প্রসব বেদনার লক্ষণ ও সন্তান প্রসব।

প্রসব বেদনার লক্ষণ ও সন্তান প্রসব।

গৰ্ভস্থ সন্তান ভূমিষ্ট হবার পনের-বিশদিন পূর্ব হতে গর্ভবতীর জরায়ু নীচের দিকে কিছুটা নেমে আসে। ঐ সময় সন্তানের মাথা যোনী মুখের দিকে নেমে আসে। 

সেজন্য ঐ সময় প্রসুতী দেহে কিছুটা আরাম অনুভব করে থাকে। ধীরে ধীরে গর্ভবতীর জরায়ুর মুখ প্রশস্ত হতে থাকে এবং প্রসুতীর শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট কম হয়ে থাকে।

প্রসব বেদনার পূর্ব লক্ষণ।

সন্তান ভূমিষ্ট হবার পাঁচ সাত দিন পূর্ব হতে গর্ভবতীর পেট কিছুটা শক্ত হচ্ছে অনুভব করে থাকে এবং মাঝে মাঝে কিছুটা ফুলে উঠে। এতে কোনো প্রকার যন্ত্রণা বা কষ্ট হয় না। কিন্তু এ সময় বুঝতে হবে যে, অতি শিল্পী প্রসব বেদনা আরম্ভ হবে।

প্রসবের কিছুদিন আগের লক্ষণ

এ সময় জরায়ু আপন ইচ্ছায় আল্লাহ্ তাআলার অসীম কুদরতে সঙ্কুচিত হতে থাকে। অর্থাৎ ভ্রুণের গায় চাপ দিতে থাকে, যাতে সে জরায়ু হতে বের হয়ে যায়। এই সংকোচন ক্রিয়া প্রথমে আস্তে আস্তে শুরু হয়ে থাকে এবং তাতে যে ব্যাথা অনুভূত হয় তাকেই প্রসব-বেদনা বলা হয়ে থাকে।

ক্রমান্বয়ে জরায়ুর সঙ্কোচন ক্রিয়া বাড়তে থাকে এবং প্রসব বেদনা তীব্র হতে তীব্রতর হতে থাকে। প্রসব বেদনা আরম্ভকাল হতে প্রসূতীর যোনীনালী হতে এক প্রকার তরল পদার্থ স্রাব হতে থাকে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রসবের পূর্বে গর্ভের সন্তান নড়াচড়া করার কারণে প্রসূতীর বেদনা তীব্র আকার ধারণ করে থাকে। যার ফলে প্রসূতীর শরীর বিবর্ণ হয়ে যায়। এমনকি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

তাতে চিন্তিত হবার বা ভয়ের কোনো কারণ নেই। সাধারণ নিয়মে প্রসব বেদনা রাত্রিকালেই আরম্ভ হয়ে থাকে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও হয়ে থাকে।

প্রসব বেদনা কেমন হয়?

মূল প্রসব বেদনার লক্ষণ হচ্ছে এই যে, প্রসূতীর কোমরের দুই পাশ হতে এক প্রকার কনকনে বেদনা শুরু হয়ে আস্তে আস্তে পুরা তলপেটে ছড়িয়ে পড়ে এবং কিছু সময় থেকে বেদনা লোপ পেয়ে যায়।

কিছু সময় বিরতি থেকে পুনঃ পুনঃ কোমরের দুই পাশ হতে বেদনা শুরু হয়ে ক্রমান্বয়ে বেদনার তীব্রতা বাড়তে থাকে। বেদনা বিরতির সময় প্রসূতী কিছুটা স্বস্তি বোধ করে থাকে।

কিন্তু এটা সাময়িক ব্যাপার মাত্র। এভাবে বার বার বেদনা অনুভূত হয়ে শেষ পর্যন্ত তা তীব্র আকার ধারণ করে ঘন ঘন বেদনা হতে থাকে। জরায়ু এই বার বার সংকোচনের কারণে বার বার বেদনা অনুভূত হয়ে থাকে।

বাচ্চা প্রসব হয় কি করে?

আর আস্তে আস্তে জরায়ুর মুখ সন্তান বের হবার জন্য বড় হতে থাকে। মহান আল্লাহ্ তাআলার কুদরতে জরায়ুর এই প্রকারের পুনঃ পুনঃ সঙ্কুচিত হবার কারণে আপনা আপনি ভ্রুণ জরায়ুর প্রশস্ত মুখ দিয়ে বের হয়ে যোনীনালীর ভিতর দিয়ে বাহিরের দিকে এগিয়ে আসে এবং এভাবে সন্তান ভূমিষ্ট হয়ে থাকে।

গর্ভবতীর প্রথম সন্তান ভূমিষ্ট হবার সময় প্রসব বেদনা ডাক্তারী মতে বিশ হতে চব্বিশ ঘন্টা স্থায়ী হয়ে থাকে। আবার যাদের কয়েকটি সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছে, তাদের প্রসব বেদনা আট হতে দশ ঘন্টা বা তার চেয়েও কম সময় স্থায়ী হয়ে থাকে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর বিপরীতও দেখা যায়। কখনো দুই হতে তিন দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। কিছু সময় পর্যন্ত প্রসব বেদনা হবার পরে আল্লাহ্ তাআলার ইচ্ছায় সন্তান ভূমিষ্ট হবার অল্প সময় পূর্বে জরায়ুর ভিতরে যে থলিতে সন্তান থাকে সেই থলিটা ফেটে যায় এবং থলির ভিতরের তরল পদার্থ যোনীনালী দিয়ে গড়িয়ে বাহিরে আসে।

আমাদের দেশে প্রচলিত ভাষায় তাকে পানি ভাঙ্গা বা পানি মুচি ভাঙ্গা বলা হয়। পানি মুচি ভাঙ্গার কারণে গর্ভস্থ সন্তানের মাথা ও গলা জরায়ু হতে যোনীপথে এসে থাকে। এর পরে সন্তানের কাধ দুটি জরায়ুর মুখ দিয়ে যোনী পথে এসে থাকে।

শেষ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে সন্তানের বাকী অংশ যোনী পথ দিয়ে বাহির হয়ে পড়ে। সন্তান ভূমিষ্ট হবার সঙ্গে সঙ্গে প্রসূতী এক ধরণের অমিয় প্রশান্তি অনুভব করে থাকে।

উৎস-

বই: নারী ও পুরুষের একান্ত গোপনীয় কথা বা পুশিদাহ রাজ।

লেখক: মুফতী হাকীম আল্লামা আশরাফ আমরহী।

Post a Comment

Previous Post Next Post