পবিত্র কোরআন কেন আরবি ভাষায় নাযিল করা হয়েছে?

প্রশ্ন: প্রশ্ন হলো প্রথমত পবিত্র কোরআন কেন আরবিতে নাযিল হলো এবং দ্বিতীয়ত আপনার কথা অনুযায়ী যেহেতু সকল মুসলমানেরই আরবি শেখা উচিত, এ ব্যাপারে আই. আর. এফ. কী কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, বিশেষত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে?

পবিত্র কোরআন কেন আরবিতে নাযিল হলো?

পবিত্র কোরআন কেন আরবিতে নাযিল হলো?

ডা. জাকির নায়েকের উত্তর: হ্যাঁ, প্রশ্ন হচ্ছে কোরআন সমগ্র মানবজাতির জন্য হেদায়াত গ্রন্থ হওয়া সত্ত্বেও কেন তা আরবিতে নাযিল হলো। উত্তরে অনেক কারণ বলা যায়। প্রথমত কোরআন যে জাতীর ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে তাদের ভাষা ছিল আরবি।

আল্লাহ্ তাআলা সকল আসমানি কিতাব যে সম্প্রদায়ের উপর নাযিল করেছেন সেই সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষায় নাযিল করেছেন। যেমন: তৌরাত হিব্রু, যবুর ইউনানি ভাষায়।

দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, কোরআন যে নবীর উপর নাযিল হয়, সেই নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর মাতৃ ভাষাও আরবি। যদি কোরআন আরবি ভাষায় নাযিল না হয়ে অন্য কোনো ভাষায় নাযিল হতো যা মহানবীর মাতৃভাষা নয়, তাহলে সে ভাষা যাদের মাতৃভাষা তারা আপত্তি তুলতো, আমাদের মাতৃভাষা শেখাতে এসো না।

এ আপত্তির উত্তর দেওয়া বড় শত্রু হতো। এছাড়াও আরবি ভাষা একটি উন্নত ভাষা ছিল তা মৃতভাষা অর্থাৎ সাধারণ মানুষের বোধগম্যতার বাইরের ভাষা। গুটি কতক গবেষকমাত্র সেসব ভাষা জানেন।

অথচ এখনো কয়েক কোটি লোক আরবী ভাষায় কথা বলে। এই যে, এতো বিশাল পরিমাণ লোক আরবিতে কথা বলেন, তারা আরবি বুঝেন। ফলে কোরআনও বুঝেন।

আরবি ভাষার আরেকটি সুবিধা হলো এটি উন্নত ও সমৃদ্ধভাষা। এর ভাব প্রকাশের ক্ষমতা ব্যাপক ও শক্তিশালী। এমন অনেক শব্দ আছে যার অর্থ ১২-১৩টি পর্যন্ত আবার একই শব্দের খাস সমার্থক শব্দও পাওয়া যায়।

ফলে ভাব, ভাষা, ছন্দ ইত্যাদি মিল রেখে এ ভাষায় কোনো কিছু রচনা বেশি সার্থক হয়। উদাহরণ স্বরূপ ধরা যাক, প্রথম নাযিলকৃত দুটি আয়াত, যা সূরা আলাক-এর ১ ও ২নং আয়াতের কথা,

إقرا باسم ربك الذي خلق ـ خلق الإنسان من علق .

প্রথম শব্দ 'ইকুরা' এর অর্থ হচ্ছে পড়া, আবৃত্তি করা ও ঘোষণা করা। এরপর 'রব' শব্দের অর্থ বুঝায় প্রভু, শাসনকর্তা ও সরবরাহকারী।

তারপর আসুন 'খালাক' শব্দটির ব্যাপারে। এটির দ্বারা শুধু সৃষ্টি করাই বুঝায় না। এর দ্বারা পরিকল্পনা করা, নমনীয় করা ইত্যাদিও বুঝায়। এরপর আসুন সর্বশেষ শব্দ 'আলাক' এর সম্পর্কে- শব্দটি দ্বারা জমাট রক্ত, আঠালো বস্তু প্রভৃতি বুঝায়।

এখন আমরা যদি ঠিকভাবে অনুবাদ করি তাহলে অর্থ হবে: 'পড়, আবৃতি কর, ঘোষণা করো তোমার প্রভু মহান দাতার নামে। যিনি তৈরি করেছেন, পরিকল্পনা করেছেন এবং নমনীয় করেছেন মানুষকে জমাট বাধা রক্ত, আঠালো বস্তু হতে।

তাই দেখা যায়, 'আরবি ভাষায় যে ব্যাপকতা নিয়ে ভাব প্রকাশ করা যায় অন্য ভাষায় তা কল্পনাতীত। এজন্যই আমি আগেই বলেছি কোরআন তিলাওয়াতের বিভিন্ন উপায় আছে। যথা সাধারণ ভাবে অর্থ বুঝে পড়া ও গভীর মনোযোগের সাথে অর্থ বুঝে পড়া।

সাধারণ অর্থসহ কোরআন তিলাওয়াত দ্রুতই শেষ করা যায়। কিন্তু গভীরভাবে অর্থ বুঝে কোরআন তিলাওয়াত করে শেষ করা কখনোই সম্ভব নয়।

আরবি ভাষায় কোরআন নাযিল হওয়ায় আরো সুবিধা হলো, এতে জায়গা কম লাগে। যেমন ধরুন 'মুহাম্মদ' শব্দটি। 'মম', 'হা' 'মিম', 'দাল' মাত্র চারটি বর্ণ।

অথচ ইংরেজিতে M, O/U, H, A, M, M, A, D অর্থাৎ ৮টি বর্ণ দরকার। ফলে অন্য ভাষায় লিখতে স্থান, সময়, শক্তিকাল বর্ণ সবকিছুই বেশি লাগে। 

এমনও দেখা যায় আরবি ভাষায় কোনো কিছু লিখলে যে পরিমাণ সময়, শ্রম স্থান ও শক্তিকাল প্রয়োজন অন্য ভাষায় ঐ একই বিষয় লিখতে তার চেয়ে ৩ গুণ বেশি শ্রম, সময়, স্থান ও কালি প্রয়োজন হয়।

এ সকল প্রয়োজন ও সুবিধার বিবেচনা করলে পবিত্র কোরআন আরবি ভাষায় নাযিল হওয়ার যুক্তি সহজেই বুঝা যায়।

কিন্তু এর উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, যদি কেউ ফরাসি ভাষায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের অত্যাবশ্যকীয় কিছু আবিষ্কার লিখে থাকেন, সেটা আমেরিকা বা অন্য দেশে ব্যবহার করা যাবে না।

বরং ফেঞ্চ ভাষা লিখে সেটি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে সবদেশেই সব ভাষার লোকই ব্যবহার করতে পারবেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post