প্রশ্ন: মাযহাব সম্পর্কে জানতে চাই। মাযহাব মানাটা ফরয, ওয়াজিব নাকি সুন্নাত? যদি মাযহাবই মানতে হয় তাহলে মুহাম্মাদ (সা.) যেভাবে নামায পড়েছেন ওই নামাযটা কেন ফলো করি না? মুহাম্মাদ (সা.) কোন মাযহাবে ছিলেন?
ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ): আসলে মাযহাব নিয়ে আমরা অকারণে তিলকে তাল বানিয়ে ফেলেছি। মাযহাব মানে হলো- মত। দীন বোঝার জন্য কোনো না কোনো একজন মানুষের মতামতের উপর নির্ভর করতে হয়।
যারা মাযহাব মানার কথা বলছেন তারা কেউই আসলে মাযহাব মানেন না। ইমাম আবূ হানীফা (রাহ.) এর কথা বলি। আমাদের সমাজের হানাফিরা কিন্তু এক নয়। এক হানাফি আরেক হানাফিকে কাফের বলছে।
আমরা সবাই যদি হানাফি হতাম তাহলে কেন একজন আরেক জনকে কাফের বলছি! তার অর্থ হলো আমরা আসলে কোনো না কোনো একজন আলেমের মত মানি। আমরা অনেক সময় মাযহাবকে ব্যবহার করি।
আমরা নিজেকে হানাফি বলি। আবার নিজেরাই আবূ হানীফার অনেক মতের বিরোধিতা করি। এ জন্য মূল কথা হলো, আমাদের দীন হল কুরআন এবং সুন্নাহ মেনে চলা।
কুরআন সুন্নাহ মানার জন্য সাধারণ মানুষকে অবশ্যই কোনো না কোনো প্রাজ্ঞ আলেমের উপর নির্ভর করতে হবে। এমনকি আমরা যারা হাদীস মানতে চাই তারাও তো হাদীস বুঝি না।
এই হাদীসটা সহীহ আমাকে এই কথাটা বলতে গেলে বলতে হয় এটা শায়খ আলবানি বলেছেন, নয়তো গোনাহগার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর বলেছেন। অথবা অন্য কেউ বলেছে।
তার মানে আপনি আমার মাযহাব অনুসারে হাদীসটাকে সহীহ বললেন। তাই দীন বোঝার জন্য মাযহাবের সহায়তা নেয়া। মাযহাব একটা উপকরণ। এটাকে দীন মনে করার কোনো সুযোগ নেই।
আবার কাউকেই মানব না তাহলে আমরা কুরআন সুন্নাহ বুঝব কী করে! এটা নিয়ে প্রান্তিকতা আমরা পরিহার করি। আরেকটা ব্যাপার আপনি জিজ্ঞেস করেছেন, আমরা কেন রাসূল সা.এর মতো সালাত আদায় করছি না?
এটা নিয়েও আমরা প্রান্তিকতায় চলে গিয়েছি। হানাফি মাযহাবে যে সালাত আদায় করা হয়, আমরা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রাসূল (সা.)-এর আমলের বিপরীত কোন আমলটা করি?
শুধু ৭/৮ বিষয়ে মতভেদ আছে। এক্ষেত্রেও উভয়পক্ষের হাদীস রয়েছে। হয়তো কেউ একটাকে জোরালো বলেছেন, কেউ অন্যটাকে জোরালো বলেছেন।
কাজেই হানাফিরা অথবা শাফেয়িরা কিংবা আহলে হাদীসরা বা হাম্বলিরা রাসূল (সা.) এর সালাত আদায় করছেন না- এটা ঠিক কথা নয়। সালাতের ভেতরে কয়েকশ বা হাজারখানেক সুন্নাত আমল আছে।
এর ভেতরে মতভেদ মাত্র ৭/৮ জায়গায়। এই মতভেদের ক্ষেত্রেও একাধিক হাদীস রয়েছে। কাজেই আমরা প্রান্তিক না হই। আমাদের হৃদয়কে উদার করি। অন্তত হাদীস যতগুলো সহীহ আছে সবগুলোকে স্বীকৃতি দিই।