অল্প বয়সে চুল সাদা হওয়ার কারণ। | অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ।
অল্প বয়সে চুল সাদা হয়ে যাওয়ার সমস্যা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। সাধারণত, বয়সের সাথে সাথে চুলের রং পরিবর্তন হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অল্প বয়সেই চুল সাদা হতে শুরু করে।
এই সমস্যার কারণগুলো অনেক এবং তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জীবনধারা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য সমস্যা ও পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল।
নিম্নে অল্প বয়সে চুল সাদা হওয়ার প্রধান কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. জিনগত কারণ:
অনেক ক্ষেত্রে জিনগত প্রভাবের কারণে অল্প বয়সে চুল সাদা হতে পারে। যদি পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও একই সমস্যা থাকে, তবে এটি উত্তরাধিকার সূত্রে আসতে পারে।
২. পুষ্টির ঘাটতি:
পুষ্টির অভাবও চুল সাদা হওয়ার একটি প্রধান কারণ। বিশেষত, ভিটামিন বি১২, আয়রন, কপার এবং জিঙ্কের অভাবে চুলের রং পরিবর্তিত হতে পারে। এই ভিটামিন ও খনিজ পদার্থগুলো মেলানিন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা চুলে রং ধরে রাখতে সহায়তা করে।
৩. অক্সিডেটিভ স্ট্রেস:
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হলো এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে শরীরে ফ্রি র্যাডিকেল বা মুক্ত মৌলিক অণু তৈরি হয়, যা কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি মেলানিনের ক্ষরণে প্রভাব ফেলে, যার ফলে চুলের রং হালকা হতে পারে।
৪. ধূমপান ও পরিবেশগত কারণ:
ধূমপান করলে শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ে, যা চুল সাদা হওয়ার গতি ত্বরান্বিত করতে পারে। এছাড়া, পরিবেশের দূষণ, সূর্যালোকে অতিরিক্ত সময় থাকা এবং বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শও চুলের রং পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
৫. হরমোনজনিত সমস্যা:
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বিশেষ করে থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি, অনেক ক্ষেত্রে চুল সাদা হয়ে যাওয়ার একটি কারণ হতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা হ্রাস পেলে শরীরের মেটাবলিজমেও সমস্যা দেখা দেয়, যা চুলের স্বাভাবিক রং পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।
৬. মানসিক চাপ:
অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরে কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যা চুলের রং পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘমেয়াদি চাপের মধ্যে থাকেন তাদের মধ্যে চুল সাদা হওয়ার প্রবণতা বেশি।
চুল সাদা হওয়া প্রতিরোধের উপায়।
- সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা, বিশেষ করে ভিটামিন বি১২, আয়রন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজ ও ভিটামিন গ্রহণ করা।
- মানসিক চাপ কমানো ও নিয়মিত ব্যায়াম করা।
- ধূমপান পরিহার করা এবং দূষণমুক্ত পরিবেশে থাকার চেষ্টা করা।
- থাইরয়েড ও অন্যান্য হরমোনজনিত সমস্যার চিকিৎসা করা।
চুল সাদা হয়ে যাওয়ার জন্য চিকিৎসা বা বিশেষ কোনো প্রাকৃতিক উপায় না থাকলেও পুষ্টিকর খাবার, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং মানসিক চাপ কমিয়ে রাখলে এই সমস্যা অনেকটা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
মাথার চুল সাদা হয়ে গেলে তা কি আবার কালো করা সম্ভব?
হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে সাদা চুল আবার কালো করা সম্ভব, তবে এটি নির্ভর করে সাদা চুলের কারণ ও শারীরিক অবস্থার ওপর।
১. ডায়েট ও জীবনযাত্রা: অনেক সময় পুষ্টির ঘাটতি, যেমন ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন ডি, আয়রন, কপার ইত্যাদির অভাবে চুল সাদা হতে পারে। এসব পুষ্টি সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করলে কিছু ক্ষেত্রে চুলের রং আবার স্বাভাবিক হতে পারে।
২. আয়ুর্বেদিক ও প্রাকৃতিক উপায়: আমলকী, হেনা, ব্রাহ্মী, ব্রিংরাজ ইত্যাদি ভেষজ ব্যবহারে চুল কালো রাখতে সাহায্য করতে পারে।
৩. চিকিৎসা ও থেরাপি: অনেকেই এখন ডার্মাটোলজিস্টদের পরামর্শে PRP (Platelet Rich Plasma) থেরাপি বা মেলানিন বৃদ্ধির ওষুধ ব্যবহার করেন, যা চুলের কালো রং ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে।
৪. চুলের যত্ন: রাসায়নিক হেয়ার ডাই বা প্রোডাক্ট এড়িয়ে প্রাকৃতিক হেয়ার অয়েল এবং প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, যা সাদা চুলের গতি কমিয়ে আনতে পারে।
তবে, একবার চুল পুরোপুরি সাদা হয়ে গেলে তা পুরোপুরি কালো হওয়ার সম্ভাবনা কম।