বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম।

প্রশ্ন: বিতরের নামায আমরা ছোটবেলা থেকে পড়ে আসছি, দ্বিতীয় রাকআতে বসি এবং তৃতীয় রাকআতে আরেকটা তাকবীর দিই। কিন্তু এখন শুনছি ওই বৈঠকটা নাকি নাই!

এখন আমি এক বছর যাবত এই আমলটা করছি। আমার মনের ভেতর অনেক সন্দেহ। আসলে সঠিক কোনটা?

বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ): দুঃখজনক হলেও সত্য, জ্ঞান অনেক সময় আমাদেরকে বিতর্কে নিপতিত করে। রাসূল সা. প্রায় তেরো প্রকারে বিতর পড়তেন।

তাহাজ্জুদসহ বিতর। কখনো একবারে আট রাকআত পড়ে নয় রাকআতে সালাম ফেরাতেন। মোটেও বসতেন না।

কখনো একবারে সাত রাকআত পড়তেন। কখনো একবারে পাঁচ রাকআত পড়তেন। তিনি তিন রাকআত বিতির পড়তে নিষেধ করেছেন । তিনি বলেছেন:

لا ثوتروا بثلاث، أوتروا بخمس، أو بسبع، ولا تشبهوا بصلاة المغرب

"তোমরা মাগরিবের মতো তিন রাকআত বিতর পড়ো না। পাঁচ বা সাত রাকআত পড়ো।"

এই হাদীসের অর্থ এই নয় যে, তিন রাকআত পড়ব, মাঝখানে বসব না, এতেই হয়ে যাবে। তিনি নিশ্চিত বলেছেন পাঁচ বা সাত পড়ো।

এর অর্থ হল বিতর তোমরা একটু বেশি করে পড়ো। তবে তিনি নিজে তিন রাকআত পড়েছেন। সাহাবিরা পড়েছেন। এজন্য বিতরের আগে কিছু পড়লে এই হাদীস অনুযায়ী কর্ম করা হবে।

বিতর যখন আমরা তিন রাকআত পড়ব, তিনভাবে পড়তে পারি।

প্রথম পদ্ধতি হলো দুই রাকআত পড়ে সালাম ফিরিয়ে আবার উঠে দাঁড়িয়ে নতুন করে আরেক রাকআতের নিয়ত করে এরপরে সূরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস পড়ে আল্লাহু আকবার বলে হাত মুনাজাতের মতো তুলে অথবা হাত বেঁধে কুনুত পড়ে এরপরে রুকু করব।

দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো, আমরা যেভাবে বাংলাদেশে সচারচর পড়ে থাকি। এটা হাদীসে মোটামুটি বোঝা যায়। সাহাবিদের কর্ম দ্বারা প্রমাণিত।

এভাবে পড়লে হবে না, অবৈধ, নিষিদ্ধ এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। বরং এটা বললে একটা বিশুদ্ধ পদ্ধতিকে অস্বীকার করা হয়।

তৃতীয় পদ্ধতি হলো, দুই রাকআত পড়ে মোটেও না বসে সরাসরি উঠে দাঁড়িয়ে তিন রাকআত একবারে পড়ে একইভাবে কুনুত পড়ে এরপরে রুকু করে সালাত শেষ করা। এটাও সাহাবিরা আমল করেছেন। 

এবং তাবেয়িনদের আমল আছে। এটাও প্রমাণিত। কাজেই আমার মনে হয় এই ধরনের বিতর্ক- এটা হবেই না, ওটা হবেই না, এক রাকআত বিতির পড়লে হলই না, তিন রাকাত পড়লে হলোই না এই বিতর্ক ঠিক না।

হাদীস যতটুকু প্রশস্ত আমরা নিজেদেরকে অতটুকু প্রশস্ত করে নিই। নফল, সুন্নাত, মুস্তাহাব, ওয়াজিব ইবাদতগুলো রাসূল সা. নিজেই বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে পড়েছেন। যেন আমাদের ভেতরে ইবাদতের একাগ্রতা আসে।

সবসময় এক রকম পড়লে কম্পিউটার অটোরুটের মতো হয়ে যায়। 'আল্লাহু আকবার' বলে শুরু করি, সালাম ফিরিয়ে দিই- হুশ থাকে না ।

Post a Comment

Previous Post Next Post