুরোপুরি দুধ খাওয়ানো। এতে দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে না হলে অন্য স্তন থেকে একই সেশনে বা আসনে শিশুকে খাওয়াতে হবে।

 দুধ খাওয়াতে শুরু করার পর মায়ের দুধের প্রথমভাগে (যাকে বলা হয় ফোর মিল্ক) থাকে পানি এবং প্রোটিন (আমিষ), কিছুক্ষণ খাওয়ার পর দুধে আসে স্নেহ পদার্থ।

এটি যেহেতু শিশুকে তৃপ্ত করে সবচেয়ে বেশি সেহেতু এটা না পাওয়া পর্যন্ত শিশু দুধ খেতে থাকে। এটি পেয়ে তৃপ্ত হলেই শিশু দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়। অনেক সময় দেখা যায়, মায়ের দুধে এ স্নেহ পদার্থ আসতে অনেক সময় নেয় বলে অনেক্ষণ ধরে একই দিকে খেতে থাকে।

 সে ক্ষেত্রে একদিকে দুধ খাওয়া শেষ করার পর অন্যদিকে ফিরিয়ে তাকে দুধ খাওয়াতে চেষ্টা করতে হবে। তখন যদি সে না চায় তাহলে আর না খাওয়ানোই ভাল।

 তবে মনে রাখতে হবে, পরের বার খাওয়ানোর সময় আবার অন্য দিকের স্তন দিয়ে খাওয়ানো শুরু করতে হবে।

উৎস-

বই: একান্ত নির্জনে: গোপন আলাপ

লেখক: মুফতী আল্লামা হাকীম আশরাফ আমরহী।

Post a Comment

Previous Post Next Post