আমরা অনেকেই এমআরপি পাসপোর্ট (MRP Passport) এবং ই-পাসপোর্টের (E-Passport) কথা শুনে থাকবো। কিন্তু হয়তো জানি না, এমআরপি পাসপোর্ট এবং ই-পাসপোর্ট বলতে কী বুঝায়।
টেক রবিন ব্লগের আজকের এই নিবন্ধে আমরা জানবো, এমআরপি পাসপোর্ট মানে কী, ই-পাসপোর্ট মানে কী এবং এগুলোর বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা।
এমআরপি পাসপোর্ট কী?
এমআরপি (Machine Readable Passport) হলো একটি উন্নত প্রযুক্তির পাসপোর্ট যা মেশিন দ্বারা সহজে পড়া যায়। এই পাসপোর্টে বিশেষভাবে কোডেড তথ্য থাকে যা মেশিন স্ক্যানার দ্বারা সহজেই পড়া এবং যাচাই করা যায়। নিচে এমআরপি পাসপোর্টের কিছু বৈশিষ্ট্য এবং এর উপকারিতা বর্ণনা করা হলো:
এমআরপি (MRP) পাসপোর্টের বৈশিষ্ট্য:
- মেশিনে পঠনযোগ্য তথ্য: এমআরপি পাসপোর্টের নিচের অংশে মেশিন রিডেবল জোন (MRZ) থাকে, যেখানে ধারাবাহিকভাবে বিশেষ অক্ষর ও সংখ্যা ব্যবহার করে পাসপোর্টধারীর তথ্য কোড করা থাকে।
- উন্নত সুরক্ষা: এমআরপি পাসপোর্টে বিভিন্ন ধরণের সুরক্ষা বৈশিষ্ট্য থাকে, যেমন হোলোগ্রাম, জলছাপ, এবং আল্ট্রাভায়োলেট (UV) লাইটে দৃশ্যমান বিশেষ চিহ্ন।
- ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা:আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সীমান্তে এমআরপি পাসপোর্ট সহজেই পড়া যায়, যা যাত্রীদের দ্রুত এবং সহজে ভ্রমণ করতে সাহায্য করে।
- ব্যক্তিগত তথ্য: পাসপোর্টের প্রথম পৃষ্ঠায় পাসপোর্টধারীর নাম, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নম্বর, ইস্যু এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য থাকে।
এমআরপি (MRP) পাসপোর্টের উপকারিতা:
- দ্রুত পঠন এবং যাচাইকরণ: এমআরপি পাসপোর্ট মেশিনে দ্রুত স্ক্যান এবং যাচাই করা যায়, যা ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া দ্রুত করে তোলে।
- উন্নত সুরক্ষা: এর উন্নত সুরক্ষা বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে জালিয়াতির সম্ভাবনা কমে যায়।
- বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা: এমআরপিপাসপোর্ট অধিকাংশ দেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ দ্বারা সহজে গ্রহণযোগ্য, যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণে সুবিধা দেয়।
- ডাটা সুরক্ষা: এমআরপি পাসপোর্টে ব্যক্তিগত তথ্যগুলি কোডেড এবং মেশিন রিডেবল হওয়ায় ডাটা সুরক্ষিত থাকে।
এমআরপি পাসপোর্ট হলো আধুনিক এবং সুরক্ষিত ভ্রমণ ডকুমেন্ট যা মেশিন দ্বারা সহজে পড়া যায় এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে।
এটি যাত্রীদের দ্রুত এবং নিরাপদে ভ্রমণ করতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের নাগরিকরা সহজেই এমআরপি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন এবং এর সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
ই-পাসপোর্ট কী?
ই-পাসপোর্ট (e-Passport) হলো একটি উন্নত ও আধুনিক পাসপোর্ট যা বৈদ্যুতিন চিপ ব্যবহার করে তথ্য সংরক্ষণ করে। এটি এমআরপি পাসপোর্টের উন্নত সংস্করণ এবং এতে বাড়তি নিরাপত্তা ও সুবিধা থাকে। নিচে ই-পাসপোর্টের বৈশিষ্ট্য এবং এর উপকারিতা বর্ণনা করা হলো:
ই-পাসপোর্টের বৈশিষ্ট্য:
- ইলেকট্রনিক চিপ: ই-পাসপোর্টে একটি ইলেকট্রনিক চিপ থাকে যেখানে পাসপোর্টধারীর ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, আঙুলের ছাপ, এবং আইরিস স্ক্যানের তথ্য সংরক্ষণ করা থাকে।
- উন্নত নিরাপত্তা: ই-পাসপোর্টে উন্নত সুরক্ষা বৈশিষ্ট্য থাকে, যেমন হোলোগ্রাম, মাইক্রোপ্রিন্টিং, এবং আল্ট্রাভায়োলেট (UV) লাইটে দৃশ্যমান চিহ্ন, যা জালিয়াতি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- মেশিনে পঠনযোগ্য: এমআরপি পাসপোর্টের মতো ই-পাসপোর্টও মেশিন রিডেবল জোন (MRZ) সহ আসে, যা ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে তোলে।
- বায়োমেট্রিক তথ্য: ই-পাসপোর্টে পাসপোর্টধারীর বায়োমেট্রিক তথ্য, যেমন আঙুলের ছাপ এবং আইরিস স্ক্যান অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা পরিচয় যাচাইয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সুরক্ষা প্রদান করে।
ই-পাসপোর্টের উপকারিতা কী?
- উন্নত নিরাপত্তা: ই-পাসপোর্টের ইলেকট্রনিক চিপে সংরক্ষিত তথ্য জালিয়াতি প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং এটি আরো নিরাপদ করে তোলে।
- দ্রুত ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া: ই-পাসপোর্টের মেশিনে পঠনযোগ্য বৈশিষ্ট্য এবং বায়োমেট্রিক তথ্য থাকার কারণে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া দ্রুত এবং সহজ হয়।
- বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা: ই-পাসপোর্ট আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী তৈরি করা হয়, যা অধিকাংশ দেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ দ্বারা সহজে গ্রহণযোগ্য।
- অ্যাডভান্সড ডাটা সুরক্ষা: ই-পাসপোর্টের ইলেকট্রনিক চিপে সংরক্ষিত তথ্য এনক্রিপ্টেড থাকে, যা ডাটা সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
ই-পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া:
- আবেদনপত্র পূরণ: বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।
- পাসপোর্ট ফি জমা: ই-পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। ফি নির্ভর করে ই-পাসপোর্টের মেয়াদ ও ডেলিভারি সময়ের উপর।
- বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান:আবেদনপত্র পূরণ করার পর নির্দিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আঙুলের ছাপ এবং আইরিস স্ক্যান দিতে হবে।
- ডকুমেন্টস জমা:প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), জন্ম সনদ, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
- পাসপোর্ট সংগ্রহ: নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনার ই-পাসপোর্ট প্রস্তুত হবে। পাসপোর্ট অফিস থেকে আপনার ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।
ই-পাসপোর্ট হলো আধুনিক এবং নিরাপদ ভ্রমণ ডকুমেন্ট যা ইলেকট্রনিক চিপ ব্যবহার করে তথ্য সংরক্ষণ করে। এটি যাত্রীদের দ্রুত এবং নিরাপদে ভ্রমণ করতে সাহায্য করে এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশের নাগরিকরা সহজেই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন এবং এর সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
আজকের এই নিবন্ধ থেকে আশা করি, এমআরপি পাসপোর্ট এবং ই-পাসপোর্টের পার্থক্যটা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।