পুরনো মোবাইল কেনার আগে যা জানা দরকার।
প্রিয় পাঠক, আমরা অনেক সময় বিভিন্ন কারণে পুরনো মোবাইল কিনতে চাই।
পুরাতন মোবাইল মার্কেট থেকে কিংবা কোনো ব্যক্তির নিকট থেকে সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কেনার আগে সেটি ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়া উচিৎ। অন্যথায় আপনার ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পুরাতন মোবাইল দোকান বা কোনো ব্যক্তি যখন সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল বিক্রি করতে চাইবে তখন তারা কখনোই ঐ মোবাইলের মন্দ দিকগুলো আপনাকে বলবে না।
সে মোবাইলে যদি কোনো বড় ধরনের সমস্যাও থাকে তাহলে তারা তা গোপন করার চেষ্টা করবে।
তাই পুরনো মোবাইল কেনার আগে লক্ষ্য রাখা উচিত যে মোবাইলটিতে কোনো সমস্যা আছে কিনা। আর যদি থেকে থাকে সেটা আপনাকেই খোজে বের করতে হবে।
পুরনো মোবাইল কেনার আগে কোন বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা উচিত?
পুরনো মোবাইল কেনার আগে যেসকল বিষয় দেখে নেওয়া প্রয়োজন তা নিচে পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো।
০১. শারিরীক ক্ষতি (Physical Damage)
আপনি যে মোবাইল ফোনটি কিনতে যাচ্ছেন সেটাতে কোনো দাগ (Scratch) থাকতে পারে। কিংবা এমনও হতে পারে ফোনটি পড়ে গিয়ে কোথায় হালকা ভেঙে গেছে।
ফোন ধাক্কা লাগার ফলে কিংবা হাত থেকে পড়ে যাওয়ার ফলে ফোনের ভেতরেও কোনো ক্ষতি হতে পারে।
সেটা কিন্তু আপনি বুঝতে পারবেন না। তাই কোনো পুরনো ফোন কেনার আগে অবশ্যই লক্ষ রাখবেন তাতে যেন কোনো শারীরিক ক্ষতি না থাকে।
০২. নেটওয়ার্ক যাচাই।
চলুন জেনে নেই কীভাবে মোবাইলের নেটওয়ার্ক চেক করবেন।
ক. আপনার যখন কোনো পুরনো ফোন কিনতে যাবেন তখন ফোনটি হাতে নিয়ে সেটি বন্ধ করে ফেলবেন। এবং মোবাইলে সিম কার্ড প্রবেশ করাবেন।
আর তারপর ফোনটি চালু করবেন। চালু করার সময় অবশ্যই খেয়াল করবেন ফোনটি চালু হতে অতিরিক্ত সময় নিচ্ছে কিনা।
খ. ফোন চালু হওয়ার পর আপনি ঐ ফোনটি দিয়ে কাওকে কল করবেন। দেখবেন ভালোভাবে কথা শুনা যাচ্ছে কিনা। আর কলে কথা বলার সময় লাউড স্পিকারও চেক করে নিবেন।
গ. এরপর আপনি ফোনের ডেটা চালু করে বেশ কিছুক্ষণ ইন্টারনেট চালিয়ে দেখবেন ফোনটি গরম হয়ে যায় কিনা।
যদি দেখেন ফোনটি অতি সামান্য গরম হচ্ছে তাহলে ঠিক আছে। আর যদি দেখেন ফোনটি অত্যাধিক গরম হচ্ছে তাহলে ধরে নিবেন ফোনটিতে সমস্যা আছে।
০৩. ক্যামেরা যাচাই।
এরপর আপনাকে ফোনের ক্যামেরা যাচাই করে নিতে হবে। বিশেষ করে ক্যামেরাও উপরে কোনো দাগ যেন না থাকে।
কারণ ক্যামেরার উপরে যদি দাগ থাকে তাহলে সে ফোনটি দিয়ে আপনি কখনোই ভালো ছবি তুলতে পারবেন না।
এরপর ঐ ফোনটি দিয়ে ছবি এবং ভিডিও ধারণ করে দেখে নিবেন ঠিকঠাক ছবি ও ভিডিও আসে কিনা।
০৪. মোবাইল ফোনের বয়স।
মোবাইল ফোনের বয়স যত বেশি হবে, তাতে থাকা ব্যাটারিও ততো পুরনো হবে। আর পুরনো ব্যাটারির চার্জ ধারণ ক্ষমতা কমতে থাকে।
সেক্ষেত্রে বেশি পুরাতন মোবাইল না কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ। যদি সেটা দেখতে একদম নতুনের মতো হয় তাও। পুরনো মোবাইল কেনার আগে জেনে নিন একটি মোবাইল সেট কতদিন ধরে ব্যবহার হচ্ছে।
০৫. স্পিকার, বাটন, পোর্ট, সিম ও মেমোরি কার্ড স্লোট যাচাই।
ক. স্পিকার যাচাই: ফুল ভলিউম দিয়ে গান চালিয়ে আপনি স্পিকার যাচাই করে নিবেন।
খ. বাটন যাচাই: ফোনের বাটনগুলো যাচাই করে নিবেন। বিশেষ করে যদি সেটা স্মার্টফোন হয় তাহলে ভলিউম বাটন, পাওয়ার বাটন, হোম বাটনগুলো যাচাই করতে ভুলবেন না।
গ. পোর্ট যাচাই: ফোনটিতে যা চার্জিং পোর্ট রয়েছে সেটাতে চার্জার লাগিয়ে দেখবেন ভালোভাবে চার্জ হচ্ছে কিনা। আর ইয়ারফোন লাগিয়ে ইয়ারফোনের জ্যাক যাচাই করে নিবেন।
ঘ. সিম ও মেমোরি কার্ড স্লোট যাচাই: সিম ও মেমোরি কার্ডের যে স্লোট রয়েছে সেটাতে সিম ও মেমোরি কার্ড প্রবেশ করিয়ে যাচাই করে নিবেন সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা।
০৬. ফোনের ভেতরে যাচাই।
এবার দেখার পালা ফোনের ভেতরে সব ঠিকঠাক আছে কিনা। ফোনের ভেতরে বলতে আমি বুঝাতে চাচ্ছি র্যাম, প্রসেসর, স্টোরেজ ও অন্যান্য সেন্সর।
আর এসব যাচাই করার জন্য ঐ ফোনের অ্যাপ স্টোর থেকে ভালো কোনো হার্ডওয়্যার টেস্টার অ্যাপ ইনস্টল করে নিবেন।
যা দিয়ে খুব সহজেই এসব জিনিস যাচাই করে নিতে পারবেন। আর সেই অ্যাপটির মাধ্যমে বুঝতে পারবেন মোবাইলের অভ্যন্তরে কোথাও কোনো সমস্যা আছে কিনা।
০৭. গন্ধ শুঁকা।
ব্যবহৃত কোনো ফোন কেনার আগে সেটার গন্ধ শুঁকে যাচাই করে নিতে হবে! কথাটি শুনে বেশ হাস্যকর লাগলেও এটা করতে হবে।
ধরুন আপনি যে ফোনটি কিনতে যাচ্ছেন সেটাতে পূর্বে যে কোনো সমস্যা হয়নি কিংবা সমস্যার কারণে কোনো পার্টস পরিবর্তন করা হয়নি সেটা কীভাবে বুঝবেন?
সম্প্রতি বাজারে যে মোবাইলগুলো আসে সেসব ফোন একটি বিশেষ আঠার মাধ্যমে জুরা লাগানো থাকে।
আর কোনো ফোন যদি ঠিক করার জন্য খোলা হয় তাহলে সে আঠা পরিবর্তন করা হবে। আর ফোনটি নাকের কাছে নিয়ে শুঁকলেই নতুন আঠার গন্ধ বুঝতে পারবেন।
০৮. চার্জার যাচাই।
ফোনের সাথে চার্জারও যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন। ফোনের সাথে আপনাকে যে চার্জার দেওয়া হবে সেটি আসল না কি নকল তা অবশ্যই যাচাই করে নিবেন।
০৯. দাম যাচাই।
ফোনটি ভালোভাবে যাচাই করার পর যদি আপনার পছন্দ হয়ে যায় তাহলে দাম বলার আগে অবশ্যই অনলাইন বা মার্কেট থেকে ফোনটির বর্তমান দাম জেনে নিবেন।
অন্যথায় ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, নতুন মোবাইলের দাম জানা থাকলে সেই একই মডেলের পুরনো মোবাইল এর দাম কত হতে পারে তা আপনি অনুমান করতে পারবেন।
১০. রসিদ (Receipt) সংগ্রহ।
ফোনটির মালিক যখন ফোনটি কিনেছে তখন তাকে যে রসিদ (Receipt) দেওয়া হয়েছে সেটি দেখে নিবেন।
এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন ফোনটি চুরাই কিনা কিংবা সত্যিই সে কিনেছে কিনা! আর ফোনটি কিনে থাকলে সে তা কবে এবং কতো টাকা দিয়ে কিনেছে।
আর ফোনটি যদি আপনি কিনেন তাহলে ফোনের সাথে সাথে রসিদ (Receipt) ও যার কাছ থেকে কিনবেন তার ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্রের এক কপি ফটোকপি নিয়ে নিবেন।
পারলে তার কাছ থেকে লিখিত একটি কাগজ নিয়ে নিবেন যাতে সে ফোনটি কতো তারিখ থেকে কতো তারিখ পর্যন্ত ব্যবহার করেছে তা লিখে দিবে।
এসব নেওয়ার কারণ হচ্ছে ফোন কেনার পর আপনার বাসায় যদি পুলিশ এসে পরে, কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যদি এই মোবাইল দ্বারা হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনার কাছে একটি প্রমাণ থাকবে যে আপনি তা করেননি।
তাই কোনো ব্যবহৃত ফোন কেনার আগে এসব বিষয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
পুরনো মোবাইল কেনার আগে করণীয় কী আশা তা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন।
আরও কোনো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে তা আমাদের বলতে পারেন। আমরা জানানোর চেষ্টা করবো।