মোবাইল ফোন নিরাপদ রাখতে কার্যকর কিছু টিপস।

প্রিয় পাঠক, প্রযুক্তি প্রিয় ওয়েবসাইটের আরেকটি নতুন আর্টিকেলে আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছি। আজকের এই আর্টিকেলে স্মার্টফোনের একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করি, পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।

আপনার এন্ড্রয়েড ফোনকে নিরাপদ রাখতে কার্যকর কিছু টিপস দেখে নিন। (মোবাইল ভালো রাখার উপায়।)

বর্তমানে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দারিয়েছে। স্মার্টফোন ছাড়া একদিন তো দূরের কথা, এক মূহুর্তও কল্পনা করা যায় না।

আমরা আমাদের প্রাত্যহিক দিনে নানা প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকি। বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও স্মার্টফোনের ভূমিকা কম নয়।

বর্তমান বাজারের বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই প্রায় কম্পিউটারের কাছাকাছি ফাংশনালিটি পাওয়া যায়। কিছু কিছু স্মার্টফোনের প্রসেসর ও র‍্যাম অনেকের ডেস্কটপের থেকেও বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে থাকে।

মোবাইল ফোন নিরাপদ রাখতে কার্যকর কিছু টিপস।

সবকিছুই ব্যবহারকারীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছে। এর সবই প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার ফসল। তবে প্রযুক্তির অনেক ইতিবাচক দিকগুলোর পাশাপাশি কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে।

আর সেসব নেতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ব্যক্তিগত তথ্যগুলো খুব সহজেই অন্যের হাতে চলে যাওয়া। তাইতো ব্যক্তিগত তথ্য ফাসের মতো ভয়াবহ ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে।

তবে আমরা কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করলেই আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যগুলো সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হবো।

স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা যদি সঠিকভাবে এই শক্তিশালী ডিভাইসগুলো ম্যানেজ করতে না পারে, তবে ঘটতে পারে এমন বিপত্তি।

তাইতো অনেককেই জানতে চায়, “স্মার্টফোন কীভাবে নিরাপদ রাখা যায়? মোবাইল ফোন ঝুঁকিমুক্ত রাখার উপায় কী?”

আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা জানবো, আমরা আমাদের মোবাইল ফোন কীভাবে নিরাপদ রাখতে পারি।

মোবাইল ফোনকে ঝুঁকিমুক্ত রাখার সেরা ৯ উপায়।

০১. নিয়মিত আপডেট।

অনেকে ডেটা খরচ হওয়ার ভয়ে তাদের স্মার্টফোনের অ্যাপস আপডেট করতে চান না। কিন্তু এটা হতে পারে ডিভাইস ও ব্যবহারকারীর তথ্যের গোপনীয়তার জন্য মারাত্নক হুমকি।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যাপের কোডে ভুলত্রুটি ধরা পড়ে যা সাইবার হামলাকারীরা লুফে নেয়। ডিভাইস নিয়মিত আপডেট করলে এই ভয় থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকতে পারবেন।

এছাড়া লেটেস্ট আপডেট অনেক নতুন ফিচারও নিয়ে আসে। তাই আপনার ফোনের অ্যাপগুলো নিয়মিত আপডেট করুন।

০২. ফোন লক করে রাখুন।

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা অলসতা করে মোবাইল ফোন লক করে রাখে না। এটা একটা ভয়ঙ্কর বদ-অভ্যাস।

আপনি যদি আপনার ফোন লক না করেন, তাহলে এর বিপদ টের পাবেন তখনই, যখন আপনার ফোনটি চুরি হয়ে যাবে কিংবা অন্য কোনোভাবে বেহাত হবে।

সেই দুর্দিনের অপেক্ষা না করে এখনই ফোন লক করে রাখুন। মোবাইল লক করে রাখার জন্য এখন ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফেসিয়াল রিকগনিশনের মত সুবিধাজনক পদ্ধতি উপলভ্য আছে।

সুতরাং, আপনি কেন অরক্ষিত থাকবেন? আর হ্যাঁ, পাসওয়ার্ড ও পিন কোড সেট করার ক্ষেত্রে অবশ্যই এমন কিছু দিবেন যা কেউ অনুমান করতে পারবেনা।

০৩. অজানা ওয়াইফাই সংযোগ ব্যবহার না করা।

আমরা মার্কেটে কেনাকাটা করতে গেলে কিংবা কোথাও ঘুরতে গেলে সেখানে যদি ফ্রী ওয়াইফাই এর ব্যবস্থা থাকে তাহলে আমরা তা ব্যবহার করা শুরু করে দেই।

যা একদমই ঠিক না। কারণ, ফ্রি ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের কৌশল অবলম্বন করে হ্যাকাররা স্মার্টফোনটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তথ্য চুরি করতে পারে। তাই পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারে সতর্ক হওয়া জরুরি।

০৪. শুধুমাত্র অফিসিয়াল সোর্স থেকেই অ্যাপ ডাউনলোড করুন।

এন্ড্রয়েড ফোনের জন্য অফিসিয়াল ও সবচেয়ে বিশ্বস্ত অ্যাপ ডাউনলোডের স্থান হচ্ছে গুগল প্লে স্টোর। বাইরে থেকে এপিকে ফাইল এনে ফোনে ইনস্টল করলে নিজের অজান্তেই ভাইরাসের কবলে পড়তে পারেন।

গুগল প্লে স্টোর থেকে কোনো অ্যাপ ডাউনলোডের আগে সেটির রিভিউ এবং অ্যাপটি কতবার ইনস্টল করা হয়েছে তা দেখলে এর জনপ্রিয়তা ও সঠিকতা সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন।

এন্ড্রয়েড বাদেও যারা অন্য কোনো অপারেটিং সিস্টেম এর ফোন ব্যবহার করেন তারাও তাদের ফোনে থাকা অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোর থেকেই অ্যাপ ডাউনলোড করে ইনস্টল করবেন।

০৫. এনক্রিপশন ব্যবহার করুন।

এন্ড্রয়েড ফোনের ইন্টারনাল ও এক্সটেন্ডেড স্টোরেজ পাসওয়ার্ড দিয়ে এনক্রিপ্ট করে রাখুন। তাহলে পাসওয়ার্ড ছাড়া অন্য কেউ কোনোভাবেই আপনার ফোনের কোনো ডেটা এক্সেস করতে পারবেনা।

এনক্রিপ্ট না করলে ফোনের মেমোরি কার্ড অথবা ইন্টারনাল স্টোরেজে থাকা তথ্য সহজেই বের করে আনা সম্ভব। এনক্রিপশন চালু করতে স্মার্টফোনের সেটিংসের সিক্যুরিটি সেকশন দেখুন।

০৬. গুরুত্বপূর্ণ ছবি, ভিডিও ও অন্যান্য ফাইল লক করে রাখা।

আমাদের সবার ফোনেই ব্যক্তিগত অনেক ফাইল থাকে। বিশেষ করে অনেক ছবি ও ভিডিও। আমরা কখনোই চাবো না যে, আমাদের এসব ব্যক্তিগত ফাইলগুলো অন্য কারো হাতে গিয়ে পরুক।

কারণ, আমাদের এসব ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও ব্যবহার করে খুব সহজেই আমাদের বিপদে ফেলে দিতে পারবে।

সাধারণ ফোনগুলোতে ব্যক্তিগত ফাইল লক করে রাখার জন্য ডিফল্টভাবে কোনো ব্যবস্থা থাকে না। তবে থার্ড পার্টি অনেক অ্যাপ রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত ফাইলগুলো খুব সহজেই সুরক্ষিত রাখতে পারবো।

এসব অ্যাপস দিয়ে ছবি, ভিডিও সহ ফোনের সব প্রয়োজনীয় ফাইল লক করে রাখা যায়। আপনার ফোনে থাকা ডিফল্ট অ্যাপ স্টোর থেকে এমন ভালো একটি অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন।

০৭. পাসওয়ার্ড ম্যানেজমেন্ট।

অনেকেই ফোনের মধ্যে নোটস অ্যাপে বিভিন্ন অনলাইন সেবার ইউজার আইডি ও তার পাসওয়ার্ড লিখে রাখেন। এটা মারাত্নক ক্ষতিকর একটা অভ্যাস।

এভাবে আপনার গোপনীয় ডেটা সংরক্ষণ করলে তা বেহাত হওয়ার বড় ধরনের আশঙ্কা থাকে। বরং কোনো পাসওয়ার্ড ম্যানেজার অ্যাপ ব্যবহার করুন।

যেমন, LastPass Password Manager অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার সব প্রয়োজনীয় ইউজার আইডি ও তার পাসওয়ার্ড নিরাপদ ভাবে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন খুব সহজেই।

০৮. অব্যবহৃত অ্যাপ আনইনস্টল করুন।

যদি এমন হয়, আপনি কোনো অ্যাপ ব্যবহার করছেন না, তাও সেটি আপনার ফোনে ইনস্টল করা আছে, তাহলে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি অ্যাপটি রিমুভ করে ফেলেন।

কারণ বিভিন্ন অ্যাপ আপনার ডিভাইসের বিভিন্ন পারমিশন নিয়ে নেয়। তাই যত কম অ্যাপ ইনস্টল করবেন, ডিভাইস হ্যাক হওয়ার ঝুঁকিও তত কম থাকবে।

বিশেষ করে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস ইনস্টল করে রেখে না দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

০৯. অপ্রয়োজনীয় কানেকশন বন্ধ রাখুন।

প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোনের মোবাইল ডেটা, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ এসব কানেকশন বন্ধ করে রাখুন।

এগুলো যেমন আপনার ফোনের ব্যাটারি বাঁচাবে, তেমনি ব্লুটুথ ও ওয়াইফাই হ্যাকের ঝুঁকি থেকেও রক্ষা করবে।

এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে আশা করা যায় আপনার মোবাইল ফোন অনেক নিরাপদ থাকবে এবং আপনার ডিজিটাল লাইফ অনেক বেশি উপভোগ্য হবে।

এ বিষয়ে আপনার মতামত কমেন্টে জানাতে পারেন। প্রযুক্তি প্রিয় ওয়েবসাইটের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Post a Comment

Previous Post Next Post