মোবাইলে ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর উপায় জেনে নিন।
আমি যখন প্রথম প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার করা শুরু করি তখন কোনো ফাইল ডাউনলোড করার জন্য এমনকি নেট ব্রাউজ করার জন্যও নিজের গ্রাম পারি দিয়ে অন্য আরেকটি গ্রামের ফাঁকা রাস্তায় চলে যেতাম।
কারণ, সেখানে নেট স্পিড কিছুটা বেশি পেতাম। আর সেখানে অনেক্ষন অপেক্ষা করতাম ফাইল পুরোপুরি ভাবে ডাউনলোড না হওয়া পর্যন্ত।
তখন নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা এতোটাই খারাপ ছিল যে, নিজের ঘরে বসে ইন্টারনেট চালানো তো দূরের কথা, ফোনে কথা বলা পর্যন্ত যেত না।
এসব তো পুরনো কথা। আপনি যদি আমার চেয়ে আরো আগে থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করেন তাহলে হয়তো আমার চেয়ে আপনাকে আরো বেশি বেগ (কষ্ট) পেতে হয়েছে।
তবে সময়ের সাথে সাথে আমাদের দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থারও অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন 4G, 5G স্মার্টফোন ও সিম ব্যবহার করে অভ্যস্ত আমরা।
এখন আমরা চাই আমাদের দ্রুত গতির ইন্টারনেটকে কীভাবে আরো দ্রুত করা যায়।
অথবা, আমার যখন কোনো স্মার্টফোন নতুন নতুন ব্যবহার শুরু করি তখন অনেক ভালো গতির ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাই, তবে স্মার্টফোন পুরনো হওয়ার সাথে সাথে ইন্টারনেটের গতি কমতে থাকে।
তখন আমরা জানতে চাই, মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড স্লো হয় কেন? কীভাবে মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানো যায়?
তাই প্রযুক্তি প্রিয়’র আজকের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড স্লো হওয়ার কারণ এবং মোবাইলে নেট ফাস্ট করার ৯ টি উপায়।
আশা করছি, মোবাইলে ইন্টারনেট স্পীড বেশী করার নিয়মগুলো জেনে উপকৃত হবেন। তাই পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
মোবাইলে নেট স্লো হলে করণীয় কী? | মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড বাড়াবো কীভাবে?
০১.ফাস্ট ব্রাউজার ব্যবহার করুন।
বিভিন্ন ওয়েবসাইট প্রদর্শন করার জন্য যেসব ব্রাউজারের ব্রাউজিং স্পিড অনেক বেশি সেসব ব্রাউজার ব্যবহার করুন।
ব্রাউজিং স্পিড অনেক বেশি এমন কিছু ব্রাউজার হলো: ক্রোম (Chrome), অপেরা মিনি (Opera Mini), ইউসি ব্রাউজার (Uc Browser)।
এন্ড্রয়েড মোবাইলে ক্রোম ব্রাউজার ডিফল্ট ভাবেই দেওয়া থাকে, আলাদা ভাবে ডাউনলোড করার প্রয়োজন নেই।
অন্যান্য ব্রাউজারগুলো গুগল কিংবা প্লে স্টোরে খোঁজ করলেই পেয়ে যাবেন।
আর আপনি যে ব্রাউজার ব্যবহার করে নেট ব্রাউজ করবেন তাতে যদি নতুন কোনো আপডেট আসে তাহলে সেটি আপডেট করে নিবেন।
০২. অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস সরিয়ে ফেলুন।
আমাদের স্মার্টফোনে এমন কিছু অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করা থাকে যেগুলো আমরা ব্যবহার করি না। আর কিছু অ্যাপ্লিকেশন থাকে অনেক দিন পর পর ব্যবহার করি।
এসব অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মধ্যে কিছু অ্যাপ্লিকেশন আছে যেগুলো আমাদের ফোনের ইন্টারনেটের স্পিড কমিয়ে দেয়।
তাই, মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড বাড়াতে আপনার ফোন থেকে অপ্রয়োজনীয় সব অ্যাপস আনইন্সটল (Uninstall) করে দিন।
আর যেসব অ্যাপস অনেক দিন পর পর ব্যবহার করেন সেগুলোও ব্যাকআপ রেখে আনইন্সটল (Uninstall) করে দিন।
০৩. অটো ডাউনলোড ও অটো আপডেট হওয়া বন্ধ করে দিন।
অ্যাপস অটো আপডেট হওয়ার অপশন বন্ধ করে রাখা জরুরি। কারণ অটো আপডেট অপশন চালু থাকলে আমাদের অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোও সময় অসময় নিজে থেকে আপডেট নিয়ে আপনার ইন্টারনেট ডেটায় ভাগ বসাবে।
তাই ফোনের ইন্টারনেট স্পিড বৃদ্ধি করার জন্য অটো ডাউনলোড ও অটো আপডেট হওয়ার অপশন বন্ধ করে দিন।
০৪. Cache (ক্যাশে) মুছে ফেলুন।
যখন আমরা ব্রাউজারে কোনো কিছু খোঁজ করি, সেই ওয়েবপেইজের ঠিকানাগুলো মোবাইলের ক্যাশে মেমোরিতে জমা হয়ে থাকে।
আর এসব ডেটা বেশি পরিমাণে জমা হয়ে গেলে ফোনের ইন্টারনেট গতির উপর প্রভাব ফেলে।
তাই মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির উপায় হলো মাঝে মাঝে মোবাইলের ক্যাশে মেমোরি পরিষ্কার করে নেওয়া।
০৫. অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস ব্যাকগ্রাউন্ডে চলা বন্ধ করে দিন।
আমাদের ফোনে এমন কিছু অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে যেগুলো আমাদের ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকে।
এসব অ্যাপস ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যার জন্য আমাদের ফোনের ইন্টারনেটের গতি কমে যায়, আর আমরা তা জানতেও পারি না।
তাই অপ্রয়োজনীয় সব অ্যাপস এবং প্রয়োজনীয় অ্যাপস ব্যবহার শেষে মোবাইল সেটিংসে গিয়ে সেগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে চলা বন্ধ করে দিন।
০৬. ডেটা ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।
আমরা আমাদের প্রাত্যহিক দিনের কাজগুলো যেভাবে প্রয়োজন মতো পরিচালনা করে থাকি তেমনি আমরা আমাদের স্মার্টফোনে থাকা অ্যাপগুলোর জন্য ইন্টারনেট ডেটা পরিচালনা করতে পারি।
স্মার্টফোনের এমন কিছু অ্যাপ্লিকেশন আছে যেগুলো দিয়ে ইন্টারনেট ডেটা ম্যানেজ করা যায়।
কোন অ্যাপ কী পরিমাণে ইন্টারনেট ডেটা খরচ করে তা এসব অ্যাপ ব্যবহার করে সনাক্ত করা যায়।
এবং আপনি চাইলে নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপসের ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহার সীমাবদ্ধ করে দিতে পারেন।
আবার কিছু অ্যাপের ডেটা ব্যাবহার বন্ধ করেও দিতে পারেন।
অনেক স্মার্টফোনে ডিফল্ট ভাবেও এসব সেটিং দেওয়া থাকে, এর জন্য আলাদা ভাবে অন্য কোনো ডেটা ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ ডাউনলোড না করলেও চলে।
০৭. অ্যাড-ব্লকার ব্যবহার করতে পারেন।
আমরা যখন ইন্টারনেট ব্রাউজ করি তখন মাঝে মাঝে চিত্র ও ভিডিও আকারে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখতে পাই। যা আমাদের মোবাইলের ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহার করে।
এসব বিজ্ঞাপন বিরক্তিকরও বটে। এসব বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন লোডের কারণে মোবাইলের ইন্টারনেটের গতিতে কিছুটা প্রভাব পরে।
তাই আপনি চাইলে আপনার মোবাইলে অ্যাড-ব্লকার ব্যবহারের মাধ্যমে এসব বিজ্ঞাপন আসা বন্ধ করে দিতে পারেন।
এর ফলে আপনার মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড কিছুটা বৃদ্ধি পাবে।
০৮. সঠিকভাবে নেটওয়ার্ক বাছাই করুন।
আপনি হয়তো 4G/5G স্মার্টফোনে 4G/5G সিমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, কিন্তু সেই হিসেবে ফোনে ইন্টারনেট স্পিড পান না।
এর কারণ হতে পারে স্মার্টফোনের নেটওয়ার্ক সেটিং। আপনার স্মার্টফোনের নেটওয়ার্ক সেটিংসে গিয়ে দেখুন সঠিক নেটওয়ার্কে যুক্ত আছে কি না।
আপনি যদি 4G/5G ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহার করেন অথচ আপনার স্মার্টফোনের নেটওয়ার্ক সেটিং এ যদি 2G/3G সেট করা থাকে তাহলে কখনোই ফোনে বেশি ইন্টারনেট স্পিড পাবেন না।
তাই আপনার স্মার্টফোনের নেটওয়ার্ক সেটিং এ গিয়ে নেটওয়ার্ক টাইপ “GSM/WCDMA/LTE auto” বাছাই করে দিন।
আর যদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারণ না করতে চান তাহলে ম্যানুয়ালি ভাবে নেটওয়ার্ক নির্বাচন করুন।
আপনি যদি থ্রিজি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে নেটওয়ার্ক টাইপ WCDMA বা 3G করে রাখুন।
০৯. র্যাম (Ram) ও অভ্যন্তরীণ মেমোরি (Enternal Memory) পূর্ণ করবেন না।
আপনার স্মার্টফোনের র্যাম ও অভ্যন্তরীণ মেমোরির পরিমাণ যাই হোক না কেন, তা কখনো পূর্ণ (Full) করবেন না। যথাসম্ভব খালি রাখার চেষ্টা করুন।
যখন কোনো স্মার্টফোনের র্যাম ও অভ্যন্তরীণ মেমোরি সম্পূর্ণ ব্যবহৃত হয় তখন ঐ স্মার্টফোনের সকল ফাংশন ধীর গতির হয়ে যায়। এমনকি ফোনের ইন্টারনেট স্পিড স্লো হয়ে যায়।
তাই স্মার্টফোনের ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর জন্য র্যাম এবং অভ্যন্তরীণ মেমোরি যথাসম্ভব খালি রাখার চেষ্টা করুন।
এতে আপনার স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট উভয়ই ভালো ভাবে চালাতে পারবেন।
প্রিয় পাঠক, কীভাবে মোবাইলের নেট স্পিড বাড়ানো যায়, আশা করি তা ভালোভাবেই জেনে গেছেন। আরো কোনো কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।