পবিত্র কুরআনে স্ত্রীদের কেন শস্যক্ষেত্র বলা হয়েছে?

প্রশ্নকর্তা: আমার প্রশ্ন ডা. জাকির নায়েককে, তাসলিমা নাসরিন একটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন তা হলো, "তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্র। তোমাদের যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর।" এ বিষয়ে আপনার কোন মতামত আছে কি? থাকলে কী মন্তব্য করবেন? ধন্যবাদ।

পবিত্র কুরআনে স্ত্রীদের কেন শস্যক্ষেত্র বলা হয়েছে?

ডা. জাকির নায়েকের উত্তর: হ্যাঁ, আমিও একমত যে, তাসলিমা নাসরিন তার বিতর্কিত লেখায় উল্লেখ করেছে যে, কুরআন বলছে, স্বামীদের জন্য স্ত্রীগণ হলো শস্যক্ষেত্র "For husbands women are farmland" কুরআন Farmland বলেনি, কুরআন বলেছে "Tilt' যদিও Farmland এবং Tilt এর অর্থ প্রায় কাছাকাছি।

তথাপি তাসলিমা কুরআনের সঠিক উদ্ধৃতি দেয়নি, সে ভুল উদ্ধৃতি দিয়েছে। তাসলিমা কুরআনের ভুল উদ্ধৃতি দিয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে Tilt কিন্তু সে বলেছে Farmland. সে কুরআনের কথা বলেছে ঠিকই কিন্তু কোন রেফারেন্স দেয়নি।

সে বলছে “For the husband the wife is the farmland, you can approach them as you like" অর্থাৎ স্বামীদের জন্য স্ত্রী হলো শস্যক্ষেত্র তোমরা যখন ইচ্ছা তাদের ব্যবহার করতে পার।

সে আরো বলেছে “The women are considered as properties" অর্থাৎ নারীকে সম্পদ (Properties) হিসেবে বিবেচনা করা হয় সে কুরআনে যে উদ্ধৃতি দিয়েছে তা সূরা আলে ইমরানের একটি। যদিও সে রেফারেন্স করেনি।

এখানেও সে কুরআনের ভুল উদ্ধৃতি দিয়েছে। সে কুরআন থেকে পূর্ণাঙ্গ উদ্ধৃতি দেয়নি। আংশিক উল্লেখ করেছে। কুরআনের সূরা আলে ইমরান-এর ১৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে তা হলো,

زين للناس حب الشهوت من النساء والبنين والقناطير المقنطرة من الذهب والفضة والخيل المسومة والأنعام والحرث

ذلك مناع الحيوة الدنيا والله عنده حسن الماب .

অর্থ: “মানবকূলের নিকট প্রিয় করা হয়েছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত স্বণ-রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত খামারের মত আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী, এ সবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ্যবস্তু, আল্লাহর নৈকট্যই হলো উত্তম আশ্রয়।"

কোরআন বলেছে নারী, সন্তান-সন্ততি, স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত গুণাবলীসম্পন্ন অশ্ব এবং শস্যক্ষেত্রসমূহের মালিক হলে কে না গর্বিত হয়? আপনিই বলেন ভালো স্তরের জন্য কোন ব্যক্তি আনন্দিত, গর্বিত হয় না, কুরআন নারীর কথা বলেছে, যেখানে স্ত্রী ও মেয়েকে বুঝায়।

বলেন কোন পিতা তার সুপুত্রের জন্য গর্বিত হয় না? কোন স্বামী তার উত্তম স্ত্রীর জন্য গর্বিত হয় না? একইভাবে, কোন স্ত্রী তার উত্তম স্বামীর জন্য গর্বিত হয় না?

এসব যদি ভালো হয় তাহলে অবশ্যই তার জন্য গর্ববোধ করাটা স্বাভাবিক। তাহলে কোরআন কেন তাদেরকে সম্পদ (Properties) হিসেবে গণ্য করবে না।

আপনার প্রথম প্রশ্নের বিষয়ে বলছি, কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে "তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্র।" সে কুরআন থেকে উদ্ধৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বলেনি যে, সে কুরআনের কোথায় এ আয়াত পেয়েছে পুরো কুরআনের কোথায় একথা বলা হয়েছে, যেখানে স্ত্রীদেরকে পুরুষদের শস্যক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করেছে।

সে (তাসলিমা) কুরআনের সূরা আল বাকারা এর ২২৩ নং আয়াতকে নির্দেশ করেছে। প্রকৃত অর্থ এবং উত্তর জানার জন্য আপনাকে এই আয়াতের পূর্ববর্তী ২২২ নং থেকে পড়তে হবে। তারপর আপনি ২২৩ নং আয়াতে আসবেন, ২২২নং আয়াতে এরশাদ হচ্ছে,

ويسئلونك عن المحيض قل هو أذى فاعتزلوا النساء في المحيض ولا تقربوهن حتى يطهرن فاذا تطهرن فائوهن من

حيث أمركم الله إن الله يحب التوابين ويحب المتطهرين .

অর্থ: “আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করবে হায়েজ (ঋতু) সম্পর্কে, বলে দাও তা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী গমন থেকে বিরত থাক। ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন করো, তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।"

আমি কুরআনের যে আয়াত বললাম তাতে Period চলাকালীন সময়ে স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। মেডিকেল সাইন্স বলে যদি কোন ব্যক্তি স্ত্রীর Period (ঋতু) চলাকালীন স্ত্রী সহবাস করে তাহলে তা স্ত্রীর জন্য অনেক ক্ষতিকর এবং পরবর্তীতে অনেক রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

যেকোনো ডাক্তার আপনাকে এই একই কথা বলবে। এটা স্ত্রীর জন্য ক্ষতিকর তেমনি স্বামীর জন্যও। সুতরাং কুরআন বিজ্ঞানসম্মত ভাবেই নির্দেশ দিচ্ছে।

যখন তোমাদের হায়েজ (ঋতু) চলে তখন তাদের সাথে সহবাস করা থেকে বিরত থাক। এই আয়াতের ধারাবাহিকতায় পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে ২২৩ নং আয়াত,

نساؤكم حرث لكم فأتوا حرثكم أنى شئتم وقدموا لأنفسكم واتقوا الله واعلموا أنكم ملقوه وبشر المؤمين .

অর্থ: “তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর। আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে জ্ঞান রাখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাৎ করতেই হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও।"

কুরআন বলেছে তোমরা হায়েজ চলাকালীন তোমাদের শস্যক্ষেত্রের নিকটবর্তী হয়ো না, তাছাড়া অন্য সময় তোমরা যখন চাও তার নিকটবর্তী হও, যদি তারাও তোমাদের কাছে আসে।

এখানে সমস্যা বা ক্ষতি কোথায়? সে তো কুরআনের অপব্যাখ্যা দিয়েছে এবং কুরআন থেকে ভুল উদ্ধৃতি দিয়েছে। যেমন- নারীদেরকে সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনার বিষয়টিও।

এই আয়াত পূর্ববর্তী আয়াতের সাথে সম্পর্কিত, যে আয়াতে বলা হয়েছে যে, যদি নারী/স্ত্রী যদি ঋতুবর্তী হয় তাহলে তার নিকটবর্তী হয়ো না। কুরআন বলছে, না তুমি স্ত্রীর নিকটবর্তী হয়ো না, এটা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।

আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন